স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞ শুরু হওয়ার সময় থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে পদ্মা সেতু দেখতে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। স্প্যান বসানোর পর থেকে দর্শনার্থীদের আগমন বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে পদ্মা সেতু যখন পুরোপুরি দৃশ্যমান হলো, তখন থেকেই সাধারণ মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা যেন বেড়ে গেছে বহুগুণ।
প্রতিদিনই দিনের বিভিন্ন সময়ে পদ্মা সেতু সংলগ্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের ভিড় বেড়েছে। ট্রলার ভাড়া করে নদীতে ঘুরতে আসছেন লোকজন। আর দূর থেকে চেয়ে চেয়ে দেখেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
দর্শনার্থীদের ভ্রমণকে আরামদায়ক করতে এবং পদ্মা নদী ও চরাঞ্চলকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে, পর্যটনকেন্দ্রের মাধ্যমে শিবচরের চরাঞ্চলের জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের এক সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। গত সোমবার (৪ জানুয়ারি) সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কাঁঠালবাড়ী ঘাট সংলগ্ন পদ্মা নদীতে নামানো হচ্ছে চারটি দৃষ্টিনন্দন নৌকা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু সংলগ্ন শিবচরের কাঁঠালবাড়ী পদ্মা নদীতে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে চারটি নৌকা নামানো হবে। পর্যায়ক্রমে শিগগিরই নদীতে কমপক্ষে ২০টি নৌকা থাকবে।
এসব নৌকার মালিক স্থানীয় জেলেরা। যারা মাছ ধরার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য পদ্মা নদীর সৌন্দর্য দেখাতে আগ্রহী। ১০-১৫ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতা অনুযায়ী একেকটি নৌকা তৈরি করে নদীতে নামানো হবে। নৌকাগুলো দেখতে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন করা হবে। যাত্রীরা নৌকাভ্রমণে যাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সেভাবে নৌকাগুলো তৈরি করা হচ্ছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে জেলা প্রশাসন নৌকার ভাড়া নির্ধারণ করে দেবে।
নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেটসহ ভ্রমণ এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। আগামীতে পর্যটকদের সুবিধা ও নিরাপত্তা জোরদার নিশ্চিত করতে এক ধরনের অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনাও করছে জেলা প্রশাসন। পদ্মা সেতু সংলগ্ন নদীকেন্দ্রিক পর্যটনশিল্পের অগ্রসরে নৌকা ট্র্যাকিংয়ের জন্য অ্যাপ থাকবে। পর্যটকদের নিয়ে নৌকা নদীর কোথায় যাচ্ছে তা জানা যাবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে পর্যটকরা নৌকার খোঁজখবরও রাখতে পারবেন।
এদিকে মাছ ধরার পাশাপাশি জেলেরা পর্যটকদের সেবা দেবার মাধ্যমে বাড়তি উপার্জন করতে পারবেন। এতে করে তাদের জীবনমান উন্নত হবে বলে আশাবাদী জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে শিবচরের পদ্মা নদী সংলগ্ন কাওড়াকান্দি, কাঁঠালবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিশেষ করে বিকেলে আশপাশের এলাকা থেকে অনেকেই পদ্মা সেতু দেখতে এ এলাকায় আসেন। তারা পদ্মা নদীর নদীশাসন বাঁধ, চরাঞ্চল ও নদীতে ট্রলার ভাড়া করে ঘুরে বেড়ান। দূর থেকে পদ্মা সেতু দেখেন। তবে ভ্রমণ উপযোগী তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মাঝে মধ্যে বিপাকে পড়তে হয় ভ্রমণপ্রেমীদের।
ঘুরতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, পদ্মার এই চরাঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুললে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য জায়গাটি অত্যন্ত মুগ্ধকর হবে। পদ্মায় সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্যও দেখা যাবে। জেলেদের ইলিশ শিকারের দৃশ্যসহ পদ্মার মধ্যে জেগে ওঠা চরে ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে সমুদ্র দর্শনের অনুভূতি পাওয়া যাবে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘শিবচরের চরাঞ্চলের জেলেদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও পর্যটনের বিকাশ সাধনে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে করে জেলেদের বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া পদ্মা নদী ও এর চরাঞ্চলের সৌন্দর্য সহজেই উপভোগ করতে পারবেন ভ্রমণপ্রেমীরা। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে পদ্মা সেতু দেখতে পাবেন তারা। এতে করে পদ্মার সৌন্দর্যের পাশাপাশি পদ্মা সেতুও দেখার সুযোগ পাবেন তারা।’
ইলিশ নিষিদ্ধের মৌসুমে জেলেরা তাদের জীবিকা উপার্জনের পথ ঠিক রাখতে পারবেন। তাদের জীবনযাত্রায় ব্যঘাত ঘটবে না জানিয়ে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এই নৌকাগুলো মূলত জেলেরাই চালাবেন। যা আয় হবে তা সব জেলেদেরই দেয়া হবে। তবে দেখভালের দায়িত্বে থাকবে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যদিয়ে পদ্মা সেতুকে ঘিরে এ এলাকায় পর্যটনের বিকাশ ঘটবে বলে আশা রাখি।