সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন

পেশা নয় নেশায়-মধু চাষে স্বাবলম্বী শিক্ষক দম্পতি

ওয়াসিম হোসেন ধামরাই :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১

পেশা নয় নেশা হিসেবে শখ করে মধু চাষ শুরু করলেও আজ তা ব্যবসায় পরিনত হয়ে গেছে এক শিক্ষক দম্পতির। ঔই শিক্ষক দম্পতির বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশাতে হলেও বিভিন্ন সময়ে ফসলের সময়বেধে তারা বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। বর্তমানে তারা ঢাকার ধামরাই উপজেলার সানোড়া ইউনিয়নের সানোড়া গ্রামে মধু সংগ্রহ করে যাচ্ছেন। তবে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সরিষা আবাদ শেষের দিকে।তাই এই এলাকা থেকে তারা অন্যত্র চলে যাবেন বলে জানা যায়। সরেজমিনে জানা যায়, রাজবাড়ী জেলার পাংশা এলাকার শাহ মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম তপন ও তার স্ত্রী গোলাপজান শখ করে ২টি মধুর বক্স ক্রয় করে ১৪ হাজার টাকায় এবং মৌমাছি ক্রয় করে। এতে মোট তাদের ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। ৫ দিন পর তারা ৪ কেজি মধু পান সেখান থেকে। আজ ২টি থেকে ১০০টি বক্স হয়েছে। বড় হয়েছে তাদের ব্যবসা। বর্তমানে ধামরাইয়ের সানোড়া এলাকায় ৫ হাজার টাকা দিয়ে জায়গা ভাড়া নিয়ে মধু চাষ করে যাচ্ছেন। রাশেদুল ইসলাম রাজবাড়ী জেলার পাংশায় আইডিয়াল গার্লস কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ের শিক্ষক এবং স্ত্রী গোলাপজান একই জেলার আগুড়া ডাংগী আব্দুল মাজেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। তারা বলেন, ২০১৯ সাল অর্থাৎ ২ বছর ধরে মধু চাষ শুরু করলেও বর্তমানে ভালো অবস্থানে আছি।একটু একটু করে বিনিয়োগ করে আজ শখের পেশাটি বড় হয়ে গেছে। ৭ দিন পর পর মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রায় ৭-৮ মণ মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। তারা বলেন, ধামরাইতেই মধু বিক্রি শেষ হয়ে যায়। তারপরে কিছু ঢাকা ও রাজবাড়ীতে পাঠাতে হয়। চাহিদা প্রচুর।এই দম্পতি ন্যাচারার পিউর হানি নাম দিয়ে এই মধু বাজারজাত করে থাকেন।তবে প্রতি বছর ধামরাইতে তারা মধু সংগ্রহের জন্য আসবেন। বর্তমানে তাদের সাথে মধু সংগ্রহ করতে হালিম সরদার, আশরাফুল ইসলাম, খোকনসহ ৪-৫ জন লোক প্রতিদিন কাজ করে থাকেন। প্রতিটি বক্স এর মধ্যে ১টি করে রানী মৌমাছি থাকে। বছরে প্রায় ৫ মাস মধু সংগ্রহ করা যায়। বাকি ৭ মাসই এই মৌমাছিকে খাওয়াতে হয়। রানী মৌমাছি দের থেকে দুই বছর বেঁচে থাকে। যে জমি হতে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে সেই জমির ফলন ২০% বেড়ে যায়। তবে ধামরাইয়ে আরো কয়েকটি এলাকার মধু সংগ্রহ করা হয়। তারা অনেকে ধামরাইয়ের স্থানীয় বাসিন্দা আবার অনেকে বাহির হতে ধামরাইতে এসে এই ব্যবসা করে আসছে। পোলেন নামক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন খাবার মৌমাছিকে দিতে হয়। তাছাড়া মৌমাছি মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেখা যায়, উপজেলার শরীফবাগ, বাঙ্গালপাড়া, হাজিপুর, কুশুরাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় মধু সংগ্রহ করা হয়। তবে এই শিক্ষক দম্পতি সরকারিভাবে কোন অনুদান পায়নি।শুধু মধু সংগ্রহই নয়, তারা নিজ এলাকায় প্রথমে রাস্তার পাশে বৃক্ষ রোপন করেন। তারপর নিজেদের জমিতে বৃক্ষ রোপন করে প্রাকৃতিক বন তৈরির কাজ চালু করেছেন।এছাড়াও নিজ জমিতে ১০০ টি বারোমাসি আম গাছ, ১০০ টি মাল্টা গাছ, ১০০টি কুল গাছ মোট ৫ প্রকারের ৫ শতটি ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। শিক্ষক হলেও প্রকৃতির প্রতি টান প্রচুর। তিনি শখ করে একটি গরু পরিবারের দুধের চাহিদা মেটানোর জন্য ক্রয় করে লালন পালন করেন। সেখান থেকে আজ তার গরুর খামার হয়ে গেছে। শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম জানান, গাছিরা মৌচাকে চাপ দিয়ে মধু সংগ্রহ করে। এতে মধুর গুনাগুন ৪০% নষ্ট হয়ে যায়। আর আমরা খামারে যন্ত্রের সাহায্যে বাতাস দিয়ে মধু সংগ্রহ করি। এতে আমাদের মধুর গুয়াগুণ অক্ষুন্ন থাকে। তিনি আরো জানান, আমাদের মধু যদি সরকারিভাবে বিক্রির কোন ব্যবস্থা হয় তাহলে আমরা মৌ খামারিরা আরো বেশি লাভবান হতে পারবো। তবে রাশেদুল ইসলামকে এই সব কাজে সব সময় উৎসাহ ও সহযোগিতা করে থাকেন তার স্ত্রী গোলাপজান।তবে বানিজ্যিকভাবে মধু খামার করে ভ্রাম্যমান মধু খামারী রাশেদুল ইসলাম দুই বছরের মাথায় আজ স্বাবলম্বী। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশের মৌ খামারিদের মধু দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হবে।আবার, অনেকের মধু বিদেশে যাচ্ছেও। রাশেদুল ইসলাম এরপরে ফরিদপুর জেলার ঝাজিড়া এলাকায় যাবেন। সেখানে প্রচুর কালোজিরে ও ধনিয়া পাতা চাষ হয়। সেখান থেকে প্রচুর মধু সংগ্রহ করা যায়। তারপর যাবেন ইশ্বরদী লিচুর এলাকায়। কৃষক আব্দুল বারেক বলেন, আমাদের এলাকায় যদি আরো বেশি মধু সংগ্রহ করা হতো তবে ফসলের উৎপাদন আরো বেড়ে যেত। ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হাসান বলেন, ধামরাইতে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। যদি প্রাকৃতিক কারণ ছাড়া সরিষা নষ্ট না হয় তবে সৌ খামারিরা প্রায় ৫ টন মধু সংগ্রহ করতে পারবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com