দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া জাতীয় উদ্যান উত্তরবঙ্গের একমাত্র শকুন পরিচর্যা কেন্দ্র। বর্তমানে এখানে তিনটি বিলুপ্তপ্রায় শকুন নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছে। সুস্থ করে সেগুলো কে অবমুক্ত করে দেয়া হবে। বন বিভাগ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে অসুস্থ শকুন উদ্ধার করে এখানে পাঠায়। সিংড়া জাতীয় উদ্যানের বন বিট কর্মকর্তা গয়া প্রসাদ রায় জানান, সম্প্রতি ১৫ ও ২১ ডিসেম্বর দুই দফায় তিনটি অসুস্থ শকুন উদ্ধার করে রংপুর বনবিভাগের মাধ্যমে সিংড়া জাতীয় উদ্যানে হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব শকুন হিমালয় গৃধিনী প্রজাতির। শকুন গুলোকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ করে প্রকৃতিতে ফেরত পাঠানো হবে। পরিবেশ ও বন্য প্রাণী গবেষক কাজী জেনিফার আজমিরী জানান, শীতকালে হিমালয় অঞ্চলে খাবারের সংকটের কারণে হিমালয় গৃধিনী প্রজাতির শকুন অনেক দূর পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে চলে আসে। তবে বড় বড় গাছের অভাব আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খাবারের সংকটে তারা অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং মানুষের হাতে ধরা পড়ে। তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পের আওতায় ২৪৯টি শকুন উদ্ধার ও চিকিৎসার পর প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয়েছে। গত ছয় বছর ধরে উদ্ধার করা শকুনগুলোর পায়ে রিং পড়িয়ে অবমুক্ত করা হ”েছ এবং ২০২২ সালে প্রথম বারের মতো ৩টি এবং ২০২৪ সালে আরো ৩টি হিমালয়ী গৃধিনীকে পরিচর্যার পর স্যাটেলাইট ট্যাগ সংযুক্ত করে অবমুক্ত করা হয়। ট্যাগিং এর তথ্য থেকে জানতে পেরেছি, হিমালয়ে যে অঞ্চলগুলোতে তারা বাসা বাঁধে বা বংশবৃদ্ধি করে বর্তমানে তারা আবাসস্থলে অবস্থান করছে এবং কিছু শকুন চীন, নেপালের হিমালয় অঞ্চলে ফিরে গেছে। গত দুই দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় শকুনের সংখ্যা ৯৯.৯৯% কমে গেছে। বাংলাদেশে আগে সাত প্রজাতির শকুন দেখা গেলেও বর্তমানে দুটি প্রজাতি রয়েছে-আবাসিক শকুন ও বাংলা শকুন। সারা দেশে এই শকুনের সংখ্যা মাত্র ২৬০টি। বাংলাদেশ আইইউসিএন এবং বন বিভাগ সমন্বয়ে আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত আছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শকুনের ভূমিকা অপরিসীম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অমূল্য প্রাণীটিকে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। যথাযথ উদ্যোগ এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা আরও বাড়াতে পারলে আমরা শকুনের বিলুপ্তি ঠেকাতে সক্ষম হব। এই বিলুপ্তপ্রায় পাখিটির সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা অস্বীকার করা যায় না। উদ্ধার হওয়া শকুনগুলো হিমালয় গৃধিনী প্রজাতির।