শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

পরিচয়পত্রটি তার পকেটে ছিল রক্তে ভেজা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০২৪

১৯ জুলাই দুপুর। বাড্ডার কর্মক্ষেত্র থেকে বাসায় ফিরছিলেন ১৮ বছরের মো. ইয়ামিন চৌধুরী। বাড্ডা ফুটওভার ব্রিজের কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা গুলি বর্ষণ করতে থাকে। একটি গুলি এসে লাগে ইয়াসিনের পেট ও হাতে। নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। চিকিৎসক পরিহিত পাঞ্জাবি কেটে ফেলে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ব্যান্ডেজ করে পাঠান ওয়ার্ডে। বিকেলে ঢামেক যান বড় ভাই ইয়াসিন। গিয়ে দেখতে পান বেডে প্রায় অচেতন ছোট ভাই। কাটা-ছেঁড়া পাঞ্জাবি পাশে। এক পর্যায়ে ভাইয়ের পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিয়ে দেখেন রক্তে ভেজা এফএনএফ ফ্যাশনের পরিচয়পত্র। আমাকে বলে, ভাইয়া আমাকে বাচাঁও, আমাকে ভালো ডাক্তারের কাছে নাও। আমি আর বাসা থেকে কখনো বের হবো না
২৭ জুলাই ঢামেকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইয়ামিনের মৃত্যু হয়। ইয়াসিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ১৯ তারিখ রাতে ঢাকা মেডিকেলের ওটিতে (অপারেশর থিয়েটার) নেওয়ার আগে শেষ কথা হয় আমার সঙ্গে। আমাকে বলে, ভাইয়া আমাকে বাচাঁও, আমাকে ভালো ডাক্তারের কাছে নাও। আমি আর বাসা থেকে কখনো বের হবো না।’
‘একটা গুলি নাভির পাশ দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। আরেকটা গুলি ডান হাত ছুঁয়ে মাংস উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়। ওইদিন বাড্ডা ওভারব্রিজের আশপাশে আনুমানিক দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।’
ইয়াসিন বলেন, ‘আশপাশের লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে বিকেলে ঢাকা মেডিকেল থেকে আমার কাছে ফোন আসে। বাবাকে নিয়ে আমরা গিয়ে হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে ইয়ামিনকে পাই।’
ভাই ও বাবা-মাকে নিয়ে ইয়ামিন থাকতেন বাড্ডার হাসান উদ্দিন রোডের একটি ভাড়া বাসায়। তাদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানার কাঞ্চনপুর এলাকায়। ভাইকে হারিয়ে বড় ভাই ইয়াসিন বলেন, ছোট ভাইকে হারিয়ে আমার বাবা, মা ও দাদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
একটা গুলি নাভির পাশ দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। আরেকটা গুলি ডান হাত ছুঁয়ে মাংস উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়। ওইদিন বাড্ডা ওভারব্রিজের আশপাশে আনুমানিক দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে
ইয়ামিনের বাবা রতন চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছেলে বাড্ডা এলাকায় এফএনএফ গার্মেন্টসের পোশাকশ্রমিক ছিল। ১৯ তারিখ বাড্ডা ওভারব্রিজ এলাকায় সে গুলিবিদ্ধ হয়।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে রতন চৌধুরী বলেন, ‘ছেলে মারা গেছে, এখন আর কিছুই চাওয়ার নেই। মাত্র ১৮ বছরে ছেলে মারা যাবে, এটা কোনোদিন ভাবিনি। আমার আর্থিক অবস্থাও ভালো না। দুই ছেলে আমাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতো।’
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভাবের কারণে দুই ভাই বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেনি। অল্প বয়সে তারা বেছে নেন কর্মজীবন। ইয়াসিন ইয়ামিনের চেয়ে ছয় বছরের বড়। বড় ভাইও চাকরি করেন একটি প্রতিষ্ঠানে। বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা ছিল ইয়ামিনের, এজন্য গার্মেন্টেসে কাজ নেন। শিখছিলেন ওয়াশের কাজ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com