বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা আমাদের পরিকল্পনা- আগামী দিনে আমরা দেশকে কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, সেই পরিকল্পনা আমরা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরবো। আমরা প্রত্যাশা করবো অন্যান্য যেসব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল আছে তারাও তাদের পরিকল্পনা দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। দেশের মানুষই হচ্ছে প্রধান বিচারক, এই দেশের মালিক জনগণ। কাজেই জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কাদের পরিকল্পনাকে তারা সমর্থন করবে, কাদেরকে তারা দায়িত্ব দেবে দেশ পরিচালনা করার। তিনি বলেন, আজকে আমরা নিজেদের মধ্যে যত বেশি অপ্রয়োজনীয় তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হবো, তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ, দেশের মানুষ, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। বহু ক্ষতির ভেতর দিয়ে বিগত ১৫ বছর দেশের মানুষ, দেশ গেছে। এখন দেশ গড়ার পালা। দেশ গড়ার জন্য, দেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে গড়ে তোলার জন্য যা যা করা উচিত, দেশের ঐক্যকে ধরে রাখার জন্য যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে আমাদের সেই চেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখবো। এই হোক আমাদের প্রত্যাশা, এই হোক আমাদের শপথ।
গতকাল মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি উবাতুল বারী আবুর সভাপতিত্বে এতে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোশতাক মিয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন, সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম প্রমুখ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন চাওয়াটা স্বাভাবিক। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের কাছে ভোট চাওয়া এবং নির্বাচন চাওয়া। আজকে কিছু কিছু লোক বলছে বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। আমরা যদি জনগণের রাজনৈতিক শক্তিতে বিশ্বাস করি, আমরা যদি গণতন্ত্র বিশ্বাস করি, আমরা যদি ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি স্বাভাবিকভাবে আমরা ভোট বা নির্বাচন চাইবো, জনগণের কাছে ভোট চাইবো, মধ্যে নির্বাচন চাইবো স্বাভাবিক ব্যাপার। একটি স্বাভাবিক ব্যাপারকে কেন কিছু লোক অস্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবে দেখছে সেটি আমাদের ভেবে দেখতে হবে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে নির্বাচন যদি বিলম্বিত হয় তাহলে কারা সুবিধা পাবে এটি আজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যদি আমরা গণতন্ত্র চর্চা করতে পারি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে করতে পারি এই দেশকে এবং দেশের মানুষকে ষড়যন্ত্রের মানুষকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। যত বেশি গণতন্ত্রের চর্চা রাখতে পারবো তত বশি দেশের মানুষকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে নিরাপদ রাখতে পারব।
তারেক রহমান বলেন, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি ভোট প্রদানের অধিকারও নিশ্চিত করতে হবে। আজকে আমরা পত্রপত্রিকা পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কিছু কিছু অস্থিরতা লক্ষ্য করছি। আজকে যারা দায়িত্বে আছেন অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। আমরা খেয়াল করছি মানুষের মনে বিভিন্ন বিষয় বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমরা এই সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে পরিষ্কারভাবে এই সরকারকে সমর্থন জানিয়েছি। আমরা চাই অন্তর্র্বতীকালীন সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন রকম কথা বলছেন জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে। এ কারণেই দেশে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকমের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা অস্থিরতা দেখতে চাই না। বাংলাদেশে বহু অস্থিরতা হয়েছিল। পলাতক স্বৈরাচার বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে গেছে। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। প্রশাসনকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। আমরা লক্ষ্য করছি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কিছু কিছু লোকের বক্তব্যে কিছু কিছু অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। আমরা দেখছি প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে অস্থিতিশীলতা। আমরা কোনো অস্থিতিশীলতা দেখতে চাই না। আমরা পরিষ্কারভাবে আজ আবারও এই সম্মেলনের মাধ্যমে বলতে চাই- সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারবে। আগামী দিনে আমরা আশা করব অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রতি মানুষের যে প্রত্যাশা সেটি তারা পূরণ করবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। গণতন্ত্রের মূল মন্ত্র হচ্ছে মানুষের ভোটের অধিকার। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে সেটির দলের ভেতরে হোক বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে হোক না কেন, মতপার্থক্য থাকলে আমরা বসব, আলোচনা করব। আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব যা দেশের জন্য শান্তির হবে, যা দেশের মানুষকে নিরাপদ করবে। মানুষকে কোনোভাবেই বিভেদে রূপান্তরিত হতে দিতে চাই না।
কুমিল্লার স্মৃতিচারণ করে তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতার পরে আব্বার সাথে কুমিল্লা গিয়েছিলাম। সেখানকার সার্কিট হাউসে ছিলাম। এখন নিশ্চয়ই কুমিল্লা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে।