মেলবোর্ন টেস্টে জাসপ্রিত বুমরাহের মতো পেসাররা রিভার্স-স্কুপ করে ছক্কা হাঁকানো দেখে অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন, স্যাম কনস্টাসের কি আসলেই অভিষেক ম্যাচ এটি? যে পরিস্থিতিতে সাধারণত বুক কাঁপার কথা, সেখানে কনস্টাসের বুকভরা সাহস কীভাবে আসলো? এসব প্রশ্নের রেশ ধরেই ব্যাপক আলোচনায় আসেন কনস্টাস। ১৯ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান এই তরুণ যখন মাঠে ভারতের বোলারদের শাসন করছেন, তখন এক পর্যায়ে ধারাভাষ্যকার বলে ওঠেন, কনস্টাসের কোচ একজন বাংলাদেশি। এরপরই বাংলাদেশের গণমাধ্যমের শিরোনাম হতে শুরু করলেন অসি ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত কোচ তাহমিদ ইসলাম। ২০১৭ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলতে বাংলাদেশে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান বড় হওয়া তাহমিদ। যদিও কোনো ম্যাচ খেলেননি তিনি। এরপর আর বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেট ক্লাবে আসেননি। তবে প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে ২৯ বছর বয়সী এই কোচের।
গত শনিবার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘জুমের মাধ্যমে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাহমিদ। প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবই আয়োজন করে এই মিটিং। সেখানে কনস্টাসকে একজন ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তোলা, তার খেলার ধরন নিয়ে কথা বলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া এই কোচ জানান, বর্তমানে দারুণ ফর্মে থাকা ইংল্যান্ডের ব্যাটার হ্যারি ব্রুক তার বন্ধু। সিডনিতে ব্রুকের সঙ্গে একসঙ্গে খেলেছেন। সেখান থেকেই দুজনের সখ্যতা। এরপর বন্ধু ব্রুকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েই কনস্টাসকে গড় তুলেছেন তাহমিদ।
তাহমিদ বলেন, ‘এমন একজন, যাকে আমরা (রেফারেন্স হিসাবে) ব্যবহার করি, সে হলো হ্যারি ব্রুক। আমি ভাগ্যবান যে, তার সঙ্গে সিডনিতে খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। সে (ব্রুক) বিশ্বের এক নম্বর (বর্তমানে ২ নম্বর) টেস্ট ব্যাটার। সে সব ফরম্যাটে দুর্দান্ত খেলোয়াড়। যার সঙ্গে সত্যিই আমার ভালো বন্ধুত্ব। আমি তার কাছ থেকে অনেক তথ্য পাই। যা আমি স্যামের ওপর প্রয়োগ করি। কীভাবে সব ফরম্যাটের মধ্যে সেই কৌশলগুলো কাজে লাগাতে পারি, সেটা চিন্তা করি।’
২০১৩ সালে প্রথমবার কোচের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তাহমিদ। সে সময় ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগে খেলছিলেন তিনি। পেশাদার কাজ করতে গিয়ে এক সময় কনস্টাসের সঙ্গে তাহমিদের পরিচয়। কনস্টাসের সঙ্গে তাহমিদের দেখা হয় ৫ বছর আগে। তখন অস্ট্রেলিয়ান এ তরুণের বয়স মাত্র ১৪। সে সময় সিডনির ক্র্যানব্রুক স্কুলের শিক্ষার্থীদের কোচিং করান তাহমিদ। ওই স্কুলেই ক্রিকেট স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে আসেন কনস্টাস।
তাহমিদ বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে আমি সিডনির পূর্ব শহরতলির ক্র্যানব্রুতে কোচিং শুরু করেছিলাম। সেখানেই স্যাম স্কলারশিপ পেয়েছিল। সেখানেই আমরা প্রাথমিকভাবে দেখা করি। তার বয়স ছিল ১৪ বছর। প্রথম থেকেই আমাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। আমরা স্কুলে কিছু সেশন করেছি।’ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বুমরাহ যেভাবে খেলেছেন কনস্টাস, তাতে মোটেই আশ্চর্য হননি তাহমিদ। কারণ, তিনি জানেন, শিষ্যর মাইন্ডসেট এমনি। কারো বল মোকাবেলা করতে ভয় পায় না কনস্টাস। স্বাধীনভাবে শট খেলতে পছন্দ করে সে।
তাহমিদ বলেন, ‘এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়। অস্ট্রেলিয়া তাকে বেছে নেওয়ার কারণ ছিল ভারতকে ভিন্ন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে ভারতের বিপক্ষে প্রধানমন্ত্রী একাদশের হয়ে সেঞ্চুরি করার সময় স্যাম ভারতীয় বোলিং আক্রমণ চ্যালেঞ্জ করেছে। অনেক স্বাধীনতা নিয়ে খেলেছে। সে উল্টো স্কুপ খেলে। বোলারের মাথার উপর দিয়ে খেলতে খেলতে উইকেটের নিচে দৌড়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্যাম এমন একজন যে কিছু শট খেলবে এবং বোলারদের লেংথ বন্ধ করে দেবে। যা প্রথাগত পদ্ধতির বিপরীত। মারনাস লাবুশেন ও স্টিভ স্মিথ বলছিলেন যে, স্যামের ইনিংস কীভাবে তাদের (খেলার) সুযোগ করে দিয়েছে। প্রথম তিন ম্যাচে স্বাধীনতার যে অভাব ছিল, তার এবার পূরণ হয়েছে অনেকটাই।’