বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে পূর্ণিমার মতো উজ্জ্বল এক নাম হাসসান বিন সাবিত রা:। রাসূল সা:-এর যুগে ইসলাম, মুসলমান এবং প্রিয় নবীজীর সপক্ষে সবচেয়ে বেশি যিনি কবিতা রচনা করেছেন এবং যাঁর কবি খ্যাতি ভোরের সোনালি ঊষার মতো চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল তিনি হলেন হজরত হাসসান বিন সাবিত রা:। শিশু ইসলামী রাষ্ট্রের রাজকবি ও সভাকবির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তাই তাঁকে শায়েরুর রাসূল বা রাসূলের কবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
তাঁর পূর্ণ নাম আবুল ওয়ালীদ হাসসান বিন সাবিত রা:। হিজরতের প্রায় ৬০ বছর আগে ৫৬৩ খ্রিষ্টাব্দে মদিনার খাযরাজ গোত্রের বানু নাজজার গোত্রে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো বংশই ছিল কবি বংশ। কবিতার আবহেই তিনি বেড়ে উঠেছিলেন। তাঁর পিতা ও দাদা উভয়ই নামকরা কবি ছিলেন। আবার তাঁর পুত্র আবদুর রহমান এবং নাতি সাঈদও কবি ছিলেন। হাসসান রা:-এর এক কন্যা ছিলেন তিনিও কবি ছিলেন। জাহেলি যুগেই তিনি কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
আয়েশা সিদ্দিকা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত হাসসান বিন সাবিত রা: কবিতা আবৃত্তি শুরু করলে তাঁকে উৎসাহিত করার জন্য কখনো কখনো নবীজী সা: সবাইকে শুনিয়ে বলতেন, হাসসানের জিহবা যতদিন রাসূলের পক্ষে কবিতা শুনিয়ে যাবে ততদিন তাঁর সাথে জিবরাঈল থাকবে। তাঁর কবিতা শুনে রাসূল সা: বলেছিলেন, হে হাসসান, আল্লাহর কাছ থেকে তোমার পুরস্কার রয়েছে জান্নাত।
রাসূল সা: মসজিদে নববীতে হাসসান বিন সাবিতের রা: জন্য পৃথক মিম্বার (ম ) তৈরি করে দিয়েছিলেন। তার ওপরে চড়ে হাসসান নবীজীর গৌরবগাঁথা এবং মুশরিকদের নিন্দাসূচক কাব্য আবৃত্তি করতেন। হাসসান বিন সাবিত রা: কবিতা আবৃত্তি শুরু করলে রাসূল সা: তাঁর জন্য এ বলে দোয়া করতেন, হে আল্লাহ রুহুল কুদ্দুসকে দিয়ে তুমি তাঁকে সাহায্য করো।
হজরত আয়েশা রা: বর্ণনা করেন, রাসূল সা: বলেন, তোমরা কাফির মুশরিকদের নিন্দা করে কাব্য লড়াইয়ে নেমে পড়। তীরের ফলার চেয়ে তা আরো বেশি আহত করবে তাদের। ইবনে রাওয়াহাকে পাঠানো হলো। সম্পূর্ণ মুগ্ধ হতে পারলেন না রাসূল সা: কা’ব বিন মালিকও এলেন। অবশেষে যখন হাসসান এলেন, বললেন, সবশেষে তোমরা পাঠালে ওকে? ও তো লেজের আঘাতে সংহারকারী তেজোদ্দীপ্ত সিংহশাবক। কথা শুনে আনন্দে জিভ নাড়তে লাগলেন হাসসান। বললেন, যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ। এ জিভ দিয়ে ওদের মধ্যে চামড়া ছিলে ফেলার মতো গাত্রদাহ সৃষ্টি করেই ছাড়ব।
রাসূল সা: ইনতিকালের পরও খলিফারাও তাঁকে উচ্চ মর্যাদা দিতেন। বায়তুল মাল থেকে বৃত্তি পেতেন। এতেই তার জীবিকা নির্বাহ হতো। ভাষাবিদ আবু উবায়দার মতে, ইসলামপূর্ব যুগে তিনি খাযরাজ এর কবি, রাসূলের জীবদ্দশায় রাসূলের কবি এবং তারপরে কবি হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি মুয়াবিয়া রা:-এর খিলাফতকালে ৫৪ হিজরিতে ১২০ বছর বয়সে ইসলামের এই মহান কবি ইন্তেকাল করেন।
লেখক: শিক্ষক, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, পাংশা, রাজবাড়ী