টানা ৯ দিনের ছুটি শেষে আজ খুলছে অফিস
পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটিয়ে কর্মক্ষেত্রের টানে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ। সরকারি অফিসগুলোর সাপ্তাহিক ছুটিও শেষ। অধিকাংশ বেসরকারি অফিসের ছুটি শেষ হয়ে গেছে। তাই জীবন-জীবিকার তাগিদে ব্যস্ত নগরীতে ফিরতে শুরু করেছেন অনেকে। তবে বিগত বছরগুলোর মতো নেই তীব্র ভিড় আর যানবাহনের চাপ। গতকাল শনিবার (৫ এপ্রিল) ঢাকার আন্তজেলা বাস টার্মিনালগুলোতে দেখা গেছে, ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের ভিড়। তবে কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই ফিরতে পারছেন বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা ৯ দিনের ছুটি শেষে আগামীকাল রোববার থেকে খুলছে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত অফিস। আজ অফিস খোলা থাকায় ঈদের লম্বা ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষজন। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চঘাট ও বাস টার্মিনালগুলোতে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
বাসসের খবরে বলা হয়, ঈদের আগে গত ২৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ছিল এসব অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেষ কর্মদিবস। শুক্রবার (২৮ মার্চ) থেকে শুরু হয় টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি। ২০ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ৩ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) নির্বাহী আদেশে ছুটি দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এ জন্য টানা ৯ দিনের ছুটি মেলে। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে গত ৩১ মার্চ সোমবার দেশে ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়। উপদেষ্টা পরিষদ ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর ঈদুল ফিতরে পাঁচ দিনের ছুটির অনুমোদন দেয়। আগে এ ছুটি ছিল ৩ দিন। ছুটির বিষয়ে ২১ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ৩১ মার্চ সোমবার ঈদুল ফিতরের দিন ছিল সাধারণ ছুটি। ঈদের আগের দুই দিন ২৯ ও ৩০ মার্চ (শনি ও রোববার) এবং ঈদের পরের দুই দিন ১ ও ২ এপ্রিল (মঙ্গল ও বুধবার) নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ছিল। ২৮ মার্চ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। অন্যদিকে ৩ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করায় সরকারি চাকরিজীবীরা এবার টানা ৯ দিন ছুটি ভোগ করছেন। কারণ, ৩ এপ্রিলের পরের দুই দিন ৪ ও ৫ এপ্রিল (শুক্র ও শনিবার) সাপ্তাহিক বন্ধ। সে ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে টানা ৯ দিন ছুটি ভোগ করছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
গতকাল শনিবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঈদের লম্বা ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে মানুষের ফেরার পথে পরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু ব্যক্তি যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছেন। গত শুক্রবার রাজশাহী, বগুড়া, বরগুনা ও পাবনা থেকে ছেড়ে যাওয়া কিছু পরিবহনে ১০০ থেকে ৬০০ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে রাজশাহীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের মুখে অতিরিক্ত ভাড়ার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর পাবনায় সাতটি বাস ও সিএনজিচালিত দুটি অটোরিকশাকে ৫৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বরগুনা থেকে ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামগামী বাসগুলোর টিকিটে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, বরগুনা থেকে রাজধানীর সায়েদাবাদ পর্যন্ত সরকার–নির্ধারিত ভাড়া ৭৩৭ টাকা। ঈদের আগে বরগুনা থেকে ঢাকায় বাসভাড়া নেওয়া হতো ৬০০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছে মানুষ
পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ। সরকারি অফিসগুলোর সাপ্তাহিক ছুটিও শেষ। অধিকাংশ বেসরকারি অফিসের ছুটি শেষ হয়ে গেছে। তাই জীবন-জীবিকার তাগিদে ব্যস্ত নগরীতে ফিরতে শুরু করেছেন অনেকে। তবে বিগত বছরগুলোর মতো নেই তীব্র ভিড় আর যানবাহনের চাপ। গতকাল শনিবার (৫ এপ্রিল) ঢাকার আন্তজেলা বাস টার্মিনালগুলোতে দেখা গেছে, ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের ভিড়। তবে কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই ফিরতে পারছেন বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।
প্রায় একই অবস্থা রেলপথেও। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনেও দেখা গেছে, স্বাভাবিক চিত্র। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা যাত্রীর সংখ্যা বেশি। তবে ঈদ হিসেবে স্বাভাবিক। রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এবার ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় মানুষের ফিরে আসার চাপ বোঝা গেছে কম। রেলপথে এবার স্বস্তির ঈদযাত্রা ছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছুটি বেশি হওয়ায় তুলনামূলকভাবে বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। এমনকি এবারের ঈদের যাত্রা তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হওয়ায় ভোগান্তি ছাড়াই যাতায়াত করতে পেরেছেন ঘরমুখো মানুষ। তাছাড়া, ঈদের আমেজ এখনো পুরোপুরি না কাটায় ঢাকার বাইরেও ঘুরতে যাচ্ছেন অনেকে। যে কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে আরো কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
হানিফ পরিবহনের বাসচালক সবুজ বলেন, “বাসে মোটামুটি সব সিটেই যাত্রী ছিল। কিন্তু আগে যেমন যাত্রীর চাপে একাধিক গাড়ি ছেড়ে এসেছে এবার তেমনটা নেই। আবার গাড়িতেও অতিরিক্ত যাত্রী নেই।”
বেসরকারি চাকরিজীবী নুরুল করিম বলেন, “প্রতিবছরই আমি বাড়িতে ঈদ করি। এবার একটু বেশি সময় নিয়ে বাড়িতে থেকেছি। মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো সময় কাটিয়েছি। কর্মের তাগিদে সবাইকে ছেড়ে ঢাকায় আসায় মন খারাপ লাগছে। আরো কিছুদিন থাকতে পারলে ভালো লাগতো।”
গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীর জন্য অপেক্ষারত এক অটোরিকশাচালক বলেন, “যাত্রী নেই। আগে দেখেছি গাবতলীতে একের পর এক গাড়ি ঢুকছে। যাত্রীরা নেমেই সিএনজি খোঁজা শুরু করত। এবার যাত্রীর চাপ কম। দেখেন কয়জন যাত্রী আসছে! তার থেকে বেশি সিএনজি।”
অন্য এক চালক বলেন, “সকাল থেকে গাবতলী থেকে মাত্র এক ট্রিপ পেয়েছি। যাত্রী নিয়ে কাজীপাড়া গিয়েছি। এরপর কাজীপাড়া থেকে ধানমন্ডি। সেই যাত্রী নামিয়ে আবার গাবতলী এসেছি। কিন্তু আসার পর থেকে বসেই আছি। কোনো যাত্রী নেই।”
এদিকে, ছুটি চলাকালীন বিগত দিনগুলোর তুলনায় সড়কে বেড়েছে যান চলাচল। বেড়েছে সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও। কিছুক্ষণ পর পর গাবতলী বাস টার্মিনালে আসছে ফিরতি ঈদ যাত্রার দূরপাল্লার পরিবহন। তবে ফিরতি এ যাত্রায় দূরপাল্লার পরিবহনে চোখে পড়ার মতো যাত্রীর চাপ দেখা যায়নি।