নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর ছয়ানী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. ওমর ফারুক। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। কিছুদিন আগে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করার প্রস্তুতি নেন।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর ছয়ানী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. ওমর ফারুক। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। কিছুদিন আগে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করার প্রস্তুতি নেন। তিনি দেখতে পান তার জন্ম নিবন্ধনপত্রে নামের বানান, গ্রাম ও জন্ম তারিখে ভুল রয়েছে। এগুলো সংশোধনের জন্য যান ইউনিয়ন অফিসে। সেখানে সংশোধনের আবেদন করা হলে সংশোধিত কপিতে নতুন ভুল দেখতে পান। এভাবে চারবার সংশোধনের পর তার জন্ম নিবন্ধন সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হয়। কিন্তু বারবার আবেদন করতে গিয়ে অতিরিক্ত ফি দেয়ার পাশাপাশি অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে তাকে। দেশে বর্তমানে জন্ম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সনদ নিতে গিয়ে এ ধরনের নানা ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয়ের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শাখার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে গড়ে প্রতিদিন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন পড়ে ১ লাখ ২ হাজার ১৭৯টি। প্রতিদিন সনদ দেয়া হয় ৯২ হাজার ৫৬টি। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন জমা পড়ে ৪৯ হাজার ৯২৫টি। আর সংশোধনের আবেদন প্রতিদিন গড়ে নিষ্পত্তি হয় ২৬ হাজার ৫৪১টি।
মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের অবহেলা ও অদক্ষতার কারণেই আমাকে চারবার সংশোধনের আবেদন করতে হয়েছে। কারণ প্রতিবারই সনদ হাতে নেয়ার পর দেখা যায়, নতুন কোনো ভুল হয়ে গেছে। এতে সময় তো নষ্ট হয়েছেই, টাকা-পয়সাও গেছে।’
একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯ নম্বর বাগাদী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে দেখি, আমার শিক্ষা সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধনে নামের গরমিল রয়েছে। সেটি সংশোধনের জন্য আমাকে দুবার আবেদন করতে হয়েছিল।’ জন্ম নিবন্ধনে ভুলের বিষয়ে ৫ নম্বর ছয়ানী ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা (পরিচালক) মো. নিজাম উদ্দীন বলেন, ‘যখন ডিজিটাল ছিল না, তখন অনেক ভুল ছিল। সে সব ভুল অনেকে সংশোধনের আবেদন করছেন। বর্তমানে ভুলের সংখ্যা অনেক কমেছে। এখন ডিজিটাল হওয়ায় ব্যক্তি নিজেই তার শিশুর নিবন্ধনের আবেদন করছেন এবং সংশোধনের আবেদনও অনলাইনে করা যাচ্ছে। কিন্তু এখন যে ভুলগুলো দেখা যায়, সেগুলো বেশির ভাগই টাইপিং মিসটেক এবং তথ্য সরবরাহের ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘটে আবেদনকারীর দিক থেকে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব, দক্ষতা উন্নয়নে আগ্রহী না হওয়া এবং কাজের প্রতি অবহেলার কারণে এমন ভুল হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে টিকা কার্ড অনুযায়ী জন্ম নিবন্ধন করা হলে ভুলের পরিমাণ কমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুর টিকা কার্ড দেখে জন্ম নিবন্ধন করা হলে সাধারণত ভুলের আশঙ্কা থাকে না। এর পরও কর্মকর্তাদের অদক্ষতা বা অবহেলার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যায় না। কারণ আমরা প্রায়ই দেখি এসব গুরুত্বপূর্ণ সনদে নানা ভুল হয়ে থাকে। তখন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। সঠিক নিয়মে দক্ষতার সঙ্গে টিকা ও জন্ম নিবন্ধন করা হলে এ ধরনের ভুল এড়ানো সম্ভব। সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা, দক্ষতা ও সতর্কতা জরুরি।’ তিনি বলেন, ‘সঠিকভাবে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করা সম্ভব হলে সরকারের অনেক খরচ কমে যাবে। যেমন জনসংখ্যার সঠিক তথ্য জানা এবং সেসব প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্লেষণ করে রাষ্ট্র বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। যেটি খরচ ও সময় দুটিই কমাবে।’- বণিক বার্তা