মসজিদ-মাদ্রাসা ও গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কারে ৪ কোটি ৫৯ লাখ ১৫ হাজার ৪৯২ টাকা বরাদ্দ পান কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী উপজেলা পিআইও দপ্তর। একই বছর সংস্কার খাতে দুই উপজেলায় আরও ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বাজার মূল্যের ৩১৫ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ত্রান ও দুর্যোগ অধিদপ্তর এ বরাদ্দ দেন। গতানুগতিক পদ্ধতিতে প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দ ব্যয় করে সংশ্লিষ্টরা। অথচ মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানে ৮০ শতাংশ প্রকল্পের হদিস পাওয়া যায়নি। কাল্পনিক প্রকল্পের তালিকা তৈরী করে এসব বরাদ্দ লুট/ ভাগাভাগি হয়েছে। ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা‘ই জানেনা বরাদ্দ ও সংস্কার বিষয়টি। প্রভাবিত করে সংশ্লিষ্টদের থেকে প্রাপ্তি স্বাক্ষর নেন চক্রটি। অনেক ক্ষেত্রে বরাদ্দের তথ্য পাচকান হওয়ায় নামমাত্র অর্থ দিয়ে সংশ্লিষ্টদের মুখ বন্ধ রাখা হয়। রাঙ্গাবালী উপজেলার তৎকালীন ও কলাপাড়া উপজেলায় কর্মরত পিআইও মো. হুমায়ুন কবিরের হাত ধরে এসব দুর্নীতি ঘটে। এ ভাগাভাগির তালিকায় পটুয়াখালী-০৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সাবেক ত্রান প্রতিমন্ত্রী মহিব্বুর রহমানের ঘনিষ্ট জনের নাম উঠে এসেছে। যদিও এ ঘনিষ্টরা সরকার পতনের পর আত্মগোপন রয়েছে। জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যে জানা গেছে-২০২২-২৩ অর্থ বছরে মসজিদ-মাদ্রাসা ও গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কারে কয়েকটি ধাপে রাঙ্গাবালী উপজেলা পিআইও দপ্তরে ১ কোটি ১৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন ত্রান ও দুর্যোগ অধিদপ্তর। ৩৪টি প্রতিষ্ঠান সংস্কার দেখিয়ে এ বরাদ্দ ব্যয় করে পিআইও। একই বছর ১১০ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ পেয়ে ৮টি গ্রুপে তা ব্যয় করা হয়। এছাড়াও একই বছর ত্রান ও দুর্যোগ অধিদপ্তর থেকে মসজিদ মাদ্রাসা ও গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কারে কলাপাড়া পিআইও দপ্তর ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪৯২ টাকা বরাদ্দ পান। ১২৯টি প্রতিষ্ঠান/গ্রুপের নামে এ অর্থ ব্যয় করে। এছাড়াও ২০৫ টন খাদ্যশস্য ১৮টি গ্রুপ করে ব্যয় করে কলাপাড়া পিআইও। পরবর্তীতে প্রকল্পের অর্থ ভাগাভাগির অভিযোগ ওঠে পিআইও হুমায়ুন কবির ও সাবেক ত্রান প্রতিমন্ত্রীর লোকজনের বিরুদ্ধে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত মার্চ ও এপ্রিল অনুসন্ধানে উঠে আসে লুটপাটের কল্পনাতীত তথ্য। প্রকল্প লুটের এসব অভিযোগ ডিসি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন‘র নজরে আনা হলে তিনি বলেন, আমার যোগদানের পূর্বে এসব কাজ হয়েছে,তাই খোঁজ খবর নিয়ে জানাবেন এবং সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেবেন। সুত্রমতে-২০২৩ সালের ১৩ জুলাই কলাপাড়া পিআইও দপ্তরে ১ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেন ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদপ্তর। ২ লাখ ২২ হাজার টাকা করে ৪৫টি গ্রুপে মসজিদ মাদ্রাসা ও গ্রামীন অবকাঠমো সংস্কার দেখিয়ে এ অর্থ ব্যয় করে কলাপাড়া পিআইও দপ্তর। তালিকা অনুযায়ী তেগাছিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা মাঠ ভরাট করে পিআইও দপ্তর। অথচ প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক রুহুল আমীন জানান, সর্বশেষ ২০১৬ সালে নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটি সংস্কার হয় এবং পিআইও দপ্তরের বরাদ্দ ও সংস্কার বিষয়টি তারা জানেন না। তালিকা অনুযায়ী “তেগাছিয়া খেয়াঘাটের দুই পাশ মাটি ভরাট,তেগাছিয়া বাজার জামে মসজিদের পুকুরের চারপাশ সংস্কার,তেগাছিয়া মাছ বাজার টোলঘরের সামনে স্বমিল সংলগ্ন খালের পাশে মাটি ভরাট, তেগাছিয়া ট্রলার ঘাটের দুই পাশে মাটি ভরাট, তেগাছিয়া শহিদ খানের বাড়ীর সামনে থেকে জামাল আকন এর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, তেগাছিয়া গ্রামের মুন্সি বাড়ীর জামে মসজিদ মাঠ সংস্কার তেগাছিয়া পাকা রাস্তার পাশে জসিম এর দোকানের পূর্ব পাশ থেকে হাকিম হাওলাদারের বাড়ী পর্যন্ত সড়ক সংস্কার, তেগাছিয়া হাফিজিয়া মাদ্রসা মাঠ সংস্কার,চাপলি সরকারী প্রাঃ বিদ্যালয় থেকে দক্ষিনে নুর সাইনারীর বাড়ীর ওয়াপদা পর্যন্ত সড়ক সংস্কার, কাউয়ারচর বটতলা থেকে পিন্টু তালুকদারের বাড়ী পর্যন্ত সড়ক সংস্কার, চাপলি বড় জামে মসজিদের পাশ থেকে সোহেল কারীর মাদ্রাসা পর্যন্ত সংস্কার মিরপুর মীরাবাড়ী জামে মসজিদ মাঠ সংস্কার। খাপড়া ভাঙ্গা ফোরকান মুন্সির বাড়ীর সামনে রাস্তা সংস্কার,ডাবলুগঞ্জ বাজার জামে মসজিদ মাঠ সংস্কার, ডাবলুগঞ্জ দিনিয়া মাদ্রাসার মাঠ সংস্কারসহ অন্তত ২০টি প্রকল্পে অনুসন্ধানে গিয়ে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব প্রকল্পের হদিস পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ১৫টি সংস্কার তালিকা করে ৩৯ লাখ, ২৩ হাজার টাকা ব্যয় করে কলাপাড়া পিআইও দপ্তর। তালিকা অনুযায়ী ইটবাড়িয়া বায়তুন নূর জামে মসজিদ সংস্কারে ৩ লাখ টাকা ব্যয় হলেও তা জানেনা প্রতিষ্ঠানের খাদেম ইমরান হোসেন। ঘুঢাবাছা মরহুম জব্বার গাজীর বাড়ী জামে মসজিদ সংস্কারে ৩ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও কোন কাজ হয়নি। নবীপুর কালিমন্দির সংস্কারে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও মন্দির কমিটি পেয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ইটবাড়িয়া নান্নু হাং বাড়ী জামে মসজিদ সংস্কারে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও মসজিদ কমিটি পেয়েছে দেড় লাখ টাকা। ইসলামপুর মাষ্টারবাড়ী জামে মসজিদে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও ৫০ হাজার টাকায় ওজুখানা করে দেয়া হয়। ইসলামপুর খন্দকার বাড়ী জামে মসজিদ সংস্কারে ৩ লাখ বরাদ্দ হলেও ৪টি গ্রীল নির্মান বাবদ ২০ হাজার টাকা পেয়েছে সভাপতি রুহুল আমীন। নয়া মিশ্রীপাড়া রহিম মিয়া জামে মসজিদ সংস্কারে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও ৫০ হাজার টাকায় একটি টয়োলেট করে দেন ত্রানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট তরিকুল। তালিকায় উল্লেখিত ১৫টি প্রকল্পের ৮টিতে এ গড়মিল পাওয়া গেছে। ১৬টি প্রকল্প দেখিয়ে ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় করে কলাপাড়া পিআইও দপ্তর। ওই তালিকায় বিপিনপুর জাহাঙ্গীর শিকদারের বাড়ী সংলগ্ন রাস্তা থেকে সগীর খানের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা পূর্ন নির্মানে ২ লাখ এবং মোয়াজ্জেমপুর দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন রাস্তা থেকে মোতালেব হাং এর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ৩ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলে কোন কাজ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে ৬৫ লাখ টাকার ৮০ শতাংশ অর্থ লুট পাটের ভাগাভাগি হয়েছে। অপর একটি প্রকল্পে ১৮টি সংস্কার দেখিয়ে ৬০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয় করে কলাপাড়া পিআইও দপ্তর। এতে সুধিরপুর জাহাঙ্গীর সরদার বাড়ী হইতে পশ্চিম জাহাঙ্গীর সন্নামত বাড়ী হয়ে জব্বার খানের বাড়ী পর্যন্ত সড়ক সংস্কারে ৫ লাখ এবং ডংকুপাড়া মোস্তফার বাড়ী সংলগ্ন রসুলপুর সরকারী প্রাঃ বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়ক সংস্কারে ৩ লাখ ব্যয় দেখানো হলেও কোন কাজ হয়নি। অপর একটি প্রকল্পে ২৯ টি কাজ দেখিয়ে ৬৬ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয় করে পিআইও দপ্তর। এ প্রকল্পের তালিকায় মহিপুর পাউবো জামে মসজিদ সংস্কারে ২ লাখ, ১৯ হাজার টাকা উল্লেখ থাকলেও মসজিদ কমিটির সভাপতি রাজু আহম্মেদকে ৭০ হাজার টাকা দেয়া হয়। রসুলপুর ফোরকানিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসায় সংস্কারে ২ লাখ, চাপলি বাজার কেন্দ্রীয় মসজিদের পুকুরের ঘাটলা এবং চাপলি বাজার একটি গনশৌচাগার সংস্কারে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোন কাজ হয়নি। মহিপুর গ্রামীন ব্যাংক সংলগ্ন সড়ক থেকে বিপিনপুর কালু হাওয়াদারের বাড়ী পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের ১০.৪৯ টন চাল বরাদ্দ হলেও কোন কাজ হয়নি। এসব প্রকল্প পিআইও হুমায়ুন কবিরের তত্ত্বাবধায়নে বাস্তবায়ন হয়েছে। সুত্রমতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রাঙ্গাবালী উপজেলার দক্ষিন আমলিবাড়িয়া আফের উদ্দিন বাড়ীর জামে মসজিদ সংস্কারে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও মসজিদ কমিটি পেয়েছে ৬০ হাজার টাকা। রাজার বাজার জামে মসজিদ সংস্কারে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও তা জানেনা প্রতিষ্ঠানের ঈমাম রুহুল আমীন। চতলাখালী হাজীবাড়ী দারুস সালাম জামে মসজিদ সংস্কারে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও তা জানেনা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি রায়হান আহম্মেদ। মাদারবুনিয়া সুলতান প্যাদার বাড়ী হইতে বাতেন মালের বাড়ী পর্যন্ত সড়ক নির্মানে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোন কাজ হয়নি। গঙ্গীপাড়া কাজী বাড়ীর সামনে এইচবিবি সড়ক হইতে জবান আলী হাওলাদারের বাড়ী পর্যন্ত সড়ক নির্মানে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোন কাজ হয়নি। মাদারবুনিয়া আলমগীর হাওলাদারের বাড়ী হইতে ইউনুচ প্যাদার বাড়ী পর্যন্ত সড়ক নির্মানে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোন কাজ হয়নি। মাদারবুনিয়া জহির ফকিরের বাড়ী হইতে রশিদ মুন্সির জমি পর্যন্ত সড়ক নির্মানে ১০ টন গম বরাদ্দ হলেও কোন কাজ হয়নি। পুলঘাট এমদাদ আলী জামে মসজিদ সংস্কারে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোন কাজ হয়নি। ছোটবাইশদা ইউনিয়নের চর তোজাম্মেল ফজলু দালালের বাড়ীর পশ্চিম পাশে খালের উপর কাঠের সেতু সংস্কারে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোন কাজ হয়নি। ছোটবাইশদা ইউনিয়নের সিদ্দিকিয়া/মমতাজিয়া নুরুদিয়া হাফেজি ক্যাডেট মাদ্রাসা সংস্কারে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোন কাজ হয়নি। পশ্চিম কোড়ালিয়া আল বায়তুল জামে মসজিদ সংস্কারে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোন কাজ হয়নি। ছোটবাইশদা নূরুলহক মৃধার বাড়ী জামে মসজিদ সংস্কারে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোন কাজ হয়নি। ছোটবাইশদা মিরাজ মুন্সির বাড়ী জামে মসজিদ সংস্কারে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও মসজিদ কমিটিকে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে-সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরা ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে এসব অর্থ লুটপাট করে। বরাদ্দের ১০ শতাংশ অর্থ পেয়েছে কোন কোন প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ প্রসঙ্গে রাঙ্গাবালী পিআইও অজিৎ চন্দ্র দেবনাথ দাবি করেন-তিনি যোগদানের পূর্বে উল্লেখিত কাজ হয়েছে,তাই বিষয় বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত নন। অর্থাৎ কলাপাড়া উপজেলায় কর্মরত পিআইও হুমায়ুন কবির‘র তত্ত্বাবধায়নে হয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে হুমায়ুন কবির দাবি করেন-শতভাগ কাজ হয়েছে,কোন অনিয়ম হয়নি। অনুসন্ধান সঠিক হয়নি।