সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন

বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ড. ইউনূসের ম্যাজিক

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের লাগামহীন লুটপাট, অর্থপাচার ও দুর্নীতিতে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয় দেশ। সাবেক স্বৈরাচার গণহত্যাকারী হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও তার বিধ্বস্ত করে ফেলে যাওয়া অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর বিশাল দায়িত্বভার পড়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাঁধে। যখন পতিত স্বৈরাচার অস্থিরতা ও নানামুখী ষড়যন্ত্র করে দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে মরিয়া তখন সেই প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লড়তে হচ্ছে তাকে।

৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ বিঘিœত হয়। এমন এক প্রেক্ষাপটে বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সুদক্ষ নেতৃত্বে সারা পৃথিবী বাংলাদেশকে দেখতে যাচ্ছে এক নতুন চোখে, এক নতুন পরিচয়ে।

প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের আমন্ত্রণে বিশ্বের ৫০টি দেশের ৫৫০ জনের বেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এখন ঢাকায়। সরাসরি বিনিয়োগ করবেন এমন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিশ্বের নামীদামি বেশ কিছু কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী কিংবা প্রতিনিধিরাও অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম দুজন হলেন কাপড়ের ব্র্যান্ড জারার মূল সংস্থা ইন্ডিটেক্সের গ্রুপ সিইও বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অস্কার গার্সিয়া মাসেইরাস ও দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলাইমান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. ইউনূসের আমন্ত্রণে ইতোমধ্যেই বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। চলমান বিনিয়োগ সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নজিরবিহীনভাবে সাড়া দিয়েছেন। এটা শুধু বাংলাদেশে নয় উপমহাদেশেও এমন নজির বিরল। অনেকে কল্পনাও করেননি এমন কিছু ঘটতে পারে। তাই এই সম্মেলনে কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে অধির আগ্রহে রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী ৯ এপ্রিল বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে নিয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সচেতন মহল বলছেন, দেশ এভাবে এগিয়ে গেলে সামনে তৈরি হবে হাজারো নতুন কর্মক্ষেত্র। আগে শেখ হাসিনার আমলে বিনিয়োগ সম্মেলন হতো বিদেশে। দেশ থেকে দল বেধে ব্যাংকাররা যেতেন, সাথে থাকতেন কিছু ব্যবসায়ী, আমলা ও সাংবাদিকেরা। দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুই শীর্ষ কর্মকর্তা নেতৃত্ব দিতেন। সবাই মিলে কাড়িকাড়ি ডলার খরচ করে আসতেন। কিন্তু ড. ইউনূসের আমলে এবার বিনিয়োগ সম্মেলন হচ্ছে দেশেই।

এবার যেন চমক দেখালেন প্রধান উপদেষ্টা। তার আমন্ত্রণে বিনিয়োগকারীরা বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসে প্রভাবিত হয়ে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, সউদী আরবসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য মুখিয়ে আছে। এখন দরকার প্রধান উপদেষ্টার ইমেজকে ব্যবহার করে সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা।

৭ থেকে ১০ এপ্রিল ঢাকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে শুরু হওয়া এই সম্মেলনের লক্ষ্য বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা। সম্মেলনের লক্ষ্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে- নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল অর্থনীতি, টেক্সটাইল ও পোশাক, স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ শিল্প এবং কৃষি প্রক্রিয়াকরণ-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এছাড়াও এই সম্মেলন আগামীতে দেশের দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ সংযোগ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে, চার দিনব্যাপী এ আয়োজনের অংশ হিসেবে সোমবার (৭ এপ্রিল) চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল পরিদর্শন করছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বড় একটি প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫ এর প্রথম দিনে এই কর্মসূচির আয়োজন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।

বিডা জানায়, মূলত, যারা শিগগিরই শিল্প কারখানা স্থাপনে আগ্রহী, তাদের এই সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এ সফরের মাধ্যমে কোরিয়ান ইপিজেডের বাস্তবচিত্র বিদেশিদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। চীন, কোরিয়া, জাপানসহ ৪০টি দেশের মোট ৬০ জনের একটি প্রতিনিধি দল এ সফরে অংশগ্রহণ করেছেন। কর্তৃপক্ষের আশা, বেশ কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ চুক্তি সই করতে পারে এবারের সম্মেলনে।

কারা আসছেন বিনিয়োগ সম্মেলনে
বিডার তথ্য অনুযায়ী, বিনিয়োগ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে থাকবেন যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের সদস্য ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন, বহুজাতিক কোম্পানি স্যামসাংয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাং-জু লি, কাপড়ের ব্র্যান্ড জিওর্ডানো ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কলিন মেলভিল কেনেডি কারি। এ ছাড়া এক্সিলারেট এনার্জির প্রেসিডেন্ট ও পাকিস্তানের দাউদ গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্টের সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
এসব ব্যক্তির পাশাপাশি আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। বিডা জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা, উবার, টেলিনর ও টয়োটার মতো অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এ ছাড়া বিশ্বের বেশ কিছু বড় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিও আসছে সম্মেলনে। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বি-ক্যাপিটাল, মালয়েশিয়া ও হংকংভিত্তিক গোবি পার্টনার্স, কনজাংশন ক্যাপিটাল ও মার্কোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে।
নেটিজেনরা বলছেন, এবার বিনিয়োগ সম্মেলন দেশেই হচ্ছে। বিদেশ থেকে বিনিয়োগকারীরা আসছেন। এই অস্থির সময় বিনিয়োগ আসবে কিনা সেটা সময় বলে দেবে। এই সময়ে এমন উদ্যোগ সাহসের বিষয়। এই সম্মেলন আয়োজনের নামে বিদেশে গিয়ে অকারণ খরচ না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ।

তারা আরও বলেন, কল্পনা করুন—বিদেশি দূতাবাসগুলো আসছে আমাদের দেশে, আর বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ হয়ে উঠছে এক নতুন সম্ভাবনার নাম।আমরা যেনো এক নতুন বাংলাদেশকেই আবিষ্কার করতে যাচ্ছি।এই অসাধারণ অভিযানের স্থপতি প্রফেসর ইউনূসের প্রতি অশেষ ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে আশার বাণী শুনিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে নতুন নতুন বিনিয়োগ দেখা যাবে বলে উল্লেখ করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের বর্তমান ব্যবস্থায় বিনিয়োগের বিষয়ে খুবই আগ্রহী। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে দেশে নতুন নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আপনারা দেখতে পাবেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথার সঙ্গে বাস্তবের মিলও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com