বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন

পানের বরজগুলো যেন চাষিদের একেকটি ব্যাংক!

মাছুম বিল্লাহ (লালমোহন) ভোলা
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় উৎসবসহ, বিয়ে-শাদী এবং অতিথি আপ্যায়নে এখন ভাতের পর মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে পান। এই পানের রস মানুষের হজমে সহায়তার পাশাপাশি মুখের রুচি বৃদ্ধি করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও সহায়তা করে। এছাড়া বাংলাদেশে পান একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। এই পান চাষ করে দিন দিন স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক চাষি। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাঁশের কাঠি এবং খড়ের ছাউনি দিয়ে ছায়াঘেরা মনোরম পরিবেশের বরজে বেড়ে উঠে পান গাছ। অধিক লাভজনক হওয়ায় ভোলার লালমোহন উপজেলাতেও দিন দিন বাড়ছে পান চাষি। এসব চাষিদের কাছে পানের বরজগুলো যেন একেকটি ব্যাংক। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, লালমোহন উপজেলায় ৬৫ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হচ্ছে। ইউনিয়নের দিক থেকে সর্বোচ্চ পান চাষ হয়েছে লর্ডহার্ডিঞ্জ ও চরভূতা ইউনিয়নে। এসব চাষিরা হাইব্রিড, এলসি, যশোরী, মহানলী, রাজপাহাড় এবং বাংলাসহ বিভিন্ন জাতের পান চাষ করেছেন। লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নমগ্রাম এলাকায় চলতি বছর ১৩৬ শতাংশ জমিতে পান চাষ করেছেন সঞ্জিত সুতার নামে এক চাষি। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে প্রথম ৪০ শতাংশ জমিতে পানের বরজ করি। প্রথম কয়েক বছর ফলন ও লাভ একটু কম হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে পানের চাহিদা বেড়েছে। তাই পর্যায়ক্রমে জমি বাড়িয়ে পানের বরজ বড় করেছি। এ বছর ১৩৬ শতাংশ জমিতে পান চাষ করেছি। বরজে বিভিন্ন জাতের পান রয়েছে। এসব পানে বিভিন্ন সময় রোগ-বালাই দেখা দেয়। তবে কৃষি অফিসের পরামর্শে সেসব রোগ-বালাই থেকে পানকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে থাকি। পান চাষি সঞ্জিত সুতার আরো বলেন, চাষ করা এসব পান জেলার বিভিন্ন বাজারে গিয়ে বিক্রি করি। বিক্রির সময় পান তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এরমধ্যে থাকে ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের পান। সে অনুযায়ী এক বিড়া পান ১০ টাকা, ১০০ টাকা এবং দুইশত টাকায় বিক্রি করি। এভাবে প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টাকার পান বিক্রি করতে পারি। শীতের সময় বাজারে পানের চাহিদা বেশি থাকে। তখন বিক্রিও বাড়ে, আয়ও বাড়ে। এছাড়া পানের বরজ আমাদের কাছে একটি ব্যাংকের মতো, যখন ইচ্ছা হয় তখন এই বরজ থেকে পান বিক্রি করে প্রয়োজন অনুযায়ী আর্থিক চাহিদা পূরণ করতে পারি। নমগ্রাম এলাকার আরেক পান চাষি হরিপদ হাওলাদার জানান, অন্তত ৪০ বছর ধরে পানের চাষ করছি। এ বছর ৫৫ শতাংশ জমিতে আমার পানের বরজ রয়েছে। প্রত্যেক দিনই পানের বরজে সময় দিই। কারণ এই পানের বরজকে ঘিরেই আমাদের সকল আয়-রুজি। নিয়মিত এই বরজ থেকে পান ছিঁড়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। এছাড়া কখনো টাকার খুব দরকার হলে, তাৎক্ষণিক বরজ থেকে পান বিক্রি করে সেই আর্থিক সমস্যা দূর করতে পারি। তবে সরকারিভাবে আমাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলে আমরা এই পানের বরজের আরো বিস্তৃতি করতে পারতাম। তাই আমাদের মতো পান চাষিদের সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি। লালমোহন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আহসান উল্লাহ বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষিরা পানের চাষ করছেন। এই পান চাষের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি যখন প্রয়োজন তখন পান বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারছেন চাষিরা। এসব চাষিদের উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com