রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:০২ অপরাহ্ন

সংবাদ প্রচারে ইসলামের নির্দেশনা

মো: যোবায়েরুল ইসলাম
  • আপডেট সময় রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ইসলামের দৃষ্টিতে সংবাদ প্রচার একটি অত্যন্ত দায়িত্বশীল কাজ। সঠিক ও যাচাই করা তথ্য প্রচারের মাধ্যমে সমাজে শান্তি, সুবিচার এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য। ইসলামে মিথ্যা, অপপ্রচার এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা সংবাদ প্রচারে সতর্কতার নির্দেশ দিয়েছেন।
সংবাদ যাচাইয়ের নির্দেশনা : মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন : ‘হে ঈমানদারগণ! যদি কোনো ফাসিক লোক তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তা যাচাই করে দেখো, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত না করে বসো এবং পরে তোমাদের নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে না হয়।’ (সূরা হুজুরাত : ৬)
এই আয়াতটি সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে একটি স্পষ্ট নীতিমালা প্রদান করে। সংবাদ পরিবেশনের আগে তার সত্যতা যাচাই করা অপরিহার্য। কারণ মিথ্যা বা অসম্পূর্ণ সংবাদ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে এবং সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সতর্কতা : রাসূলুল্লাহ সা: মিথ্যা প্রচারের বিষয়ে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন : ‘একজন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তা যাচাই না করে অন্যকে বলে দেয়।’ (মুসলিম : ৫)
হজরত আয়েশা রা:-এর ঘটনা একটি দৃষ্টান্ত : ইসলামের ইতিহাসে সংবাদ প্রচারে সতর্কতার গুরুত্ব বোঝাতে হজরত আয়েশা রা:-কে নিয়ে মিথ্যাচারের ঘটনাটি একটি শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত। মুনাফিকরা তাঁর বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে মদিনায় এ বিষয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে মহান আল্লাহ হজরত আয়েশার রা: নির্দোষ হওয়ার বিষয়ে আয়াত নাজিল করেন : ‘যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই মধ্যে একটি দল। তোমরা এটিকে নিজেদের জন্য ক্ষতিকর মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে তাদের কৃতকর্মের শাস্তি। আর তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ বিষয়ে মূল ভূমিকা পালন করেছে, তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সূরা নূর : ১১)
এ ঘটনাটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মিথ্যা তথ্য প্রচার কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি করে না, বরং এটি পুরো সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ইসলামের শিক্ষা : আজকের ডিজিটাল যুগে সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, নিউজ পোর্টাল এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়ানোর ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এর ফলে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইসলাম আমাদের শেখায় যে, সংবাদ প্রচারের আগে অবশ্যই তার সত্যতা যাচাই করতে হবে। বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং সঠিক তথ্য প্রচারে ভূমিকা রাখা প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব।
দায়িত্বশীল সংবাদ প্রচারের গুরুত্ব : ইসলামে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে ইসলামে দায়িত্বশীলতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সত্য এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সংবাদকেমাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘তোমরা ন্যায়বিচারের সাক্ষ্য দাও এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা প্রতিষ্ঠা করো, যদিও তা তোমাদের নিজেদের, পিতা-মাতার বা আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয়।’ (সূরা নিসা : ১৩৫)
রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবন থেকেও আমরা দায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনের শিক্ষা পাই। যখন তিনি সংবাদ প্রচার করতেন, তা সর্বদা যাচাই করতেন। একবার একটি ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার কারণে তিনি বলেন : ‘মুমিন কখনো মিথ্যা বলতে পারে না।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৩১৫৪)
সংবাদ প্রচারে আমাদের করণীয় :
১. তথ্য যাচাই করে নিশ্চিত করা, ২. বিভ্রান্তিকর তথ্য থেকে বিরত থাকা, ৩. নৈতিকতা ও সততার সাথে সংবাদ পরিবেশন করা, ৪. ব্যক্তিগত বা সামাজিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে সংবাদ প্রচার না করা, ৫. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা।
ইসলামের নির্দেশনা অনুসরণ করে সঠিক, যাচাই করা এবং দায়িত্বশীলতার সাথে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে একটি ন্যায়নিষ্ঠ, শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আমাদের উচিত, আল্লাহর নির্দেশনা ও রাসূল সা:-এর শিক্ষার আলোকে সংবাদ প্রচারকে দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করা। কারণ, সঠিক সংবাদ শুধু সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে না, এটি একটি উন্নত জাতি গঠনেরও অন্যতম মাধ্যম। লেখক : প্রভাষক, সাতক্ষীরা আলিয়া কামিল মাদরাসা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com