রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন

জুলাই অভ্যুত্থান এবারের বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে: প্রধান উপদেষ্টা

খবরপত্র প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল ১ লা ফেব্রুয়ারি বিকেলে অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ এর উদ্বোধন করেছেন। এ উপলক্ষে ঢাকায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় নিয়ে এসেছে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার ইস্পাত কঠোর প্রতিজ্ঞা। তাই মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত অভ্যুত্থান এবারের বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে। তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতির ঘাড়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে।
জুলাইয়ে ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে যে সকল দুঃসাহসী ছাত্র-জনতা-শ্রমিক প্রাণ দিয়েছেন এবং নির্মমভাবে আহত হয়েছেন তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন অধ্যাপক ইউনূস। এবারের অমর একুশে বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বরাবরই একুশে মানে জেগে উঠা। একুশে মানে আত্মপরিচয়ের সাথে মুখোমুখি হওয়া। একুশে মানে অবিরাম সংগ্রাম। নিজের পরিধিকে আরও অনেক বাড়িয়ে নেয়া। এবারের একুশের প্রেক্ষিত আমাদেরকে নতুন দিগন্তে প্রতিস্থাপন করেছে।’ অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, একুশ আমাদের মূল সত্তার পরিচয়। একুশ আমাদের ঐক্যের দৃঢ় বন্ধন। এই বন্ধন ছোট-বড়, যৌক্তিক-অযৌক্তিক, ক্ষণস্থায়ী-দীর্ঘস্থায়ী সকল দূরত্বের ঊর্ধ্বে। এজন্য সকল প্রকার জাতীয় উৎসবে, সংকটে, দুর্যোগে আমরা শহীদ মিনারে ছুটে যাই। সেখানে আমরা স্বস্তি পাই। শান্তি পাই। সমাধান পাই। সাময়িকভাবে অদৃশ্য ঐক্যকে আবার খুঁজে পাই। একুশ
আমাদের মানসকে এভাবে তৈরি করে দিয়েছে। একুশ আমাদের পথ দেখায়। একুশ আমাদের জাগিয়ে তোলে।
মাত্র ছয় মাস আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান জাতিকে এক ঐতিহাসিক গভীরতায় ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘ যার কারণে আমরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং মানবিক দিক থেকে বিধ্বস্ত এক দেশকে দ্রুততম গতিতে আবার অভীষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে নিজেদের তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি নিতে সাহস খুঁজে পেয়েছি।’ তিনি বলেন, একুশের টান বয়সের ঊর্ধ্বে। প্রজন্মের ঊর্ধ্বে। একুশের টান প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্তৃত হয়েছে শুধু তাই নয়, এই টান গভীরতর হয়েছে। আমাদেরকে দুঃসাহসী করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। দুঃস্বপ্নের বাংলাদেশকে ছাত্র-জনতা নতুন বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। আমাদের তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী রাস্তার দেয়ালে দেয়ালে তাদের স্বপ্নগুলো, তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো, তাদের দাবিগুলো অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় এঁকে দিয়েছে। আমাদের রাস্তার দেয়াল এখন ঐতিহাসিক দলিলে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। এগুলোর স্থান এখন আমাদের বুকের মধ্যে এবং জাদুঘরে হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বরকত, সালাম, রফিক, জব্বারের বুকের রক্তে যে অঙ্গীকার মাখা ছিল তাতে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহা বিস্ফোরক শক্তি। অর্ধ শতাব্দী পর এই মহাবিস্ফোরণ গণঅভ্যুত্থান দেশকে পাল্টে দিয়েছে। এই বিস্ফোরণ আমাদের মধ্যে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় গ্রোথিত করে দিয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের প্রতিজনের সত্ত্বায় এই প্রত্যয় গভীরভাবে গ্রোথিত। অমর একুশের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যয়ে শপথ নিতে এসেছি।
বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ক্রমেই এর গুণগত ও আয়োজনগত বিবর্তন হতেই থাকবে। বইমেলায় হাজির করার জন্য লেখক-লেখিকারা সারা বছর প্রস্তুতি নিতে থাকেন যথাসময়ে নিজ নিজ বই সমাপ্ত করার জন্য। প্রকাশকরা অনেক আয়োজন করেন নিজেদের বইগুলো যথাসময়ে হাজির করার জন্য, গুণগত প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করার জন্য এবং আগ্রহ বাড়ানোর জন্য প্রতিবছর বিষয়ভিত্তিক ‘সেরা লেখক’ স্বীকৃতির আয়োজন করলে লেখকরা এই স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য, এবং সেরা লেখকরা সেরা প্রকাশক পাওয়ার জন্য অনেক সহায়ক হবে।
অমর একুশের বইমেলার পরিসর আরও বৃহত্তর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যদি একুশের ভাষা আন্দোলনকে আরও গভীরতর প্রেক্ষিতে স্বাধিকার আন্দোলন হিসেবেও দেখি তাহলে অমর একুশের গণ্ডি বৃহত্তর হয়ে দাঁড়ায়। তখন আমরা ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের তাদের সৃজনশীলতার জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি, নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি। শহর ও গ্রামের নারী-পুরুষকে কৃষি, শিল্প, সাংস্কৃতিক জগৎ, বিজ্ঞান, বাণিজ্য শিক্ষায় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যারা নির্দিষ্ট বছরে জাতির জন্য অবদান রেখেছেন তাদের স্বীকৃতি দিতে পারি, তাদের জন্য আনুষ্ঠানিক আয়োজন করে দিতে পারি।’ তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের, প্রবাসী শ্রমিকদের অবদানের জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি। সারা পৃথিবী জুড়ে নানা কাজে বাংলাদেশিরা কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। আমরা একুশের দিনে তাদের সবাইকে স্মরণ করতে চাই। তারা সবাই একুশের দিনে নিজের দেশকে স্মরণ করে অনুষ্ঠান করে। তারা আমাদের পরিবারের অংশ হিসেবে তাদের সন্তান-সন্ততির কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়।
বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী বইমেলা চলবে। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা উন্মুক্ত থাকবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com