নীলফামারীর ডিমলায় নিয়োগবিধি সংশোধন করে বেতনবৈষম্য নিরসনের দাবিতে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীগণ। দাবি পূরণের প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে গতকাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে এ ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ হেলথ্ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন। বৃহস্পতিবার সকালে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের এই কর্ম বিরতির ফলে হতে হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন কার্যক্রমসহ দেশের রুটিন টিকাদান কর্মসূচী বন্ধ হয়ে গেছে। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা দাবি করছেন, নিয়োগবিধি সংশোধনসহ ক্রমানুসারে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন গ্রেড ১৪, ১৫ ও১৬ তম গ্রেড থেকে যথাক্রমে ১১, ১২ ও ১৩ তম গ্রেডে উন্নীতকরণ করতে হবে। কর্ম বিরতি পালনকারী সকল স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শক গণের মধ্যে বক্তব্য পাঠ করেন ডিমলা উপজেলা দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী মোঃ নূরল হক, স্বাস্থ্য পরিদর্শক( ইনচার্জ), সদস্য সচিব মোঃ নূর আলম এইচএ, যুগ্ম সমন্বয়কারী মোঃ রাকিবুল ইসলাম এইচএ। কর্ম বিরতি পালনকালে ১৯৭০-এর দশক থেকে স্বাস্থ্য সহকারীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে দেশ থেকে বসন্ত নির্মূল হয়েছে, দেশ পোলিওমুক্ত হয়েছে। ম্যালেরিয়া নির্মূলের পথে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর (ইপিআই) আওতায় এক লাখ ২০ হাজার আউটরিচ রুটিন টিকাদান কেন্দ্রের কর্মসূচি স্বাস্থ্য সহকারীরা পালন করেন। যক্ষা, পোলিও, ধনুষ্টঙ্কার, হুপিংকাশি, ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ও হাম-রুবেলা টিকা প্রদান করেন তারা। ২০১৩ সালে থেকে পাঁচ কোটি ২০ লাখ শিশুকে সফলতার সাথে হাম-রুবেলা টিকা প্রদান করে আসছেন। তাদের কাজের সফলতা স্বাস্থ্য বিভাগকে এনে দিয়েছে সুনাম, দেশকে দিয়েছে সাফল্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এনে দিয়েছে সম্মাননা। ইপিআই কাজে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। শিশু মৃত্যুহার হ্রাস ও মাতৃ স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে এমডিজি লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়েছে তাদের কাজের সফলতার ফলে। তাদের কাজের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বিশ্ব নন্দিত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন “সাউথ সাউথ” পুরুস্কার, ভূষিত হয়েছেন “ভ্যাক্সিন হিরো” উপাধিতে। “ভ্যাক্সিন হিরো শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্য সহকারী তার মূল সেনা।” প্রজাতন্ত্রের পদোন্নতি বিধি অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী সাধারনত তিন থেকে সাত বছর পরপর পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো যে তারা অনেকে এমন সময় পদোন্নতি পান, যখন তাদের চাকুরির বয়স বাকি থাকে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মাস। অনেকে পদোন্নতি না পেয়ে যোগদানকৃত পদে থেকেই অবসর গ্রহন করেন। পদোন্নতি হলেও বেতন বাড়ে না এক পয়সাও। উপরন্তু বদলি করা হয় অন্য জেলা বা উপজেলায়। সম যোগ্যতার অন্যান্য অধিদপ্তরের চাকুরিজীবিদের তুলনায় তারা বেতন বৈষম্যের স্বীকার। অন্যান্য অধিদপ্তরের অপেক্ষাকৃত নীচের গ্রেডের চাকুরীজীবিগণ তাদের নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে বর্তমানে উপরের গ্রেডে চলে গেছে। যেমন- ১৭ গ্রেডের প্রাথমিক শিক্ষকগণ এখন ১৩ গ্রেডে, বিএস গণ ১১ গ্রেডে কিন্তু স্বাস্থ্য সহকারীগণ ১৬ তম গ্রেডেই পরে আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের এক মহাসমাবেশে তাদের বেতনবৈষম্য নিরসন ও ট্যাকনিক্যাল পদ মর্যাদার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবিতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি/২০২০ তারা হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইনসহ ইপিআই বর্জন করলে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালক দাবি মেনে নিয়ে লিখিত সমঝোতা পত্রে স্বাক্ষর করেন। যার মেয়াদ ছিলো ৩০ জুন/ ২০২০। কিন্তু তা আজও বাস্তবায়ন হয় নাই। তারা এসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের দাবী করেন।