রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টিসহ আরো কিছু বিষয় সংস্কার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সুজনের মতে, অন্তর্র্বতী সরকারের এখতিয়ারভুক্ত সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। নির্বাচনের পরও নির্বাচিত সরকারের সংস্কার চলমান রাখতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার সুশাসনের জন্য নাগরিক কর্তৃক ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এসব কথা বলেন বক্তারা। সুজনের সহসভাপতি বিচারপতি এমএ মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব ড. আব্দুল আওয়াল মজুমদার, বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহাবুব কামাল, বিশিষ্ট সাংবাদিক সোহরাব হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম শফিকুল ইসলাম কানুসহ সুজনের নেতারা।
লিখিত প্রবন্ধে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘আগে রাষ্ট্র সংস্কার, না আগে নির্বাচন, এ বিতর্কে না গিয়ে সংস্কার ও নির্বাচন ভাবনাকে কয়েকটি ধাপে ভাবা যেতে পারে। প্রথমত, সংস্কার কমিশনগুলো কর্তৃক অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ; দ্বিতীয়ত, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার কর্তৃক অংশীজনদের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনাক্রমে সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরণ; তৃতীয়ত, কোন সংস্কারগুলো অন্তর্র্বতীকালীন সরকার করবে এবং কোন সংস্কারগুলো নির্বাচিত সরকার করবে তা নির্ধারণ; চতুর্থত, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের এখতিয়ারভুক্ত সংস্কারগুলো সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি; পঞ্চমত, নির্বাচিত সরকার কর্তৃক কোন সংস্কারগুলোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি জাতীয় সনদ বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, যাতে যে দল সরকার গঠন করবে তারা যেন সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে বাধ্য হয় এবং বিরোধীদলগুলোও যেন তাতে সমর্থন দিতে বাধ্য থাকে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের আগে যেমন সংস্কার প্রয়োজন, নির্বাচনের পরও তা চলমান রাখতে হবে।’
বিচারপতি এমএ মতিন বলেন, ‘একটি সফল বিপ্লবের পর আগামী সময়ে রাষ্ট্রের কী মেরামত লাগবে, এ ব্যাপারে সুজন আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণের প্রতিনিধিদের নিয়ে দেশ পরিচালিত হবে এটাই স্বাভাবিক, এর কোনো ব্যত্যয় হওয়া উচিত নয়। কিন্তু দেশের ন্যূনতম কোনো সংস্কার না করে রাজনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দেয়া অনেকে নিরাপদ বোধ করছে না। তাই নির্বাচনে যাওয়ার আগে কিছু জরুরি সংস্কার করা দরকার।’সোহরাব হাসান বলেন, ‘১৭ কোটি মানুষের ভাগ্য বদলের চিন্তা করতে হবে। এটাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ৫৩ বছর ধরে রাষ্ট্র এটি করেনি। এতগুলো জীবনের বিনিময়ে এখন বৈষম্যবিরোধী সমাজ পাচ্ছি। গতকাল (বুধবার) স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নিয়ে যে ঘটনা ঘটল, এটা কাম্য ছিল না। ৫ আগস্টের পর সব অবিচার বন্ধ হয়ে যায়নি। অবিচারের প্রতিবাদ এখনো করতে হবে।’