মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
কুড়িগ্রামে দুফসলি থেকে তিন ফসলি জমি করতে সরিষা চাষে ঝুঁকছে কৃষক চকরিয়ায় গোয়ারফাঁড়ি শাখা খাল দখলে নিয়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরির হিড়িক চার লক্ষ মানুষের বিপরীতে একমাত্র সরকারি হাসপাতাল ভঙ্গুর অবস্থায় মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষনা করায় সাটুরিয়া বিএনপির আনন্দ মিছিল শালিখায় জাসাস এর ২২ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি অনুমোদন সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের উপর হামলা, থানায় জিডি পাঁচবিবিতে ড্রেনের আরসিসি ঢালাই কাজের উদ্বোধন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান কবির মিয়ার আশু রোগ মুক্তি কামনা করে দোয়া ও মিলাদ প্রত্যন্ত এলাকার অপরাধ দমনে গ্রাম পুলিশদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ-এসপি শরীফুল হক তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে লামায় বিএনপির সমাবেশ

কালীগঞ্জে হলুদ কুড়িয়ে চলে বৃদ্ধা সুখ জানের জীবন

হুমায়ুন কবির (কালীগঞ্জ) ঝিনাইদহ
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বয়স ৮০ পেরিয়েছে। নিস্তেজ শরীরের ভার এসে পড়েছে হাতে থাকা লাঠির উপর। খুব ছোট থাকতেই তার বিয়ে হয়। তারপর হলেন ২ কন্যা সন্তানের মা। স্বামীর সাথে নিজেও গতরে খেটে চালিয়েছেন সংসার করেছেন মেয়েদের মানুষ। পাত্রস্থ করেছেন মেয়েদের কিন্তু সেখানেও তাদের সংসার করা হয় নি।এর মধ্যে বেশ কয়েক বছর হলো সারা জীবনের মতো স্বামীকে হারিয়েছেন। তারপর দীর্ঘ সময় এক মেয়েকে সাথে নিয়ে জীবন সংগ্রামে পথ চলছেন সংগ্রামী এই নারী।বর্তমানে কাচা হলুদের টুকরা হাট থেকে কুড়িয়ে চলছে তার জীবন। গল্পটি কালীগঞ্জ পৌর এলাকার নিশ্চিন্তপুর বনানী পাড়ার মৃত সুরত আলীর স্ত্রী সুখ জান বিবির। জীবনের শেষ বয়সে এসেও বৃদ্ধা এই সংগ্রামী নারী দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের বলতে তার তেমন কিছুই নেই। স্বামী পরিত্যাক্তা বড় মেয়েকে সাথে নিয়ে দোচালা টিনের ভাঙ্গা খুপড়ির মধ্যে কোনরকমে বসত করছেন। দিন গড়িয়ে রাত নামলে চোখের পাতাও একসময় এক হয়ে আসে। পরিশ্রান্ত শরীরে ক্লান্তি নামলে ঘুমও হয় নিশ্চিন্তে। কিন্তু পেটের ক্ষুধা তো আর কোন কিছু মানে না। যে কারণে সুখ জান বিবি সরকারি ভূষণ হাই স্কুল রোডে হলুদ হাটে হলুদের পাইকার ব্যবসায়ীদের ঘরে কাজ করে সংসার চালাতেন একসম। বয়সের ভারে কর্ম ক্ষমতা হারিয়েছেন বিধায় এখন আর কাজও করতে পারেন না,আবার কেউ তাকে কাজেও নেন না। যে কারণে প্রতি সোম এবং শুক্রবারে সুখ জান বিবি হলুদ হাটে পড়ে থাকা হলুদের টুকরো কুড়িয়ে নিজের সাথে থাকা থলেতে ভরেন।তার কুড়ানো কাঁচা এ হলুদ বাড়িতে নিয়ে পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে তা রোদে শুকাতে দেন। মাসের আটটি হাটের দিন যে হলুদ তিনি কুড়িয়ে পান তা রোদে শুকিয়ে আবার ওই হাটেই বিক্রি করেন। এতে করে তার প্রায় ৫০০ টাকার মত মাসে আয় হয়। যা দিয়ে তার ওষুধের খরচের টাকাটা কোনমতে হয়। সুখ জানের বড় মেয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পাই তা দিয়ে মা মেয়ের খাওয়া চলে। বয়স্ক ভাতা ছাড়া সরকারি আর কোন সাহায্য সহযোগিতা জোটে না সংগ্রামী অসহায় নিঃস্ব সুখযান বিবির কপালে। সুখযান বিবির সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হলে কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, অনেক কষ্টে দিন কাটে আমার। শরীরে বাসা বেধেছে রোগ। চিকিৎসা কিংবা ওষুধ খাওয়ার টাকা নেই আমার। দুবেলা দুমুঠো ভাতের জোগাড় করতেই আমার হিমশিম খেতে হয়। রাতে ঘরে থাকার ব্যবস্থাও ভালো নেই। সেদিন ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম বেজিতে এসে হাতে কামড় দিয়েছে। এখন ঠিকমতো চিকিৎসাও নিতে পারছি না। হলুদ খুটে যা আয় হয় তা দিয়েও চলেনা। আল্লাহই চালাচ্ছে মনে করতি হবে। হলুদ ব্যবসায়ী মুশফিকুর রহমান মাহমুদ বলেন, সুখ জান বিবি হলুদ হাটায় দীর্ঘদিন ধরে হলুদ ঝাড়ার কাজ করতেন। বয়স হয়েছে বিধায় এখন আর ওই কাজ করতে পারেন না। তবুও ভিক্ষা না করে হাটে আসা হলুদ ব্যবসায়ীদের হলুদ বস্তা ভরে নিয়ে যাওয়ার পরে যে সকল ছোট ছোট হলুদের টুকরা পড়ে থাকে সেগুলো কুড়িয়ে সে বাড়িতে নিয়ে যায়। জমানো হলুদ বিক্রি করে সামান্য আয় হয় তার। এভাবেই চলছে তার জীবন। আমরা পরিচিত জন অনেকে তাকে মাঝে মাঝে সহযোগিতা করি। সমাজের বৃত্তবান ব্যক্তিদের উচিত সুখ জান বিবির মত অসহায় হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, সুখ জান বিবিকে আমরা সরকারি সকল সুযোগ সুবিধার আওতায় আনব। খোঁজখবর নিয়ে সংগ্রামী এই নারীর প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com