ইসলাম একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ঐশী জীবনবিধান। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন সব ক্ষেত্রেই ইসলামের সুমহান দিকনির্দেশনা ও পথনির্দেশনা বিবৃত হয়েছে। সফল ও উন্নত মানবজীবন গঠনে ইসলামের পথনির্দেশনা অনুকরণের বিকল্প নেই। আর অনুকরণ-অনুসরণ করতে হলে জানতে হবে ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলি। জানতে হবে, ইসলামের মূল গোড়া বা ভিত্তি কী?
হাদিস শরিফে হজরত ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি : ১. আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ সা: আল্লাহর রাসূল- এ কথার সাক্ষ্য দান। ২. নামাজ কায়েম করা। ৩. জাকাত দেয়া। ৪. হজ করা এবং ৫. রমজানের রোজা পালন করা।’ (বুখারি-৮)
মুসলিম শরিফের এক হাদিসে বিষয়টি আরো বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আনাস ইবনে মালিক রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা:-কে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তাই আমরা চাইতাম যে, গ্রাম থেকে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি।
একদিন গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি এসে নবীজী সা:-কে বলল, হে মুহাম্মদ! আমাদের কাছে আপনার দূত এসে বলেছে, আপনি দাবি করেছেন যে, আল্লাহ আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন। রাসূল সা: বললেন, ‘সে সত্যই বলেছে’। আগন্তুক বলল, আসমান কে সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘আল্লাহ’। আগন্তুক বলল, এসব পর্বতমালা কে স্থাপন করেছেন এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তা কে সৃষ্টি করেছেন? রাসূল সা: বললেন, ‘আল্লাহ’। আগন্তুক বলল, কসম সেই সত্তার! যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং এসব পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। আল্লাহই আপনাকে রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন? নবীজী সা: বললেন, ‘হ্যাঁ’।
আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের উপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘সে সত্যই বলেছে’। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আল্লাহই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘হ্যাঁ’। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের ওপর আমাদের মালের জাকাত দেয়া ফরজ। নবীজী বললেন, ‘সে ঠিকই বলেছে’। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম, আল্লাহই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? নবীজী সা: বললেন, ‘হ্যাঁ’। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, প্রতি বছর রমজান মাসের রোজা পালন করা আমাদের উপর ফরজ। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘সে সত্যই বলেছে’।
আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তার কসম, আল্লাহই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘হ্যাঁ’।
আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের মধ্যে যে বায়তুল্লাহতে যেতে সক্ষম, তার উপর হজ ফরজ। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘সে সত্যই বলেছে’।
রাবি বলেন, তারপর আগন্তুক চলে যেতে যেতে বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি এর অতিরিক্তও করব না এবং এর থেকে কমও করব না। এ কথা শুনে নবী সা: বললেন, ‘লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সে জান্নাতে যাবে’। (মুসলিম, হাদিস নং আন্তর্জাতিক : ১২-১)
দ্বিতীয় হাদিসের শেষাংশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আগন্তুক ব্যক্তি যে বলেছে, ‘আমি এতে অতিরিক্তও করব না কমও করব না’ এর অর্থ হলো- লোকটি নবীজী সা:-এর কথামতো আমল করবে। আমলের ক্ষেত্রে কোনো কমবেশি করবে না। অথবা এর অর্থ হলো- লোকটি তার স্বীয় গোত্রের প্রতিনিধি হিসেবে নবীজীর দরবারে এসেছিল। সে তার গোত্রের কাছে নবীজীর থেকে শোনা কথাগুলো বর্ণনা করার ক্ষেত্রে কমবেশি করবে না।
এর উত্তরে নবীজী সা: যে বলেছেন, যদি সে সত্য বলে থাকে তবে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
এ কথা দ্বারা এটিই প্রমাণিত হয়, যে কেউ এই পঞ্চস্তম্ভ যথাযথ পালন করবে তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। লেখক : শিক্ষক, জামিয়াতুল আবরার দারুল উলুম আল-ইসলামিয়া, উরশিউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া