বরেণ্য অভিনেতা আবুল হায়াতের ৮০তম জন্মদিন ছিল গতকাল ৮ আগস্ট। আনন্দঘন পরিবেশে দিনটি উদযাপনের কথা ছিল। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। নতুন সরকার, রাজনীতি, জীবন নিয়ে এই অভিনেতা কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান মিথুন।
প্রশ্ন: আপনার ৮০তম জন্মদিন ধুমধাম করে উদযাপন করা দরকার ছিল।
আবুল হায়াত: জ্বি, পারিবারিকভােবও এবাব অন্যরকম আয়োজনের কথা ছিল। শিল্পীসমিতির পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেটি আমি বাতিল করে দিয়েছি। অনুষ্ঠান দুটি হোক আমি মন থেকেই চাইনি। কারণ দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে মানুষ অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। বানভাসি মানুষের জীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এর মাঝে আমি আনন্দ করতে চাই না। এ কারণে আমার জন্মদিনে সব আয়োজন বাতিল করে দিয়েছি। এত কিছুর মাঝেও জন্মদিন উপলক্ষে সবাই শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, এতেই আমার ভালো লাগছে। আজ আমার নাতনিরও জন্মদিন (নাতাশা হায়াতের মেয়ে)। সিদ্ধান্ত নিয়েছি রাতে আমাদের দুজনার জন্মদিন উপলক্ষে ছোট পরিসরে কেক কাটা হবে।
প্রশ্ন: একটি কর্মমুখর দীর্ঘ জীবন পার করলেন সাফল্যের সঙ্গে। কোনো অপ্রাপ্তি আছে?
আবুল হায়াত: আমার জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি আছে তা কখনো অনুভব করিনি। কারণ আমার চাওয়াগুলো ছিল ছোট ছোট। বলা যায়, এ কারণে সব চাওয়াই পূরণ হয়েছে। আমার বাবার নির্দেশ ছিল, জীবনে চাওয়ার তালিকা ছোট রাখতে। এটা মেনে চলেছি বলেই কোনো অপূর্ণতা আমার নেই। সব মিলিয়ে আমি বলব, বেশ ভালো আছি। আমি সুেখ আছি।
প্রশ্ন: দেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া গণ-আন্দোলন নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
আবুল হায়াত: রাষ্ট্রক্ষমতায় একজন যাবে, একজন আসবে। এটাই নিয়ম। এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না। সেই নিয়মেই যদি বলি, আমাদের এই মুহূর্তে প্রয়োজন দেশকে নতুন করে গড়ে তোলা, সবক্ষেত্রে সংস্কার করা। গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে দেশটাকে একটি আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার একটি সুযোগ এসেছে। এই সুযোগকে এখন কাজে লাগাতে হবে। আর যদি আমরা এটি করতে না পারি, তাহলে জাতির জন্য, আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হবে।
প্রশ্ন: নতুন সরকারকে কী পরামর্শ দেবেন?
আবুল হায়াত: (একটু হেসে) আমি আসলে সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার মতো কেউ নই। আমি জীবনে কোনোদিন রাজনীতি করিনি। এসব আমি বুঝি না। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (প্রশাসন) চালাতে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।
প্রশ্ন: আপনার বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি থাকুক, এটা কি আপনি চান?
আবুল হায়াত: এ নিয়ে আমি অনেকবার বলেছি। আবারও বলছি, রাজনীতির তো প্রয়োজন আছে। তবে এটি যদি ভয়ংকর রূপ ধারণ করে, তবে তা বন্ধ থাকাই ভালো। তাদের আগে সেই জিনিসটি বুঝতে হবে। রাজনীতি করার মতো যোগ্যতা রাখে কি না, সেটা বুঝেই কর্তৃপক্ষকে রাজনীতি করার অনুমতি দিতে হবে। ছাত্ররাই একসময় নেতা হবে। তারাই একসময় দেশ চালাবে। সুতরাং তাদের জাতীয় রাজনীতি ফলো করতে হবে। তাদের যে ক্যাম্পাসে নেতাগিরি করতে হবে, এ রাজনীতি তো আমরা চাই না। আমরাও সেখানে পড়াশোনা করে এসেছি। আমার তো রাজনীতি করিনি, আমাদের তো কোনো সমস্যা হয়নি।
প্রশ্ন: আপনি জীবনী লিখছেন। বইটি কবে প্রকাশ পাচ্ছে?
আবুল হায়াত: ‘রবি পথ’ নামের বইটি লেখার কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এটি প্রকাশ করা হবে। বের করছে সুবর্ণ প্রকাশনী।
সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে: আবুল হায়াত
প্রশ্ন: ‘রবি পথ’ বইটি নিয়ে কিছু বলুন।
আবুল হায়াত: এ বইতে আমার জীবনের পুরো জার্নি আছে। ৮০ বছরের জার্নি। এ জার্নিটাই আমার মতো করে লিখেছি। যেসব কথা রাখা দরকার মনে করেছি, সেসব লিখেছি। আবার অনেক কথাই বাদ দিয়েছি। অনেক কথা হয়তো না লিখলেও চলতো। লেখার সময় অত চিন্তা করে লেখা যায় না।
প্রশ্ন: কতিপয় শিল্পী যে বিগত সরকারের হয়ে কাজ করছিল, সে ব্যাপারে আপনার কোনো বক্তব্য আছে?
আবুল হায়াত: এগুলো নিয়ে আসলে আমার তেমন কিছু বলার নেই। আমি নিজে কোনোদিন কোনো রাজনীতি করিনি। আমি কখনো কোনো সরকারের হয়ে কাজ করিনি। আমি আমার মতো থাকি। এটা আমার পছন্দ। যদি অন্য শিল্পীর অন্য কোনো পছন্দ থাকে, সেটা তাদের ব্যাপার। রাজনীতি করতে গিয়ে তারা যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, তাহলে তাদের সেই শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর তারা যদি কোনো অপরাধ না করে থাকে, তাহলে তাদের কেন অযথা অপমান করব। কারণ রাজনীতি করার অধিকার তো সবারই আছে। রাজনীতি করা তো দোষের কিছু না।
প্রশ্ন: এখন কী কোনো কাজে যুক্ত আছেন?
আবুল হায়াত: এই মুহূর্তে নতুন কোনো কাজ হাতে নেই। শুরু করতে কিছু সময় লাগবে। কিছুদিন পরই আশা করছি শুরু করতে পারব।
প্রশ্ন: জন্মদিনে আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আবুল হায়াত: আপাকেও ধন্যাবাদ।