ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ তুলে শ্রীমঙ্গলের দ্বারিকা পাল মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মনসুরুল হকের পদত্যাগ দাবিতে সড়ক দখল করে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ৩টার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৫ট পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল চৌমুহনাস্থ আঞ্চলিক মহাসড়কে দুই ঘন্টাব্যাপী অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির সাথে একাত্মতা পোষণ করে শ্রীমঙ্গলে শতশত সাধারণ জনতা অংশ নেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর শাহাদত হোসেন আকাশ বলেন, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কলেজের অধ্যক্ষ মনসুরুল হক গত ১৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি প্রকাশ্যে আন্দোলনের বিরোধিতা করেন এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের পথে বাধা সৃষ্টি করেন। এমনকি, ৩ ও ৪ আগস্ট শ্রীমঙ্গলের চৌমুহনা চত্বরে তিনি আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী শাসনের পক্ষে অবস্থান নেন এবং শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা পোষণকারী শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আব্দুল জব্বার আজাদ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ফ্যাসিস্টের দালাল অধ্যক্ষ মনসুরুল হক তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে কলেজ ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগের শাসন ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপর বৈষম্যমূলক আচরণ চালিয়ে আসছেন। ৫ আগস্টের পরও তিনি তার স্বপদে বহাল থেকে আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী মনোভাবের অংশ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের পথ আরও সংকুচিত হচ্ছে। বিক্ষোভ চলাকালে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা ‘দফা এক দাবি এক, অধ্যক্ষের পদত্যাগ’, ‘যেই শিক্ষক খুনির পক্ষে থাকে, সেই শিক্ষক চাই না’, ‘যেই শিক্ষক ছাত্রজনতার বিপক্ষে সেই শিক্ষক চাই না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের ফলে শ্রীমঙ্গল-হবিগঞ্জ এবং শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়কের প্রায় পাঁচ ককিলোমিটার পর্যন্ত যান চালচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শ্রীমঙ্গলের আঞ্চলিক মহাসড়কে বিশাল যানজট তৈরি হয়। এতে পথচারীসহ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। আন্দোলনে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষও অংশগ্রহণ করেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনির সদস্যরা মাঠে নেমে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। এসময় ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আবু তালেব। তিনি বলেন, অধ্যক্ষের পদত্যাগের বিষয়ে কিছুদিন আগে আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। আবার কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আরেকটি স্মারকলিপি পেয়েছি। এই স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা বলেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বহিরাগত শিক্ষার্থীরা ষড়যন্ত্র করে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিষয়টি যেনো তদন্ত করি। আবার আপনাদের স্মারকলিপি অধ্যক্ষের অপসারণের জন্য। আমি দুইটি স্মারকলিপি আমার ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ ডিসির কার্যালয়ে ফরওয়ার্ড করেছি। বিষয়টি দ্রুতই কিছু করা যাচ্ছে না। তদন্তাধীন রয়েছে। আর এবিষয়ে মাউশি অধিদপ্তরের ডিজির পক্ষ থেকে নির্দেশনা আসতে হবে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নতুন নির্দেশনা জারি হয়েছে শিক্ষার্থীরা কাউকে জোড় করে পদত্যাগ করাতে পারবে না। যদি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ যে নির্দেশনা দিবেন আমি সেটা বাস্তবায়ন করবো। পরে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি বাস্তবায়নে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি স্থগিত করেন।