ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুম নিজ বেতনের বেসিকের ৩৫ শতাংশ আবাসিক ভাতা পেয়েও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার তিন তলা বিশিষ্ট কার্যালয়ের তৃতীয় তলার ৩০৮ নং অফিস কক্ষটি দখল করে আবাসিকভাবে বসবাস করছেন। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে কালিগঞ্জ পৌরসভায় যোগদানের পর থেকে এই কর্মকর্তা তৃতীয়তলার একটি কক্ষ দখল করে বিলাসবহুল ভাবে বসবাস শুরু করেন। তার নিজ জেলা নড়াইল থেকে রবিবার অফিসে যোগদান করে বুধবার পর্যন্ত রাত্রি যাপন করে বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে তিনি বাড়ি ফেরেন। তিনি নড়াইল এক আসনের সাবেক এমপি কবিরুল হকের ভাগ্নে। পৌরসভা কার্যালয়ে রাত্রি যাপন করা ৩০৮ নং কক্ষটি পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা নিজের মতো করে সাজিয়েছেন। লাগিয়েছেন এসি, রয়েছে ফ্রিজ,বড় এলইডি টিভি এবং আইপিএসসহ বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সব আধুনিক তৈজসপত্র। তৃতীয় তলায় পৌরনির্বাহী কর্মকর্তার সাথেই পৌরসভার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা জুলফিকার আলী ৩০২ নং অফিস কক্ষটি দখল করে আবাসিকভাবে বসবাস করছেন। তিনিও তার বেসিক বেতনের ৪৫ শতাংশ আবাসিক ভাতা পান। মেহেরপুর জেলার বাসিন্দা এই জুলফিকার আলী ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কালিগঞ্জ পৌরসভায় যোগদান করেন।
যোগদানের কিছুদিন পর থেকেই তিনি ওই কক্ষটি দখল করে বসবাস করে যাচ্ছেন। সরজমিনে যেয়ে দেখা যায়, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুম ৩০৮ এ এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ৩০২ নং কক্ষে বসবাস করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার একজন কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনিক প্রধান দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পৌরসভা কার্যালয়ে রাত্রি যাপন করেন। ইতিপূর্বে মাঝেমধ্যে তার সহধর্মীকেও আমরা থাকতে দেখেছি। জানামতে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে আবাসিকভাবে থাকার কোনো নিয়ম নেই। তাছাড়া আমরা সবাই যারা চাকরি করি সকলেই বাসা ভাড়ার জন্য ভাতা পায়। ওনারাও আবাসিক ভাতা পান। তবুও বাইরে না থেকে কার্যালয়ের দুইটি কক্ষ দখল করে ফ্রি থাকছেন। রাত্রে বসবাস করা এবং এসি ফ্রীজ চলার কারণে পৌরসভার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। একদিকে এই দুই কর্মকর্তার বিলাসবহুল রাত্রিযাপনে কোন খরচ হচ্ছে না, অন্যদিকে পৌরসভার রাজস্ব খাতের অর্থ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল হিসেবে ব্যায় হচ্ছে।শুধু তাই না পৌরসভা একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় হলেও তাদের নিয়ম বহির্ভূতভাবে বসবাসের কারণে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। তাছাড়া আমরা শুনেছি পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা বৃত্তশালী একজন মানুষ। তার নিজ এলাকা নড়াইল ছাড়াও খুলনাতে রয়েছে তার বাড়ি এবং জমি। কালিগঞ্জ পৌরসভার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা জুলফিকার আলীর সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, আমি অসুস্থ থাকায় জার্নিতে বেশ ধকল পোহাতে হয়। এ কারণেই অফিসের ওপর একটি কক্ষে মাঝে মধ্যে কোন রকম থাকি । নিয়ম বহির্ভূতভাবে কার্যালয়ে আবাসিক বসবাসের ব্যাপারে পৌরনির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুমের সাথে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, পৌরসভা কার্যালয়ের তৃতীয় তলা প্রায় বসবাসে অনুপযুক্ত। সেখানে অফিশিয়াল কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হয় না। এ কারণেই ৩০৮ নং কক্ষটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে কোন রকমে কর্মদিবসের দিনগুলো রাতে থাকি। এসময় তিনি ওই কক্ষে লাগানো এসি (শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র) টি তার নিজের টাকায় কেনা বলে দাবি করেন। এভাবে নিজ কার্যালয়ের উপরে আবাসিকভাবে বসবাসের কোন বিধান আছে কিনা এমন প্রশ্নের কোনো সদ্দুত্তর তিনি দিতে পারেননি।