ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের শত্রুতা নতুন নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই দ্বন্দ্বে লিপ্ত দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী। একাধিকবার যুদ্ধেও জড়িয়েছে তারা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের পরিবর্তে গুপ্তহত্যার কৌশল নিয়েছে ভারত। এমন অন্তত আধা ডজন হত্যাকা-ের তথ্য বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) পরিকল্পিত এসব গুপ্তহত্যাকে ‘ছায়াযুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেছেন পাকিস্তানের কর্মকর্তারা।
গত বছরের এপ্রিলে লাহোরে মুখোশধারী বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন আমির সরফরাজ ওরফে তাম্বা। তার অনেক পুরোনো শত্রু ছিল। এই গ্যাংস্টার ২০১১ সালে লাহোরের একটি কারাগারে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত অবস্থায় একজন ভারতীয় গোয়েন্দাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তবে তিনি পরে মুক্তি পান এবং অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ধারণা করে, পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) কারাগারের ওই হত্যাকা-ের জন্য তাম্বাকে নিয়োগ করেছিল। অবশেষে ১৩ বছর পর তাম্বাকে হত্যার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হয়।
এর পরপরই পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি সাংবাদিকদের জানান, সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি হত্যাকা-ের পেছনে ‘ভারতের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার’ লক্ষণ পাওয়া গেছে। তাম্বার ঘটনাটিও একই রকম বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মোহসিন নাকভি বলেন, আমাদের কাছে বেশ কয়েকটি প্রমাণ রয়েছে যা দেখায়, সাম্প্রতিক হত্যাকা-গুলো একই পরিকল্পনার অংশ। তিনি দাবি করেন, ২০২১ সাল থেকে পাকিস্তানে একাধিক গুপ্ত হত্যায় ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে।
এই হত্যাকা-গুলোর লক্ষ্যবস্তু ছিলেন মূলত পাকিস্তানের লস্কর-ই-তাইবা ও জইশ-ই-মোহাম্মদ সংগঠনের নেতারা, যাদের ভারতীয় সেনা বা সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলার জন্য দায়ী করা হয়েছিল।
এছাড়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে যে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, সেই হরদীপ সিং নিজ্জার এবং গুরপতওয়ান্ত পান্নুনকেও সন্ত্রাসী বলে মনে করতো ভারত।
মোদী জমানায় বেড়েছে গুপ্তহত্যা
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পুনর্র্নিবাচিত হওয়ার দুই বছর পর, ২০২১ সাল থেকে এ ধরনের গুপ্তহত্যা বেড়ে গেছে।
ভারত ২০১৯ সালে একটি কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইন পাস করার পর দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনোনীত সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা প্রকাশ করা শুরু করে। তালিকাটি মাঝে মধ্যেই হালনাগাদ করা হয়। ওয়াশিংটন পোস্ট পর্যালোচনা করে দেখেছে, বর্তমানে ভারতের ওই তালিকায় থাকা ৫৮ জনের মধ্যে ১১ জনকেই ২০২১ সাল পর থেকে হত্যা অথবা লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি আরও অন্তত ১০ ব্যক্তির তথ্য পেয়েছে, যারা মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় ছিলেন না, কিন্তু ভারত কর্তৃক জঙ্গিবাদের অভিযোগ ছিল, তারাও একইভাবে মারা গেছেন। খুব কাছ থেকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের চালানো গুলিতে প্রাণ হারান তারা।
পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারত এ ধরনের হত্যাকা-গুলোতে পাকিস্তানি অপরাধী ও আফগান ভাড়াটেদের ব্যবহার করেছে। তাদের দাবি, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’ এসব গুপ্তহত্যার জন্য স্থানীয় অপরাধী ও বিদেশি ভাড়াটেদের দিয়ে কাজ করায়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দুবাইয়ের ব্যবসায়ীদের নিয়োগ দেওয়া হয় এবং অর্থ স্থানান্তরের জন্য হাওলা ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
ভারত এই অভিযোগের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে এবং এর মাধ্যমে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি হচ্ছে বলে তারা সতর্ক করেছেন।