মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
পটিয়ায় পাউবোর প্রকল্পে শত কোটি টাকা লোপাট তাড়াশে ব্রিজের রড বিক্রির অভিযোগ এলজিইডির বিরুদ্ধে দীর্ঘ ১৭ বছর পরে নড়াইলের কালিয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন ফটিকছড়িতে বহিষ্কৃত হাবিবুল্লাহ আজাদী কর্তৃক মাদ্রাসা দখলের চক্রান্তের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের দাবিতে কালীগঞ্জে লিফলেট বিতরণ শেরপুরের আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক মনি পেলেন বর্ষসেরা ফটোগ্রাফারের পুরস্কার কয়রায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মাঝে হাঁস-মুরগীর খাদ্য বিতরণ লালমোহনে জাটকা বিক্রির দায়ে দুইজনকে অর্থদন্ড সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের হোছাইনিয়া মাদ্রাসা মাঠে কৃষক সমাবেশ কমলগঞ্জে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে জমে উঠেছে মাছের মেলা

নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্পের শ্রীমঙ্গল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নানা অনিয়মের অভিযোগ

এহসান বিন মুজাহির (শ্রীমঙ্গল) মৌলভীবাজার
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় মহিলা সংস্থা কতৃক পরিচালিত তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্পের শ্রীমঙ্গল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। ওই প্রকল্পের শ্রীমঙ্গল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্যারা (অস্থায়ী) প্রশিক্ষক দিয়ে কোর্স পরিচালনা, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও
ক্লাসে প্রশিক্ষণ কর্মকর্তাসহ শিক্ষকদদের ইচ্ছেমতে আসা-যাওয়া, শ্রেণিকক্ষে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব-নিকাব মাস্কপড়া নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, নেকাবকে গরুর খাম্বার সাথে তুলনা করা, হিন্দু ধর্মের একটি ধর্মীয় উৎসবকে ‘উদ্ভট পূজা’ বলে মন্তব্য, নিকাব খুলে শ্রেণিকক্ষে না আসলে মৌখিক পরীক্ষায় ফেইল করানো, একজন প্রশিক্ষণার্থীকে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে একাধিক ট্রেডে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়াসহ নানা ধরণের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগি প্রশিক্ষনার্থী ও নারী উদ্যোক্তারা। শ্রীমঙ্গল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ও আরাফাতুর রহমান ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ট্রেডের প্রশিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন, প্রশিক্ষক সুমাইয়া আক্তার এর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলেন ভুক্তভোগি প্রশিক্ষনার্থী ও নারী উদ্যোক্তারা। জানা যায়, তৃণমূলের অসহায়, গরিব, বিধবা বা বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে পড়া নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত জাতীয় মহিলা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আছকির মিয়ার বাসার চতুর্থ তলায় ইন্টেরিয়র ডিজাইন এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট, বিউটিফিকেশন, ফ্যাশন ডিজাইন, ক্যাটারিং এবং বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড ই-কমার্স এই ৫টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে। এসব প্রশিক্ষণের জন্য অনলাইনে আবেদনের পর মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থী যাচাই-বাছাই করা হয়। কিন্তু এই অফিসে অনলাইনে আবেদন এবং ভাইভা পরীক্ষা ছাড়াই একাধিক শিক্ষার্থীকে অনিয়মের মাধ্যমে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন একাধিক প্রশিক্ষণার্থী। ভাইভা পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিসহ ৪ জন ভাইভা বোর্ডে থাকার নিয়ম থাকলেও তাদের অনুপস্থিতিতে তৃণমূলের নিজস্ব লোক দ্বারা ভাইভা গ্রহণ করে নিজস্ব লোকজনকে অনিয়মের মাধ্যমে প্রশিক্ষার্থী বাছাই করে আসছে। এমনকি নারী উদ্যোক্তাদের অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন বলেও অভিযোগ করেছেন একাধিক নারী উদ্যোক্তা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই প্রশিক্ষণে একজন প্রশিক্ষণার্থী যে কোনো একটি ট্রেডে শুধুমাত্র একবার প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। কিন্তু সেখানে প্রশিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ট্রেডের প্রক্সি প্রশিক্ষক সুমাইয়া আক্তার স্বজনপ্রীতি আর অর্থের বিনিময়ে নিজস্ব লোকজনকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে একাধিকবার প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাহেলা আক্তার নামের একজন প্রশিক্ষণার্থী ২০২১ সালে ইন্টেরিয়র ডিজাইন এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট এবং ক্যারাটিং কোর্সে ২ বার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। পূর্ণিমা নামের অপর এক প্রশিক্ষনার্থী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৩ বার। এছাড়াও বেশ কয়েকজনকে বিভিন্ন ট্রেডে একাধিকবার প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ করে দেন তিনি। এভাবে ওই প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণের প্র্যাকটিকালের জন্য আসা বরাদ্দ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইন্টেরিয়র ডিজাইন এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট কোর্সের ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রশিক্ষণার্থী মোছা. রওনক রাদিয়া নাঈমা বলেন, ‘আমি জুন মাসে আবেদন করি। জুলাই মাসের ১৫-১৬ তারিখে আরাফাতুর রহমান আমাকে প্রশিক্ষণের জন্য ডাকেন। এরইমধ্যে আমাদের ব্যাচের ৭টি ক্লাস শেষ হয়ে যায়। আরাফাতুর রহমান আমাকে ডাকার পর আমি অফিসে গেলে তিনি আমাকে পরদিন থেকে ক্লাসে যেতে বলেন। আমাদের ক্লাস বেলা ২ টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ক্লাস হবার কথা। আমরা ২টার মধ্যে ঠিকই যাইতাম আর ৪টা পর্যন্ত বই থাকতাম। তোফাজ্জল স্যার আমাদের ট্রেডের টিচার তাইন কোনদিন একটানা ক্লাসে আছলা না। তখন খুব বেশি গরম আছিল। স্যার ক্লাসে থাকতা না। আমরা গরমের মধ্যেও ৪টা পর্যন্ত বই থাকতাম। আমাদের ক্লাসে প্রতিদিন ১৬-১৭ জন প্রশিক্ষণার্থী থাকলেও ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে ৬ আগস্ট ক্লাস বন্ধ আছিল। ৭ আগস্ট থেকে ক্লাস স্টার্ট অইছে। ওইদিন স্যার আমাদের বলেন, আপনাদের মধ্যে এমন কেউ আছে নি যারা এপ্লাই করছে এরা এখনো ক্লাস করতে চায়। পরে আমি কইলাম যে আছে একজন। পরে আমরা আরো কয়েকজনের নাম দিলে তারা ২৫ জনের ব্যাচ ফিলাপ করে। এর আগে আমি আরেকটি ট্রেডে প্রশিক্ষণ নেই। সেখানেও ২৫ জন আছিল না। আমরা যে ৮০ দিনের ক্লাস করলাম সেখানে তারা একটা সুতাও কাইট্টা দেখাইছে না। আরাফাত স্যার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা তিনি মাঝে-মধ্যে আইতা, খুব বড় বড় মাততা। তাইন ক্লাসে আমরা সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন। একদিন তাইন আমরার ক্লাসে আইয়া কইন আপনারা যে এগুলা নেকাব, মুখোশ ও মাস্ক পরেন এগুলো আমার ভাষায় গরুর খাম্বা। নেক্সট টাইম এগুলা পরয়া আইবা তারারে আমি ভাতা দিতাম না। প্রায় সময়ই তাইন আমরা সাথে খারাপ ব্যবহার করতা। তোফাজ্জল স্যার বিহেভিয়ার সব স্টুডেন্টের সাথে খারাপ আছিল। আমরা স্যারকে রিকোয়েস্ট করছি কিছু একটা হলেও আমাদের শিখাইতা। কিন্তু তারা জানান, দেশের পরিস্থিতি খারাপ, প্রাকটিক্যালের টাকা আইছে না। আমরা সব সময় ক্লাস করছি ২৪ জন। একজন প্রশিক্ষণার্থী ফাতেমা আক্তার তাইন ক্লাসে আইতা না। কিন্তু মেইন শিটে তাইনের নাম থাকতো। প্রীতি নামের একটি মেয়ের কাছ থেকে ২০০ টাকা নিছইন ভর্তি বাবদ। এরকম আরো অনেকেই আছেন অন্যান্য ট্রেডের। বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড ই-কমার্স ট্রেডের সকালের ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেজাবিন আক্তার বলেন, প্রশিক্ষক তোফাজ্জল স্যার প্রতিদিনই ক্লাসে লেট করে আসতেন। এছাড়া ক্লাসে সুমাইয়া আক্তার ম্যাডাম ক্লাসে গিয়ে আমাদের সাথে উল্টা-পাল্টা কথাবার্তা কইন। পার্সোনাল কথাবার্তা কইন, প্রেম করেনি এমন কথাবার্তা কইন। আমাদের ক্লাসের ম্যাডাম প্রত্যেকদিন আমরার সিগনেচার শিটের মধ্যে তাইন সিগনেচার করতা। পরে দেখলাম লাকি আক্তারের জায়গায় তাইন সিগনেচার করতা। ওই লাকি আক্তার আমাদের ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী। আমরা ক্লাসে না গিয়ে এবসেন্ট দেয়া থাকতো। আর লাকি আক্তার কোনদিনই ক্লাসে না আইলেও তার সিগনেচার দেয়া থাকতো। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় তাইন আমারে ধমকা-ধামকি করতেন। তাইন উল্টাপাল্টা পরাইতা, তাইন প্রক্সি টিচার। বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড ই-কমার্স ট্রেডের সকালের ব্যাচের শিক্ষার্থী রিমি বর্ধন বলেন, ‘আমাদের ক্লাস নেয়া হতো প্রক্সি টিচার দিয়ে। ক্লাসে আসলে তিনি অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বলতেন। ক্লাসে বসে তিনি ফোন নিয়ে বসে করতেন। ভিডিও কলে তিনি আমাদের শিক্ষার্থীদের দেখাতেন। উনি ক্লাসে যা পড়াতেন তা অনেকটা ভুল পড়াতেন। আমাদের ব্যাচের ক্লাস শেষের দিকে ম্যাডামের এক্সাম চলছিল। সে সময়ে আরাফাত স্যার আমাদের ক্লাস নিতেন। একদিন ক্লাসে আরাফাত স্যার আমাদের ধর্ম নিয়ে নানাবিদ কথাবার্তা বলেন। তিনি বলেন, আপনিতো হিন্দু। আপনাদেরতো বারো মাসে তের পূজা। কিছুদিন পূর্বে আপনাদের একটি ‘উদ্ভট পূজা’ গেছে না? আমি এর প্রতিবাদ করে বলি স্যার আমাদেরতো উদ্ভট পূজা নামে কোন পূজা নেই। আপনি এই পূজার নামটি বলেন, আমিও জেনে রাখি। পরে স্যার বলেন, না থাক এটা আর লাগবে না, এইটা বলার আর দরকার নাই। উদ্ভট পূজা হয় সেটা আপনাকে মানতে হবে। হতে পারে আমি অন্য ধর্মের, কিন্তু আমার ধর্ম নিয়ে এভাবে কথা বলার অধিকার তার নেই। বিউটিফিকেশন ট্রেডের প্রশিক্ষণার্থী সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, আমি চা বাগানের মেয়ে। ২০২১ সালে আমি বিউটিফিকেশন ট্রেডে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। পরে আমি ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে উদ্যোক্তা মনোনীত হই। সরকারের মাধ্যমে আমাদের তিনটা দোকান দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে আমারও একটি দোকান আছে। প্রতি মাসে সরকারের পক্ষ থেকে দোকান ভাড়া বাবদ ২৫ হাজার টাকা করে আসে। কিন্তু দোকান ভাড়া দেয়া হয় ২০ হাজার করে। বাকি ৫ হাজার টাকা কই যায়? সরকার আমার বিউটি পার্লার বাবদ অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়া হলো। কিন্তু দোকানটি একটি লাইট ও একটি ফ্যান দিয়ে চালাতে হয়। আমার একটা কাষ্টমার আসলে লাইটিং ব্যবস্থা না থাকলে আমি পার্লার চালাবো কিভাবে? আমার পক্ষ থেকে স্যারকে বারবার বলার পরও তিনি কোন গুরুত্ব দেননি। জয়ীতা এওয়ার্ডপ্রাপ্ত উদ্যোক্তা রাহেলা আক্তার বলেন, ‘আমি ২০২১ সালে প্রথম প্রশিক্ষণ নেই ইন্টেরিয়র ডিজাইন এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোর্সে। প্রশিক্ষণ নেয়ার পর সেখানে তৎকালীন জীবন স্যার আমাকে উদ্যোক্তাতে নাম দেয়ার জন্য বলেন। এর বছর পর লিস্টে আমার নাম আসে। অন্যান্য উদ্যোক্তার নামও আসে। তবে তাদের নাম বাদ দিয়ে আমাকে রাখেন। পরে আমাদের বলা হয় ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা দেয়া হবে। ইলেকট্রিক বিল, দোকান ভাড়া তারা দেবেন। বিউটি পার্লারের জন্য বরাদ্দ আসে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার, দোকান ভাড়া ৮ হাজার, ফুড কর্ণারের জন্য আসে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার, দোকান ভাড়া ৯ হাজার এবং দর্জি ও ইন্টেরিয়ার ডিজাইন বাবদ আসে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার, দোকান ভাড়া ৮ হাজার। খালেদ স্যার বদলী হবার পর আসেন প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আরাফাতুর রহমান। তিনি যোগদান করার পর দোকান উদ্বোধন করার পর আমরা ৫৩ হাজার টাকা পাই। আমরা জানি না আমাদের দোকানের ভাড়া কত? সিকিউরিটি কত? আমাদের পরে আমাদের দোকানের ভাড়া বাবদ ১৫ হাজার টাকার চেক দেয়া হয়। আনুমানিক ৭ হাজার টাকার মতো সুতা, সুই, বক্রম ইত্যাদি কিনে দেয়া হয়। স্যারের সাথে সম্পর্ক থাকলেও একেক জন ৩-৪ টা পর্যন্ত ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। তবে নিয়মানুযায়ী একজন একটি ট্রেডে অংশ নেয়ার কথা। তিনটি দোকানে ২০ জনের গ্রুপ। আমার দোকানের গ্রুপের ১০ জন ৫ হাজার ৩শ টাকা করে ৫৩ হাজার টাকা পেয়েছি। তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের দোকানের তত্ত্বাবধায়ক মুরাদ হোসেন বলেন, ‘প্রকল্পের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আরাফাতুর রহমান আমাকে প্রস্তাব করেন দোকানের ভাড়া যা দেই তার থেকে ৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে লিখে দেবেন। আমি জবাব দিয়েছি এ ধরণের দুই নাম্বারী আমি করি না। আমার সাথে তাদের দুই বছরের চুক্তি। আমার তিনটা রুম তারা ভাড়া নিয়েছেন। কোন ধরণের সিকিউরিটিও নেইনি আমি। আমার এখানে তিনটা রুম ভাড়া হলো ২০ হাজার টাকা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে তারা ভাড়া দিতে গড়িমশি করছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমি প্রশিক্ষক মার্জিয়া আক্তারের প্রক্সি হিসেবে কাজ করছি। আমি ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে এখানে আছি শিক্ষক হিসেবে। আমার জানামতে মার্জিয়া আক্তার এক-দেড় বছর যাবত অনুপস্থিত। আমার সেলারি মার্জিয়া আক্তারের নামে আসে। মোট বেতন ২২ হাজার টাকার উপরে। তিনি আমাকে প্রতি মাসে ১০ হাজার ৯ শত টাকা দেন। বাকি টাকা তিনি নিয়ে যান।’ শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিতি থাকলেও শিটে স্বাক্ষরের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটি ভুল তথ্য। আমি কোন স্বাক্ষর দেইনি। এটি শিক্ষার্থীদের ভুল ধারনা। এ রকম কোন চিটিং আমরা করি না। ক্লাসে অপ্রাসঙ্গিক কথা বার্তার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। আমি আসার পরে ৮টি ব্যাচ শেষ করছি। কোন ব্যাচ থেকে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই। শুধু এই ব্যাচেই অভিযোগ। প্রতি ট্রেডে সকাল ও বিকেলের ব্যাচে ২৫ জন করে মোট ৫০ জন প্রশিক্ষণ নেন। শিক্ষক তোফাজ্জল বলেন, ‘আমার ব্যাপারে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে এসব সত্য নয়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিলেও আমরাতো আর তাদের ব্যাপারে কোন অভিযোগ দিতে পারি না। যেহেতু আমরা শিক্ষক সেহেতু আমরা তাদের একটু শাসন করি। যারা নিয়ম মানে না, উশৃঙ্খলা করে তাদের একটু শাসন করলেই আমাদের অপরাধ! প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আরাফাতুর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগ সত্য নয়। আমাদের নিয়োগকৃত ৫ জন শিক্ষক আছেন এবং তারা এক্টিভ আছেন। আমাদের ব্যবসা বণিজ্য করার জন্য উদ্যেক্তা আছেন। ২০ জন উদ্যোক্তাদের জন্য প্রতি জনে ১৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। আমাদের আবেদন ফরম ফি নেই। তবে কেউ যদি আবেদন ফরম প্রিন্ট করে দেয় বা লিখে দেয় তবে ৫০ থেকে ৮০ টাকা নিতে পারে। তবে ২০০ টাকা নেয়ার কথা নয়। হয়তো মিস হতে পারে যে কোন ভাবে। শ্রেণিকক্ষে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব-নিকাব মাস্কপড়া নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, নেকাবকে গরুর খাম্বার সাথে তুলনা করা, হিন্দু ধর্মের একটি ধর্মীয় উৎসবকে ‘উদ্ভট পূজা’ বলে মন্তব্য, নিকাব খুলে শ্রেণিকক্ষে না আসলে মৌখিক পরীক্ষায় ফেইল করানো হবে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি ক্লাসে ভাই হিসেবে হোক, গার্জিয়ান হিসেবে হোক মুখোসটা একটু খোল। আমি তোমাকে একটু চিনি। আমারতো দেখার অধিকার আছে, যেতেহু তুমি স্টুডেন্ট তাই তোমাকে চেনা প্রয়োজন। যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে আমি এ রকমভাবে কখনোই কাউকে বলি নাই। আমি যথেষ্ট পলাইরাইডভাবে মানুষের সাথে কথা বলি। সব স্টুডেন্টকে এক চোখে দেখি। আমরা কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করি না। উদ্ভট পূজা আমি বলেছি কিনা মনে পরছে না। আমি এ রকম বলার কথা না। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি স্বাক্ষরের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। হয়তোবা কোন শিক্ষক এটি করতে পারে। আমার জানা নেই। স্টুডেন্টদেরও অনেক সমস্যা, কেউ অসুস্থ্য, কারো বাচ্চা নিয়ে সমস্যা, কেউ মারা গেছে এভাবে অজুহাত দেখিয়ে অনেক সময় স্টুডেন্টরা ক্লাস ফাকি দেন। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন দৈনিক খবরপত্র-কে বলেন, ‘আপনার মাধ্যমে প্রকল্পটির অবস্থা জানলাম। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। প্রকল্পে কোন অনিয়ম-দুর্নীতি হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অনিয়মের বিষয়গুলো নিয়ে অবগত আছি। এখানে দুর্নীতি হচ্ছে তা আমার জানা আছে। কিন্তু এ প্রকল্পে আমাকে কোন দায়িত্বে রাখেনি, বর্তমানে আমার কোন পাওয়ার নেই। ডিসি স্যারের সাথে কথা বলেন। তিনি এ প্রকল্পেরর চেয়ারম্যান।’ জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, নাম ও তথ্য দেন আমি খোঁজ নিয়ে দেখি কি ব্যবস্থা নেয়া যায়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com