বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
সদরপুরে তিল চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এস এ সোহাগ মার্জিত স্বভাবের কারণে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে টেংগারচর ইউনিয়ন পরিষদের সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম উদ্বোধন ফরিদপুরে স্থায়ী প্রশস্ত ব্রিজের দাবীতে মানববন্ধন রামগতিতে হরিনাম মহাযজ্ঞে সরকারি কর্মকর্তা-জনপ্রতিনিধিদের মিলনমেলা কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী অবস্থান প্রেমের ফাঁদে ফেলে জোরপূর্বক অন্তরঙ্গ ছবি তুলে ভাইরাল করানোর ভয় দেখিয়ে টাকা নিতো মেঘলা শিশুদের নিরাপত্তায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা শীর্ষক সভা শ্রীমঙ্গলে আগাম জাতের আনারসের বাম্পার ফলন, ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি চাষিরা ধনবাড়ীতে ৬ ওষুধ ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা

করোনাকালে জবিতে শতাধিক নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টি

বনি ইয়ামিন রাফি, জবিঃ
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১

করোনা ভাইরাস মহামারীর কারনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারন ছুটির মেয়াদ বেড়ে প্রায় দশ মাসে দাঁড়িয়েছে। সীমিত পরিসরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হলেও ক্লাস রুমে হচ্ছে না কোনো ক্লাস, ক্যাম্পাসে নেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। যদিও অনলাইনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম কিন্তু শতভাগ শিক্ষার্থী নেই এই সুবিধার আওতায়। দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা বাসায় অবস্থান করায় পড়েছেন অস্বস্তিতে। অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কারনে ঢাকার মেস/বাসা ভাড়ার চাপ। এখন প্রয়োজন সময় কাটানো, সাথে কিছু আর্থিক উপার্জন। এসবের কথা মাথায় রেখে করোনার অবসরে ব্যবসায় ঝুঁকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হওয়াসহ নিজেদের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশেও সুযোগ পাচ্ছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব উদ্যোক্তাদের থেকে জানা যায়, প্রায় শতাধিক ছাত্রছাত্রী করোনায় সাধারণ ছুটিতে উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসা শুরু করেছেন। দিনে দিনে এর প্রবণতা আরও বাড়ছে। করোনার মধ্যে ব্যবসায় আগ্রহ কেনো প্রশ্নে প্রায় সকলেরই একই উত্তর। একটানা অবসর সময়ের একঘেয়েমিতা দূর, প্রতিভা বিকাশ আর নিজেকে উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন। প্রায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী ব্যবসার মাধ্যম হিসেবে অনলাইন তথা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ব্যাবহার করছেন বলে জানা গেছে।
এমনই একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিকুন মোস্তফা রিতু কাজ করেন গ্রামীন ঐতিহ্যের নকশিকাঁথা, দেশীয় ডিজাইনের কাঠ গহনা, ঘর সাজানোর পেন্টিং, কুর্তি, টিশার্ট নিয়ে। ফেসবুক পেজ ‘কাঁকন’ এ পণ্য বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেন তিনি। রিতু বলেন, বরাবরই দেশীয় ও ঐতিহ্যবাহী পণ্যের প্রতি অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতো। সেই ভালোলাগাকে পুঁজি করে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। ইচ্ছা আছে আরও অনেক কিছু নিয়ে কাজ করার।
একই বিভাগের সাবরিনা হক কাজ করছেন সিলেটের চা ও মনিপুরী তাঁতের শাড়ি নিয়ে। তিনি বলেন, করোনার মধ্যে পড়াশোনারও তেমন চাপ নেই। এই অবসর সময়টুকু কাজে লাগিয়ে ফেসবুক পেজে (সিলেট হাউজ) ব্যবসা শুরু। সাবরিনা আরো বলেন, আমি যেহেতু সিলেটের মেয়ে তাই সিলেটের প্রিমিয়াম কোয়ালিটির চা আর মণিপুরী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হাতে বোনা তাঁতের শাড়ি নিয়ে ব্যবসা করছি। প্র‍তি মাসে ব্যবসা থেকে ৩৫ হাজার টাকা বা এর বেশিও পণ্য বিক্রি হয়।
সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থী নন্দিতা সাহা। তিনি কাজ করছেন দেশি কাঁচামাল পাট নিয়ে। পাটের গহনা বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, শুরুটা করোনার ভিতর। ফেসবুক পেজ ‘উই’ তে দেখতাম কতজন কত কিছু নিয়ে কাজ করে সফল হচ্ছে। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা। আমি পাট দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গহনা যেমন মালা, কানের দুল, চুড়ি, আংটি, টিক্লি, বিছা তৈরি করে ‘কনকমুকুর’ ফেসবুক পেজে আপলোড দিই। সেখান থেকে যারা গয়না পছন্দ করেন তাদেরকে কুরিয়া সার্ভিসে বাসায় পৌঁছে দিই।
এছাড়া ইরা সুমাইয়ার ‘কেক আর্ক বাই নাজমা’ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কেক, রসায়ন বিভাগের তৌসিফের ‘এল অ্যারো’ তে খেলাধুলার সামগ্রী, সাংবাদিকতা বিভাগের তামান্না ইসলাম পেরী’র ‘ফ্রম কিচেন’ এ রান্না করা অনলাইন ফুড শপ, শাম্মী আকতারের ‘নিডল আর্ট’ এ নকশা করা দেশিয় নকশীকাঁথা ও সালোয়ার কামিজ, ডিসেম্বরে শুরু করা পার্শা সানজানা শীতলের ‘শিখরি’ তে মেয়েদের শাড়ি, গহনা ও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পোশাকের অনলাইন ব্যবসা গড়ে উঠেছে।
মৌসুমি পণ্যের ব্যবসাতেও ঝুঁকে পড়েছেন অনেকে। বর্তমান শীতকালীন মৌসুমের বিভিন্ন খাবার ও পোশাকের ব্যবসায় যুক্ত হতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী কণিক সপ্নিলের রাজশাহীর খেজুর রসের গুড় ও পাটালি, ১১ ব্যাচের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলামের নাটোরের গুড় ও পাটালি, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তাইয়াবা পুস্প ‘প্রসূন’ নামে শাল, কম্বল, চাদর, জ্যাকেট নিয়ে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেছেন। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত হুডি ও জ্যাকেট নিয়েও কাজ করছেন।
তবে ভিন্ন ধর্মী একজন উদ্যোক্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের এমএসসি ছাত্র ওয়াসেক ফয়সাল। তিনি নিজ এলাকা রাজশাহীর বাঘায় রঙিন মাছ চাষ করে পেয়েছেন সফলতা। করোনার আগে মাছ চাষ শুরু করলেও করোনার বন্ধে পুরোটা সময় নিজেকে নিয়োগ করেছেন খামারে।
মাছ চাষের মধ্যেই ওয়াসেক সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়ির আঙিনায় গরু পালন, হাঁস, দেশি মুরগি, কক মুরগি, দেশি বিদেশি কবুতর পালনসহ কচ্ছপ পালন শুরু করেছেন।
এদিকে (সিপিডি)এর এক গবেষণায় দেখা গেছে করোনা কারনে ২৮% শিক্ষার্থীর পড়ালেখা ছাড়ার তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় উঠে এসেছে দুই-তৃতীয়াংশ তরুন মানসিক আবসাদে আছে। তাই এসময়ে শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়টিকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com