রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ অপরাহ্ন

তাপসের মান-সম্মানের বাজারমূল্য কত, রাজপথে দেনা-পাওনার হিসাব হবে: খোকন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২১

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে নিয়ে ‘মানহানিকর বক্তব্য’ দেওয়ার অভিযোগে দুইটি মামলা হওয়ার পর ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, ‘তাপসের মান-সম্মানের বাজারমূল্য কত? মামলার পূর্ণাঙ্গ বিবরণী পাওয়ার পর সেটা আমি জানতে পারব। এ মামলার আইনি মোকাবিলার পাশাপাশি রাজপথে দেনা-পাওনার হিসাব হবে, ইনশাআল্লাহ।’ গতকাল সোমবার (১১ জানুয়ারি) দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকন এ কথা বলেন।
‘মানহানিকর বক্তব্য’ দেওয়ার অভিযোগে ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে সকালে জানিয়েছিলেন বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। পরে আজই ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীর আদালতে খোকনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দুটি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের ক্লার্ক রিপন মিয়া।
তিনি জানান, মামলা দুটির মধ্যে একটির বাদী অ্যাডভোকেট সারোয়ার আলম এবং অপরটির বাদী আনিসুর রহমান। আদালত বাদীদের জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলা দুটির বিষয়ে পরে আদেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
মামলার ব্যাপারে আইনজীবী সারোয়ার আলম বলেন, ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সম্পর্কে ৯ জানুয়ারি সাঈদ খোকন মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন, যা গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। যে কারণে তিনি সংক্ষুব্ধ হয়ে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন। আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। তবে আদালত এখনো কোনো আদেশ দেননি।
তাপস বলেন, ‘অবশ্যই তিনি (সাঈদ খোকন) মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার বক্তব্য শুনে অবাক হয়েছি। তিনি নিজে চুনোপুঁটি দুর্নীতিবাজ হিসেবে স্বীকার করেছেন। আর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।’
তাকে নিয়ে দেয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তাপস আরো বলেন, ‘গতকাল ছিল জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এর আগেই ৯ তারিখে আমরা লক্ষ করলাম, তিনি (সাঈদ খোকন) ঘটা করে একটা সভা ডেকে আমার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেন। আমার মনে হয়, এটা ওনার ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ।’দুই মেয়রের মধ্যে বিরোধ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন দুটি মার্কেট থেকে নকশাবহির্ভুত দোকান উচ্ছেদ নিয়ে। ফুলবাড়ীয়া ও সুন্দরবন মার্কেটে দেড় হাজারের বেশি দোকান ভেঙে দেয়ার কাজ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। যাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, সেই দোকানিরা বলছেন, খোকন মেয়র থাকাকালে তারা টাকা দিয়ে সেগুলোর বরাদ্দ নিয়েছিলেন। আর টাকা নেয়ার রসিদও আছে। তবে নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, রসিদ থাকলেও এই টাকা করপোরেশনের তহবিলে জমা পড়েনি। এর আগে, গত শনিবার (৯ জানুয়ারি) হাইকোর্টের পাশে কদম ফোয়ারার সামনে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ করেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। দুর্নীতির কারণে শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র পদে থাকার যোগ্যতাও হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের পুনর্বাসনের দাবিতে এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে লিখিত বক্তব্য পড়ে সাঈদ খোকন বলেন, ‘তাপস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন। আমি তাকে বলবো রাঘব বোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত করুন। তারপর চুনোপুঁটির দিকে দৃষ্টি দিন। তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তরিত করেছেন। এই শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং করছেন।’
২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া মধুমতি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের একজন তাপস। পরদিন এক অনুষ্ঠানে তাপস বলেন, সব আইন মেনে এই টাকা রাখা হয়েছে। ব্যক্তিগত আক্রোশের বশে সাঈদ খোকন উন্মাদের মতো বকছেন।
‘অপরদিকে অর্থের অভাবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গরিব কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ধরনের কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে মেয়র তাপস সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯, দ্বিতীয় ভাগের দ্বিতীয় অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯(২) (জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন’ বলেন সাঈদ খোকন। তিনি আরো বলেন, ‘ফুলবাড়িয়া মার্কেটে সিটি করপোরেশন থেকে যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, আমি আগেও বলেছি এটা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। কারণ আদালতের নির্দেশে ব্যবসায়ীদের বৈধ করণের আবেদন নিস্পত্তির লক্ষ্যে করপোরেশনের বোর্ড সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে আলোচিত মার্কেটগুলোর নকশা সংশোধন, বকেয়া ভাড়া আদায় সাপেক্ষে বৈধ ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ নকশা সংশোধন করে এবং রাজস্ব বিভাগ সাত/আট বছরের বকেয়া ভাড়া আদায় করে ব্যবসায়ীদের বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান করা হয়।’
সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমরা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, বিনা নোটিশে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অবৈধ উচ্ছেদের মাধ্যমে বুলডোজার দিয়ে এসব হাজার হাজার বৈধ দোকান গুড়িয়ে দিলো। ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার দোকান মালিক ও কর্মচারী সপরিবারে পথে বসে গেল। আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র হিসেবে এই অবৈধ উচ্ছেদের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি জানি, বর্তমান একগুঁয়ে নগর প্রশাসন কোনো যৌক্তিক নাগরিক দাবির তোয়াক্কা করে না। তাই আমি আশা ভরসার শেষ স্থান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই নিঃস্ব ও অসহায় বৈধ ব্যবসায়ীদের পুনবার্সনের আবেদন জানাচ্ছি।’
সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুই মামলা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করা হয়েছে। ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গতকাল সোমবার (১১ জানুয়ারি) ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীর আদালতে মামলা দু’টি করা হয়।একটি মামলার বাদীর নাম কাজী আনিসুর রহমান। অপর মামলাটির বাদী অ্যাডভোকেট মো. সারওয়ার আলম। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর মামলা দু’টি আদেশের জন্য রেখেছেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী রিপন মিয়া বলেন, মামলায় দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এখন মামলার বিষয়ে শুনানি হচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com