সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২৯ অপরাহ্ন

কালীগঞ্জে ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত করতে টনক নড়েছে পৌর ও উপজেলা প্রশাসনের

হুমায়ুন কবির ঝিনাইদহ
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৪

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর বাজার এলাকার ব্যস্ততম সড়কসমূহে অবৈধভাবে দখল করে রাখা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদে দীর্ঘদিন পর যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে পৌর ও উপজেলা প্রশাসন। জনগণের দীর্ঘদিনের এই দাবি বাস্তবায়নে এতো দিন পর হলেও টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের। গতকাল বুধবার কালিগঞ্জ পৌরসভার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মেইন বাসস্ট্যান্ড থেকে শহরমুখী সড়কের দুই পাশে বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মৌখিকভাবে ২৪ ঘন্টার নোটিশে ফুটপাত ও রাস্তা খালি করার জন্য বলেন। এসময় পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলার কাউকেই দেখা যায়নি তাদের সাথ। কালিগঞ্জ পৌরসভার মধুগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন সড়কের পাশে কিংবা ফুটপাতে বসে ছোট ছোট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নির্বিঘেœ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে । যে কারণে সড়কের দুপাশের পরিধির প্রায় ২০ ফিট রাস্তা চলাচলে মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে।জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়া থাকা বিশারদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি এইসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে জোরপূর্বক প্রতিদিন ২০ টাকা হারে বিনা রশিদে চাঁদা আদায় করেন। শহরের সাধারণ ব্যবসায়ীদের একটি দোকান বরাদ্দ নিতে প্রকার ভেদে ৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম এককালীন টাকা ও মোটা অংকের মাসিক দোকান ভাড়া চুক্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির অতিরিক্ত টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক বাজারের বিভিন্ন সড়কের পাশে ও ফুটপাতে বিভিন্ন ধরনের ছোটো ছোটো প্রায় ৩০০ টি দোকান বসিয়ে তাদের নিকট থেকে দৈনিক চাঁদার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কালীগঞ্জ পৌরসভা প্রথম শ্রেণীর একটি পৌরসভা হলেও মূল শহরে ফুটপাতে রাস্তা দখলের কারণে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক, রিক্সা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যান চলাচলে চরম বিঘœ সৃষ্টি হয়।রাস্তাগুলোতে যানজটে জনগণের নাভিশ্বাস উঠে যায়। ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার কালিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফকে যানজট নিরসনে রাস্তায় নামতে দেখা গেলেও ফুটপথ ও রাস্তা দখমুক্ত করতে তাকে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। স্থানীয় সচেতন মহল ও দোকান মালিক ব্যবসায়ীরা ক্ষোভের সাথে জানান, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনের সড়কের দুই প্রান্তে অবৈধ দোকান বসিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন একটি মহল। দখলের ব্যাপারটি নিয়ে বারবার জনপ্রতিনিধিদেরকে জানানো হলেও তারা কখনো তা আমলে নেননি।আমরা ব্যাবসায় মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করেও কাঙ্খিত মুনাফা অর্জন করতে পারি না শুধু এইসব কারণে। অবৈধ এসব দোকান বসানোর ব্যাপারে উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে একাধিকবার আলোচনা হলোও যার কোন সুরাহা এতদিনে হয়নি। স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অবৈধ দোকান উচ্ছেদ এর ব্যাপারে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের কারণে উচ্ছেদ অভিযানে তারা ব্যর্থ হন বলেও জানান। কালিগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড থেকে জনতা মোড় অভিমুখে সড়কের পাশের কয়েকজন ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তারা জানান,রাস্তার দুপাশে জুতা,কাপড়,ডাব, ফল ও চায়ের দোকান রয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই কাপড়ের দোকান দেওয়ার জন্য স্থানীয় জুয়েল নামে এক নেতাকে ৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত এককালীন অফেরতযোগ্য হিসেবে নেয়।আর প্রতিদিন দোকান প্রতি ২০ টাকা হারে বিশারত নামে একজন টাকা উঠাই। আজ পৌরসভা থেকে এসে মাত্র ২৪ ঘন্টা সময় বেঁধে দিলো উঠে যাওয়ার জন্য। এখন আমরা কোথায় যাব? ব্যবসা বন্ধ থাকলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরবো। তাই আমাদের দাবি, আমাদেরকে অন্যত্র একটি জায়গায় বসার ব্যবস্থা করে দিয়ে তারপর যেন উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কালিগঞ্জ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে সহকারী কর আদায়কারী হামিদুল ইসলাম মনা জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুটপাত এবং রাস্তার উপরে বসা দোকানপাট উচ্ছেদের ব্যাপারে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিতেই মাঠে নেমেছি। আগামীকালের মধ্যে শহরের রাস্তার দুধারের ফুটপাত এবং রাস্তার উপর বসানো দোকান সরিয়ে না নেওয়া হলে শুক্রবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। কালিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ মুঠোফোনে জানান,আমি বেশ কয়েকদিন অফিস করছিনা। পৌর নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট হয়তো কোনো আদেশ আছে যে কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য যেতে পারে। তবে ফুটপাতে বা রাস্তায় এসব দোকান বসানো এবং চাঁদা নেওয়ার ব্যাপারে আমি এবং আমার কোনো লোক জড়িত নেয়। বিনা রশিদে চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে ওইসব ব্যবসায়ীরাও কখনো আমার কাছে অভিযোগ করেনি। আমি এসব ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীদের অন্যত্র সরিয়ে রাস্তা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ওই উদ্যোগ আর এগোয়নি। তবে ওখানে যারা ব্যাবসা করে সবাই গরীব। তাদের দিকটাও নজরে রাখতে হবে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান জানান, আমি কালিগঞ্জ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফুটপাত এবং সড়কের দুপাশ দখলমুক্ত করার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছি ।কালিগঞ্জ পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিও ছিল এটি। সকলের সহযোগিতা পেলে ইনশাআল্লাহ ফুটপাত এবং রাস্তার দুপাশ দখলমুক্ত করতে পারবো বলে আমি মনে করি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com