ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার তৃতীয় দিনে তীব্র শীত উপেক্ষা করে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দিন, ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের তেমন উপস্থিতি না থাকলেও তৃতীয় দিন সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় সকাল থেকেই অনেক ক্রেতা ও দর্শনার্থী আসতে শুরু করেছেন।
গতকাল শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ঢাকার পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিসিএফসি) অনুষ্ঠিত ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ১০টার দিকে গেট খোলার পরপরই মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে।
মেলায় আসা দর্শনার্থীরা জানায়, ‘প্রথম দিকে শুধু স্টলগুলো ঘুরে দেখার জন্য আসছেন, কেনাকাটা শুরু হবে মাঝামাঝি সময় থেকে।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণা। তবে মেলা পুরোপুরি জমে উঠতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েক দিন। এখনো অনেক স্টলে সাজসজ্জার কাজ শেষ হয়নি। সব স্টলে কাজ শেষ হলে মেলার সৌন্দর্য ও দর্শনার্থী আরো বৃদ্ধি পাবে।’
মেলায় প্রবেশ টিকিট ইজারাদার ‘ডিজি ইনফোটেক লিমিটেডের, হেড অফ অপারেশন এস এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এখন ঢাকায় বেশ শীত পড়ছে। ঘন কুয়াশা আর শীত উপেক্ষা করে ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা মেলায় আসছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কারণে এবার ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশাবাদী তিনি।’
মেলার আয়োজক সংস্থা রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রাণালয় মেলাকে প্রাণবন্ত ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) আব্দুর রহিম খান বলেন, ‘মেলা এলাকায় ধুলোবালির সমস্যা সমাধানে প্রতিনিয়ত পানি দেয়া হচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নিয়মিত কাজ করছেন। গত বছরের তুলনায় এবার পরিবেশ অনুকূলে থাকায় কেনা-বেচার ধুম পড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘মেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সাত শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গেট ইজারাদারের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দল কাজ করবে।’
ঢাকার নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের ৪ নম্বর সেক্টরের স্থায়ী ভেন্যু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টারে চতুর্থবারের মতো বসেছে এই বাণিজ্য মেলা। এবার মেলার প্রধান প্রবেশদ্বার জুলাইয়ের স্মৃতির আদলে তৈরি করা হয়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, এবার বাণিজ্য মেলায় বিশ্বের সাতটি দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠানসহ থাকছে মোট ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন। মেলায় ই-টিকিটের ব্যবস্থা থাকায় প্রবেশপথে রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা।
মেলায় থাকছে ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন
মেলায় প্রথমবারের মতো অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল বা প্যাভিলিয়ন স্পেস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে বিশেষ ছাড়ে উবার সার্ভিস। কুড়িল-বিশ্বরোড থেকে ৩৫ টাকা ও ভুলতা-গাউছিয়া থেকে ২০ টাকা ভাড়ায় দর্শনার্থীরা মেলায় যাতায়াত করতে পারবেন।
মেলায় সম্ভাবনাময় সেক্টর বা পণ্যভিত্তিক সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এ বছর। বিদেশী উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে থাকছে স্বতন্ত্র সোর্সিং কর্নার, ইলেক্ট্রনিক্স ও ফার্নিচার জোন। বয়সভিত্তিক দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে প্রযুক্তি কর্নার, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার। শিশুদের নির্মল চিত্তবিনোদনের জন্য মেলায় থাকছে শিশু পার্ক।
এছাড়া ব্যাংকিং লেনদেনের জন্য থাকছে ইসলামি ব্যাংক, ডাচ্ বাংলা ও সোনালী ব্যাংকের একাধিক বুথ। মেলার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ২৩৪টি সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি থাকছে ৫ টি ওয়াচ টাওয়ার।
মেলা মাসব্যাপী সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে চলবে সকাল ১০টা থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রবেশ মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা এবং শিশুদের (১২ বছরের নিচে) ক্ষেত্রে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।