শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশের চলমান অস্থিরতায় ভারত -চীনের অবস্থান

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৪

বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতাকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে করছে ভারত। প্রতিবেশী বাংলাদেশের সাথে বরং অর্থনৈতিক বিষয়েই গুরুত্বারোপ করতে চায় দেশটি। সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই আন্দোলনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৫০ জন নিহত হয়েছেন। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে মৃতের সংখ্যা দুই শতাধিক বলে দাবি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে চলমান এই অস্থিরতার দিকে নজর রাখছে ভারত। তবে ভারত সরকারের কার্যকলাপে যেন চলমান অস্থিরতায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে ওই বিষয়েও সতর্ক দিল্লি। এক সপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বিবেচনা করছে ভারত। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় ভারতীয় শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে দেশে ফিরতে পারে, সেই আয়োজন আমরা করতে পেরেছি।’ উল্লেখ্য, চলমান পরিস্থিতির কারণে অন্তত ৬ হাজার ৭০০ ভারতীয় শিক্ষার্থীবাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরেছেন।
ভারত সরকারের পরারষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র আরো বলেন, ‘নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে যার সাথে আমাদের উষ্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, আমরা আশাবাদী যে ওই দেশের (বাংলাদেশের) পরিস্থিতি দ্রুতই স্বাভাবিক হবে।’
নিরাপত্তা, বাণিজ্য এবং কূটনীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব: ভারতের কাছে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার মানে হলো শেখ হাসিনা সরকারের দৃঢ়ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা। ভারতের এমন চাওয়ার অন্যতম কারণ নিরাপত্তাজনিত স্বার্থ। দেশ দু’টির ৪ হাজার ১০০ কিলোমটিরের যৌথ সীমানা রয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরাম রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের সীমানা রয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশে জনসমর্থন এবং শুভাকাঙ্খী গড়ে তুলতে ভারত বিনিয়োগ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ এই উপ-অঞ্চলের, অর্থাৎ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত নেপাল, উন্নয়নের অংশীদার হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের উত্তর এবং পূর্বাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের রাজ্যগুলো। ভারতের এই রাজ্যগুলো অবিভক্ত ভারতের সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে যুক্ত ছিল।
তার মতে, ‘আর এখন বাংলাদেশ এবং ভারত দুই দেশের মধ্যে পরিবহন যোগাযোগ শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এবং অবিভক্ত ভারতের সময়ের ব্যবস্থাকে পুনরায় চালু করতে চাইছে।’
ঢাকায় বিলিয়ন ডলার: বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভারত ঋণ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এই পর্যন্ত ঢাকাকে ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ (লাইন অব ক্রেডিট) প্রদান করেছে দিল্লি। ঋণের এই অর্থ দিয়ে নানা উন্নয়ন প্রকল্প, যেমন অবকাঠামো নির্মাণ, ডিজেল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন নির্মাণ ইত্যাদির কাজ করছে ঢাকা।
এদিকে, ভারতের বড় বড় কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মারিকো, ইমামি, ডাবর, এশিয়ান পেইন্টস এবং টাটা মোটর্স। ছাত্র আন্দোলনের এই অস্থিরতা সরাসরি এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেন, ‘ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক দুই দেশের সমন্বিত ইতিহাস, জটিল সামাজিক-অর্থনৈতিক আন্তঃনির্ভরতা এবং দেশ দুটির ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের মধ্যে নিহিত রয়েছে। যেকোনো ধরনের সঙ্ঘাতের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা, মৌলবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং অভিবাসনের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।’
চীন-ভারতে আবদ্ধ:সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও চীন উভয় দেশই বাংলাদেশে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থান বৃদ্ধি করেছে। ফলস্বরূপ দেশ দু’টির মধ্যে বাড়ছে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব।
বাংলাদেশের সাথে নিবিড় সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা থাকলেও কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, ভারতের নীতিনির্ধারকদের বাংলাদেশের একটি অংশের মানুষের মধ্যে থাকা ভারতবিরোধী মনোভাবকে বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে। এর কিছুটা অবশ্য বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি নতুন দিল্লির সমর্থন বিশ্লেষণ করে বোঝা যেতে পারে।এ বিষয়ে গবেষণা ফোরাম মন্ত্রয়া-এর শান্তি মারিয়েট ডি’সুজা বলেন, ‘এই অস্বস্তিকর নীরবতা হলো হাসিনা সরকারের প্রতি এবং চলমান অস্থিরতাকে সামলাতে সরকারের নীতির প্রতি ভারতের নীরব সমর্থন। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে ভারতঘেঁষা শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগকে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ভারত।’
এদিকে সরকারের সমালোচকদের দাবি, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
শান্তি মারিয়েট ডি’সুজা বলেন, ‘নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক এবং স্বচ্ছ করতে বিরোধীদের দাবি বাস্তাবয়নে মার্কিন সরকারের চাপ থেকে হাসিনা সরকারকে সুরক্ষা দিয়েছে ভারত। বর্তমান নীরবতা হলো ওই নীতির ধারাবাহিকতা।’
বড় পরিসরে ভাবনা ভারতের: শান্তি মারিয়েট ডি’সুজার মতে, নানা কৌশলগত কারণে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে ভারত। এর মধ্যে রয়েছে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উন্নয়ন, ভারতে অভিবাসন বন্ধ করা।
তিনি বলেন, ‘দেশটিতে ব্যাপক চীনা বিনিয়োগ সত্ত্বেও নতুন দিল্লি হাসিনাকে এমন একজন হিসেবে বিবেচনা করে থাকে, যিনি বাংলাদেশকে বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়া থেকে বিরত রাখবেন। এর ফলে তাকে সমর্থন করা দিল্লির একমাত্র কৌশল। এমনকি যদিও তার নেয়া নীতি কখনো কখনো কর্তৃত্ববাদীঘেঁষা হয়ে থাকে।’
এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে হাসিনা সরকারের সাম্প্রতিক ব্যর্থতা এবং সেইসাথে বিএনপি ও ইসলামিস্ট দলগুলোর শক্তিশালী অবস্থান ভারতের জন্য খুব একটা ভালো সংবাদ নয়। তবে এ বিষয়ে ভারতের জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের প্রফেসর শ্রীরাধা দত্ত মনে করেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি হাসিনা সরকারের চরম প্রতিক্রিয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। সহিংসতার সব দায় বিরোধী দল এবং ইসলামিস্টদের উপর চাপিয়ে দেয়ার যে চেষ্টা তারও সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া না থাকা এবং সেই সাথে অপমানজনক মন্তব্য করার কারণে আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠেছে।’ সূত্র : ডয়চে ভেলে




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com