সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে গেলেন ৬ শতাধিক মৌয়ালী, মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে আজ জাজিরায় আ.লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার-৮ কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার: গায়েবী মামলার অভিযোগে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন কটিয়াদীতে আশিক খাঁ’র হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন লামায় শিক্ষার্থীদের মাঝে এপেক্স ক্লাবের শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ শ্রীমঙ্গলে ১৩ বছরে ৬৫২ বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে অবমুক্ত করে বন্যপ্রাণী ফাউন্ডেশন জগন্নাথপুরে মজলিসের ওয়ার্ড প্রতিনিধি সম্মেলনে হযরত গাউসুল আজম সৈয়দ গোলামুর রহমান ভা-ারীর ৮৯ তম ওরশ শরীফ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হাডুডু খেলা দেখতে হারিনাতেলীতে জনতার ঢল খুলনায় কেএফডব্লিউর প্রতিনিধি দলের সাথে কেসিসি কর্মকর্তাদের আলোচনা সভা

খরস্রোতা কালীগঙ্গা এখন ফসলের মাঠ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

এক সময়ের খরস্রোতা কালীগঙ্গার রূপ ছিল ভয়াবহ। এ নদীতে চলতো স্টিমার, ফেরি। দুকূল ছাপিয়ে ভাঙত বসতি ও ফসলি জমি। এখন হেমন্তে যেন মরা খালে পরিণত হয়েছে নদীটি। জেলার দৌলতপুর, ঘিওর ও সদর উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত শত বছরের ঐতিহ্য কালীগঙ্গা এখন রূপ নিয়েছে ফসলের মাঠে। কৃষকরা বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আবাদ করছেন বোরো ধান, ভুট্টা আর কালাইসহ বিভিন্ন ফসল। অপরিকল্পিত খনন, অবৈধ বালু উত্তোলন, দূষণ ও দখলে কালীগঙ্গার অস্তিত্ব হুমকির মুখে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জের বুক চিরে বয়ে গেছে পদ্মা, যমুনা, ইছামতী, কালীগঙ্গা, কান্তাবতী, মনলোকহানী, গাজীখালী, ক্ষীরাই, মন্দা, ভুবনেশ্বর, ধলেশ্বরী। ১৩৭৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মানিকগঞ্জে নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪১ কিলোমিটার। ছোট-বড় ১১টি নদীতে বছরজুড়ে পানির প্রবাহ ছিল বিস্তর। এরমধ্যে একসময়ের প্রমত্তা ছিল কালীগঙ্গা। এখন হেমন্ত যেন মরা খালে পরিণত হয়েছে।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের যমুনা থেকে কালীগঙ্গা নদীর উৎপত্তি। ঘিওরের জাবরা হাটের কোল ঘেঁষে সিংগাইরের ধল্লা পর্যন্ত এ নদী বিস্তৃতি। ৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কালীগঙ্গার গড় প্রস্থ ২৪২ মিটার। এ তথ্যগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। বাস্তবতা হলো, কালীগঙ্গার বিস্তৃতি আর নেই। কোথাও নদীর প্রস্থ ১০ মিটারে নেমে এসেছে। কোথাও কোথাও নদীর অস্তিত্বও নেই।
াসরেজমিনে দেখা যায়, ঘিওর উপজেলার আশাপুর, সিংজুরী, উত্তর তরা, জাবরা, দুর্গাপুর, সড়ক ঘাটা ও নকীবাড়ি এলাকা; মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চর বেউথা, গালিন্দা, নবগ্রাম, চর ঘোস্তা, আলীগরচর, শিমুলিয়া এলাকা কার্যত শুকিয়ে গেছে। পরিণত হয়েছে ফসলের মাঠে। কালীগঙ্গা নদীর পানি সচল রয়েছে সদর উপজেলার বান্দুটিয়া, পৌলী, লেমুবাড়ী, বালিরটেকে। এছাড়া ঘিওর উপজেলার হাটিপাড়া, সিংগাইর উপজেলার বালুখ-, পাতিলঝাঁপ, শোল্লা, আলীনগর এলাকার কোথাও আধা কিলোমিটার, কোথাও দুই-তিন কিলোমিটার অংশজুড়ে পানির প্রবাহ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ৪-৫ কিলোমিটার কালীগঙ্গা নদী অংশের এলাকার পানি শুকিয়ে গেছে। একসময়ের খরস্রোতা কালীগঙ্গা নদীটি এখন কৃষকের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। হেমন্তের শুরুতে জমিতে শুরু হয়েছে চাষাবাদ। জমির মানভেদে বোরো, ভুট্টা এবং কালাই রোপনের ধুম লেগেছে।
আশাপুর গ্রামের কৃষক জমশের আলী (৭৫)। নদীপারের আবাদি জমি দেখিয়ে তিনি বলেন, এখানে নদী ছিল। অনেক স্রোত, বড় বড় স্টিমার চলত। বর্ষা এলেই দুকূল ভাঙত। এখন নদী শুকিয়ে গেছে। নদীর ঠিক মাঝে ধানের চারা রোপণ করেছি। ২-৩ দিনের ভিতরেই চারাগুলো তুলে পাশের জমিতে বপন করব। পাড়ে একবিঘা জমিতে মাষকলাই আর গোল আলু চাষ করেছি।
চর কুষন্ডা গ্রামের কৃষাণী মনোয়ারা বেগম বলেন, তিনবিঘা জমিতে বোরো ধান বুনেছি। এখন হালি তুলছি আরও একবিঘা জমিতে বোরো ধান লাগাবো। ৮-১০ বছর হয় আমি এ জমিতে ধান চাষ করি। আগে আমার স্বামী ছিল তিনি এ নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাত। তার মৃত্যুর পর আমি এ কৃষি কাজ করেই সংসার চালাই। দুই ফসল বুনতে পারি।
কালীগঙ্গাপারের সিংজুরী গ্রামের বাসিন্দা আয়াত আলী (৬০) বলেন, দুই দশক আগেও বছরজুড়ে পানি থাকত নদীতে। নদীর বেশির ভাগ অংশই শুকিয়ে গেছে। নৌকার পরিবর্তে নদীতে চলাচল করে ঘোড়ার গাড়ি। সাইকেল, রিকশা-ভ্যানও চলে।
বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) জেলা সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশে মানিকগঞ্জে নদীর প্রভাব ছিল বিস্তর। নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল এ অঞ্চলের কৃষি, অর্থনীতি, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও সভ্যতা। কিন্তু সেই ঐতিহ্য ক্রমশই সংকুচিত হয়ে আসছে। পানির দেশে পানির জন্যই হাহাকার। সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনায় সরকারের আরও মনোযোগ ও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।
নদী রক্ষা আন্দোলন মানিকগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া, পরিকল্পিত খনন না হওয়া, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, দূষণ, দখলসহ বিভিন্ন কারণে কালীগঙ্গার আজ এ হাল। নদী রক্ষায় এখনি সুদৃষ্টি না দিলে মানচিত্র থেকে নদীগুলো হারিয়ে যাবে।
মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রবহমান নদীগুলো, বিশেষ করে কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর অবস্থা খুবই করুণ। বেশির ভাগ নদীতেই পানির অভাব। এতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, কৃষি, মৎস্য, জীববৈচিত্রসহ সর্বত্র বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।’ মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘নদী খনন ও পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। কিছু কাজ চলমান রয়েছে। আরও খননের জন্য জলবায়ু ট্রাস্ট এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বরাবর কয়েকটি প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com