বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০২ অপরাহ্ন

রফতানি নেই, তবু ইলিশের দাম কমছে না কেন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ভারতে রফতানি না করার সিদ্ধান্তের পর সামাজিক মাধ্যমে ইলিশে দাম কমার তথ্য দেখে সম্প্রতি বাজারে গিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশেরই জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্যটির উচ্চমূল্য নিয়ে হতাশাও জানাচ্ছেন অনেকে।
ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে বাস্তবের মাছের বাজার সবখানেই ইলিশের দাম নিয়ে কৌতূহল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বিক্রেতাদেরও।
সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, ভারতে ইলিশ না পাঠানো ব্যাপারে সরকারের অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমরা ক্ষমা চাচ্ছি, কিন্তু আমরা ভারতে কোনো ইলিশ পাঠাতে পারব না। এটি দামি মাছ। আমরা দেখেছি, আমাদের দেশের মানুষই ইলিশ খেতে পারে না। কারণ সব ভারতে পাঠানো হয়।’
তবে রফতানি না হওয়ার পরেও বাজারে মাছটির দাম নাগালের মধ্যে নেই বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা।
‘রফতানি বন্ধ কিন্তু দাম তো কমে নাই, মাঝখান থেকে আমরা বাজারে এসে নাজেহাল হই,’ ঢাকার হাতিরপুল বাজারে মাছ কিনতে আসা চাকরিজীবী নার্গিস বেগম বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন।
‘ফেসবুক-ইউটিউব দেখে আসে, বলে ইলিশের দাম কম, আপনারা বেশি চান কেন? আমাদের ব্যবসা নষ্ট…’, পাল্টা বলছিলেন বিক্রেতা মো: কামাল।
এই ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন কারণে, মৎস্য উপদেষ্টার ভাষায় ‘দামী মাছটি’র দাম কমছে না। যার অন্যতম, যোগানের ঘাটতি।
কোন পর্যায়ে কেমন দাম?
জেলের জালে ধরা পড়া ইলিশ তিন থেকে পাঁচ হাত ঘুরে ক্রেতার কাছে আসে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এসব জায়গায় দামের তারতম্যের ওপর বাজারও ওঠা-নামা করে।
চাঁদপুরের আড়তগুলোতে মঙ্গলবার সকালে তিন থেকে চার শ’ গ্রাম ওজনের প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার টাকার আশপাশে।
অন্য মাছের মতো ইলিশের ক্ষেত্রেও ওজনের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে দাম। অর্থাৎ, মাছের আকার যত বড় হয়, কেজিপ্রতি দামও তত বেশি হয়ে থাকে।
এছাড়া, সমুদ্র-মোহনা থেকে ধরা মাছ আর নদীর উজানের মাছের ক্ষেত্রেও দামে বেশ কিছুটা পার্থক্য থাকে বলেও জানান মাছ বিক্রেতারা।
প্রায় এক কেজি ওজনের মাছের কেজিপ্রতি দাম উৎসে এক হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা।
অর্থাৎ, জেলেরা প্রতি কেজি মাছের জন্য এই দাম পেয়ে থাকেন বলে জানান, ভোলার মেঘনা নদীর জে‌লে মো: ইব্রাহীম মা‌ঝি।
আড়তে ওই আকৃতির মাছের দাম ওঠে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা।
যা আরো দুই-তিন শ’ টাকা বেশি দামে কিনতে হয় ভোক্তাকে।
‘মঙ্গলবার সকালে এক কেজি ওজনের মাছের মণ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬২ হাজার টাকা,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার।
রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের মাছের জন্য ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত হাঁকছেন বিক্রেতারা।
আবদুল বারী জমাদার জানান, কিছুদিন ধরে এই দামের মধ্যেই ইলিশের বেচা-কেনা হচ্ছে।
‘গত এক মাসে মণপ্রতি পাঁচ হাজার টাকার হেরফের হয়েছে। কেজিতে হয়তো দাম ৫০-১০০ টাকা বাড়ে-কমে,’ যোগ করেন তিনি।
জমাদার আরো জানান, এক কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের মাছ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায়।
যেসব কারণে দাম কমে না
দেশের ইলিশ রক্ষায় সরকার প্রতি বছর পহেলা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এই নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশের অভয়াশ্রমে মাছ ধরা, পরিবহন, বিক্রি ও মজুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এরপর মে-জুন থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইলিশ আহরণের মৌসুম।
এই সময়টাকে ‘পিক টাইম’ বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার বলছেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার এই সময়টায় মাছের দেখা মিলছে ‘খুবই কম’।
‘২০২২ সালে প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ মণ ইলিশ আসতো আমাদের মোকামগুলোয়, গত বছর আসে সাত-আট শ’ মণ আর এইবার আসতেছে দুই-আড়াই শ’ মণ,’ বলেন জমাদার।
এ বছর ৪০টি ট্রলারে দাদন (অগ্রিম অর্থ) দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত একটি ট্রলারও যথেষ্ট মাছ পাননি বলে দাবি করেন তিনি। জানান, একেকটি ট্রলারে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা করে দিয়েছেন।
এই দাদনদাতাদের মাধ্যমেই জেলেদের মাছ বিক্রির বাধ্যবাধকতা থাকে। এতে কমিশন এজেন্ট হিসেবে তারা দশ শতাংশ অর্থ পান।
পর্যাপ্ত যোগান না থাকলে দাম হ্রাসের সুযোগ থাকে না এমনটাই জানাচ্ছেন অন্য ব্যবসায়ীরাও।
আরেকটি কারণ, জেলে ও ট্রলারের খরচ তথা ব্যবসার বিনিয়োগ ও অন্যান্য ব্যয়।
বেচা-বিক্রির অনুপাতে খরচও কম নয়, বলছিলেন ভোলার আড়তদার মো: ইউনুছ মিয়া।
‘১০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে ছয় হাজার টাকা খরচ করা লাগে,’ বলেন তিনি।
আবদুল বারী জমাদার জানান, আকৃতিভেদে একেকটি ট্রলার বানাতে ব্যয় হয় এক থেকে দেড় কোটি টাকা। সেগুলো দশ বারো বছর পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য থাকে।
ফলে, ট্রলারের বিনিয়োগ তুলে আনতে গেলেও মাছের বেচা-বিক্রি ভালো দামে হওয়া জরুরি তাদের কাছে।
এছাড়া, মাছের বাজারের উচ্চ দামের জন্য কেউ কেউ সিন্ডিকেটের অভিযোগও তুলে থাকেন।
তবে, তা অস্বীকার করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
‘আমরা উন্মুক্ত নিলামে মাছ বিক্রি করি। সিন্ডিকেটের কোনো সুযোগ নেই,’ দাবি আবদুল বারী জমাদারের।
জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়লে দাম নিজে থেকেই কিছুটা কমে আসবে বলে তার দাবি।
বাংলাদেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এর বার্ষিক উৎপাদন পাঁচ লাখ একাত্তর হাজার টনে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com