ভরা মৌসুমে বরিশাল নগরীর মোকামসহ বাজারে ইলিশ মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন পর্যন্ত ইলিশের আকাল দেখা দেওয়ায় বেকার হয়ে পরেছেন শ্রমিকসহ ব্যবসায়ীরা। ইলিশ মাছ সংকটে দামও বেড়েছে খুচরা বাজারে। সকালে নগরীর ইলিশ মোকাম পোর্ট রোড বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশের আমদানী খুব কম। তাই শ্রমিকদের মাঝেও ব্যস্ততা নেই। পোর্ট রোডের আড়ত কর্মচারী মোঃ রানা বলেন, মোকামে এখন আগের চেয়ে অনেক কম মাছ আসছে। গত কয়েকদিন ধরে পোর্ট রোড মোকামে সর্বোচ্চ ৫০ মন মাছ বেচা-বিক্রি হয়েছে। তিনি আরও জানান, বাজারে সর্বোচ্চ এক কেজি দুইশ’ গ্রাম সাইজের মাছ এসেছে। এর আগে দেড় কেজি থেকে এক কেজি সাতশ’ গ্রাম সাইজেরও মাছ এসেছিলো। পাইকারী দরে এক কেজি দুইশ’ গ্রাম সাইজের ইলিশ প্রতিমন ৬২ হাজার, কেজি সাইজের ইলিশ প্রতিমন ৬০ হাজার, কেজির নিচে এলসি সাইজের ইলিশ ৫৭ থেকে ৫৮ হাজার, পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ গ্রাম সাইজের ইলিশ ৫৫ থেকে ৫৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের তালতলী বাজারে প্রতিদিন অভ্যন্তরীন নদীর ১৫/২০ মন ইলিশ মাছ বিক্রি হয়। ওই বাজারের পাইকারী বিক্রেতা নাঈম সিকদার জানান, গত তিনদিন ধরে কোন মাছ আসেনা। সবশেষ শুক্রবার বাজারে ৮/১০টি ইলিশ মাছ এসেছিলো। তিনি বলেন, ইলিশ মাছ না পেলে জেলে থেকে ব্যবসায়ী সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যেকারণে বর্তমানে আমরা অসহায় অবস্থায় রয়েছি। একই কথা জানিয়েছেন, নগরীর বেলতলা বাজারের খুচরা মাছ বিক্রেতা জাকির হোসেন। ভরা মৌসুমে ইলিশ মাছ না পাওয়া কারণ হিসেবে সমুদ্রে মাছ শিকারের ৬৫ দিনকে দুষছেন জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম। তিনি বলেন, সমুদ্রে ইলিশ শিকারের জন্য ২৮ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা থাকে। এরমধ্যে ১৫ জুন থেকে ২৩ জুলাই বাড়তি নিষেধাজ্ঞা থাকে কিন্ত ওইসময় ভারতের জেলেরা এসে মাছ শিকার করে। তিনি আরও বলেন, ইলিশ মুলত সমুদ্রের মাছ। বাংলাদেশী জেলেরা সমুদ্র থেকে তেমন মাছ শিকার করতে পারেনা। যা ভারতের জেলেরা করতে পারে। নিষেধাজ্ঞার কারনে বাংলাদেশী জেলেরা সমুদ্রে যায় না। সেই সুযোগে ভারতের জেলেরা অত্যাধুনিক জাল দিয়ে মাছ শিকার করেছে। যার কারনে সমুদ্র ইলিশ শুন্য হওয়ায় এখন অভ্যন্তরীন নদীতে মাছ নেই। মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম আরও বলেন, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। ভারত ২০ মে থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সমুদ্রে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করে। একইসময় বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ করতে হবে। তাহলে সমস্যা আর থাকবে না। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, মাছের উৎপাদন ঠিকই আছে। সমস্যা হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় এখন আর জেলেদের আড়তে আসতে হয়না। যেমন মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা ও ভোলার জেলেরা মাছ ধরে সরাসরি ঢাকা কিংবা চাঁদপুরে নিয়ে যায়। আবার বরগুনা, পটুয়াখালী এলাকার জেলেরা সড়কপথে সরাসরি ঢাকায় পাঠাচ্ছে। এজন্য স্থানীয় বাজারগুলোতে চাহিদার বেশি ইলিশ সরবারহ হচ্ছেনা। তিনি আরও বলেন, পরিবেশের হেরফেরের কারণে বর্ষার ব্যাপ্তি হয়েছে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। ভারী বর্ষণ হলে ইলিশও প্রচুর ধরা পড়বে। পাশাপাশি ক্রেতাদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই, কারণ সরকার ঘোষণা দিয়েছে ইলিশ বিদেশে পাঠানো কমিয়ে আনার জন্য। যেকারণে স্থানীয় বাজারগুলোতে ইলিশ পাওয়া যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।