ইসলাম মহান আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা। মানবজীবনের যত সুন্দর ও ভালো বিষয় রয়েছে, ইসলাম সেগুলোর লালন করে, প্রচার করে এবং শিক্ষা দেয়। আর যত অন্যায় ও খারাপ বিষয় রয়েছে, ইসলাম তা প্রত্যাখ্যান করে, নিষেধ করে এবং নিরুৎসাহিত করে।
মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাম্য এবং ইনসাফ অতিগুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য বিষয়। সমাজের ভারসাম্য ঠিক রাখতে এবং সুখী-সুন্দর সমাজ গড়তে সাম্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। ইসলাম সেই সাম্য ও ন্যায়পরায়ণতার কথা বলে। ইসলামে অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায় পরায়ণতা, সদাচরণ ও নিকটাত্মীয়দের দান করতে আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অন্যায় ও অবাধ্যতা হতে নিষেধ করেন।’ (সুরা নাহল, আয়াত ৯০) অন্য আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন, ‘আর যখন তোমরা মানুষের মাঝে বিচার করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত ৫৮) এমন অনেক আয়াতেই মহান আল্লাহ ইনসাফ ও সাম্যের নির্দেশনা দিয়েছেন। এর থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে ইসলাম জাতি, বর্ণ বা অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে কোনো ধরনের বৈষম্যের অনুমতি দেয় না। মানবতার নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও অনেক হাদিসে ইনসাফ ও সাম্যের ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘জুলুম কেয়ামতের দিন ভীষণ অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।’ (সহিহ বুখারি ২৪৪) হাদিসে কুদসিতে রাসুল (সা.) মহান আল্লাহর কথা এভাবে ব্যক্ত করেন, ‘হে আমার বান্দাগণ! আমি অবিচারকে নিজের ওপর হারাম করেছি এবং তোমাদের মাঝেও হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের প্রতি অবিচার করো না।’ (সহিহ মুসলিম ২৫৭৭)
এভাবেই মহান আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) মানবজাতিকে সাম্যের সবক দিয়েছেন। সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে বলেছেন। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে এবং সমাজে ধনী-গরিবের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে ইসলাম জাকাত ও সদকার বিধান দিয়েছে। ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার সাব্যস্ত করেছে। ইসলামে সাদা-কালোর কোনো ভেদাভেদ নেই। হজরত বেলাল (রা.)-সহ অনেক কালো বর্ণের মানুষকে নেতৃত্ব ও সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে ইসলাম। মনিব-ভৃত্যের ভেদাভেদ দূর করতে বিদায় হজের ভাষণে রাসুল (সা.) ঘোষণা করেন, ‘তোমরা যা খাবে তোমাদের গোলামদেরও তা খাওয়াবে। যা পরবে, তাদেরও তা পরাবে।’ ইসলাম দাসপ্রথার প্রতি নিরুৎসাহিত করে দাসমুক্ত করাকে অনেক সওয়াব ও পুণ্যের কাজ বলে ঘোষণা করেছে। যে পৃথিবীতে নারী জাতিকে মনে করা হতো কেবল ভোগ-বিলাসের পাত্র, তাদের ছিল না কোনো সামাজিক মর্যাদা, ইসলাম সেই নারী জাতিকে রানীর আসনে বসিয়েছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
ইসলামে রাজা ও প্রজার কোনো ভেদাভেদ নেই। সোনালি সময়ের মুসলিম শাসকরা তাদের গরিব প্রজা ও ভৃত্যের সঙ্গে একই দস্তরখানে বসে খাবার খেয়েছেন। একই বাহনে পাশাপাশি চড়েছেন। এর অসংখ্য নজির রয়েছে ইতিহাসে। অমুসলিমদের অধিকার রক্ষায় ইসলাম বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে মুসলিম-অমুসলিম ইসলামের দৃষ্টিতে সমান। তারা যেন স্বাধীনভাবে তাদেরর্ কর্ম পালন করতে পারে, কারও দ্বারা যেন জুলুমের শিকার না হয়, তাদের জানমালের নিরাপত্তা যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে।