গাজীপুর সিটির কাউন্সিলর হয়েও একাধিকবার মেয়রের চেয়ারে প্রায় এক মেয়াদ। হটিয়েছিলেন বিএনপি ও আওয়ামীলীগের দুই মেয়র। অবৈধ টাকার পরিমান এতে বেশী যে, যা আর কোন নেতা বানাতে পেরেছেন কি না সন্দেহ। কাঁচা টাকার গন্ধে কিরণ দখল করেছিলেন তার নিজের বাড়ির সামনে কবরস্থানও। অনুসন্ধানে জানা যায, গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র, টঙ্গীর ৪৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সহসভাপতি কারারুদ্ধ আসাদুর রহমান কিরণ। তিনি গাজীপুর সিটির প্রথম মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে হটিয়ে কারাগারে পাঠান। একাধিকবার কারাগারে রেখে মেয়র মান্নানকে ৩২ মামলার আসামী করেছিলেন কিরণ। জেল থেকে বেরিয়েছেন আবার মেয়রের চেয়ারে বসেছেন আবার মান্নানকে কারাগারে পাঠিয়ে চেয়ার দখল করেছিলেন কাউন্সিলর আসাদুর রহমান করণ। কিরণ এসপি হারুনকে দিয়ে মেয়র মান্নানকে রিমান্ডেও নিয়েছিলেন। সবশেষ জামিন পেলেও তিনি আর সুস্থ হয়ে ফিরতে পারেনি। চলে যান পরপারে। একই পরিস্থিতি হয়েছিল ২০১৮ সালে গাসিকের দ্বিতীয় মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের। জাহাঙ্গীরকেও কোটচালে ফেলে মেয়রের পদ থেকে সরিয়ে নিজে চেয়ার দখল করেছিলেন কাউন্সিলর কিরণ। ফলে তার প্রতি বিএনপি ও আওয়ামীলীগ ক্ষিপ্ত। কিরণের এই অপরাধযজ্ঞের মদদদাতা ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, ওই সময়ে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও মন্ত্রী মোজাম্মেল হক। তাদের আশ্রয়েই কিরণ বিএনপি ও আওয়ামীলীগের দুই মেয়রকে হটিয়ে প্রায় এক মেয়ার পরিমান সময় মেয়রের চেয়ার দখল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। নিজের পারিবারিক কবরস্থানও দখল করেছেন কিরণ: মুসলমানের মৃত্যু হলে লাশ কবরস্থানে দাফন করা হয়। যে কবরে নিজের লাশ দাফন হবে সেই কবরস্থানের জায়গা দখল করেছেন কিরণ। ড্রেন দখল করায় কবরস্থানের বেশ কিছু কবর এখন ভাসছে বিষাক্ত মূলমূত্রের তরল পানিতে। তাই নতুন কবর খুঁড়তে গেলে কবরের ভেতরে ভেসে উঠে মলমূত্রের তরল পানি। সরেজমিন টঙ্গীর পাগার ও মরকুন এলাকা ঘুরে জানা যায়, কিরণের প্রায় ৫০ বিঘা জমি আছে এই এলাকায়। করবস্থানের জায়গায় তৈরী করা ড্রেনের এক মুখ বন্ধ থাকায় ড্রেনের মলমূত্র সোজা চলে যায় কবরস্থানে। কবরস্থানের অনেক কবর মলমূত্রের বিষাক্ত গন্ধের পানিতে ভাসছে এখন। নতুন কোন কবর খুঁড়তে গেলে সামান্য খুঁড়লেই মলমূত্রের পানিতে ভরে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা মিয়া চাঁন ও চায়ের দোকানী বাবুল মিয়া জানালেন, মরকুন কবরস্থানের প্রায় ২৩ বিঘা জমি আছে। এই জমির অনেক অংশই কিরণ দখল করে নিয়েছে। গোরস্থানের জমিতে নগর হাসপাতালও করেছেন কিরণ। দুই দিকে জমি, ড্রেন ও রাস্তা দখল করে নিয়ে ড্রেনের এক অংশ বন্ধ করে মলমূত্রের পানিতে এখন ভাসছে মরকুন কবরস্থান। অভিযোগ রয়েছে, কিরণ প্রায় ৫০ বিঘা জমি নাম মাত্র মূল্যে ক্রয় করেন। অনেক পরিবারের জমি দখল করার পর কিছু টাকা দিয়ে রেজিষ্ট্রি করেছেন। জোর করে জমি দখল করে নেয়ার অনেক অভিযোগ থাকলেও ক্ষমতার প্রভাবে কোন অভিযোগই হালে পানি পায়নি। এ সকল জায়গা জমির মধ্যে হিন্দুদের জমিও আছে। প্রথমে জমি দখল করে পরে মালিকদের ডেকে এনে কিছু টাকা দিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র। ভুক্তভোগীদের মধ্যে স্থানীয় মীরের বাজার এলাকার বসুগাঁওয়ের বাসিন্দা মোছা: ফাতেমা খাতুন বলেন, দুই বছর আগে কিরণ আমার ১৫ কাঠা জমি দখল করে উইন্ডিকে দেয়। তখন আমি থানায় অভিযোগ করেও কোন বিচার পাইনি। সম্প্রতি আমি আবারো থানায় অভিযোগ করি। টঙ্গীর মরকুন করবস্থান মসজিদের সহকারী ইমাম ও মোয়াজ্জেম কাম কবর নিবন্ধক হাফেজ আকরাম হোসেন বলেন, আমি সিটিকরপোরেশনে চাকুরী করি। এখন প্রায় দশ হাজার কবর আছে এখানে। কবরস্থানের জায়গায় নগর হাসপাতাল, ড্রেন, রাস্তা এসব সিটিকরপোরেশনের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা করেছেন, আমি বাঁধা দিতে পারিনি। প্রসঙ্গত: বাবা স্কুলের দপ্তরী ও ছেলে সাধারণ শ্রমিক আসাদুর রহমান কিরণের নামে বেনামে হাজারো কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। দিশে-বিদেশে একাধিক বাড়ি ফ্ল্যাট, প্লট, খামার ও বাগান বাড়ি রয়েছে। সরকারী-বেসরকারী ও ব্যাক্তি মালিকানাধীন সম্পদ দখলের অভিযোগ প্রতিদিনই আসছে। গত ১৯ নভেম্বর পালিয়ে ভারত যাওয়ার সময় যশোরে বিজিবির হাতে আটক হয়ে তিনি এখন কারাগারে। তার নামে বৈষম্য বিরোধী হত্যা সহ ৯টি মামলা আছে। রবিবার(৮ ডিসেম্বর) কিরণকে গাজীপুর আদালতে আনলে জনতা কিরণকে লক্ষ্য করে জুতা ও ডিম নিক্ষেপ করেন। তারা ঝাডু দিয়ে প্রিজন ভ্যানে আক্রমন করে প্রতিবাদ করেন।