সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬ অপরাহ্ন

প্রাণেরভয়ে পালিয়ে বেড়ানো রিটনের কলাবাগান কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা

প্রদীপ কুমার দেবনাথ বেলাব (নরসিংদী) :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১

নরসিংদীর বেলাবতে প্রতিপক্ষের ভয়ে জীবন বাচাঁতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রিটন মিয়া। এরই মধ্যে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা কেটে দিয়েছে তার কলাবাগান। থানায় একটি অভিযোগ ও আদালতে একটি ১০৭ ধারায় মামলা করে আতঙ্কে কাটছে দিন। মামলার বিষয়ে অবগত হওয়ার পর প্রতিপক্ষরা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকি আর বাড়িতে হামলার কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম উৎকন্ঠা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে ভবঘুরে জীবন কাটাচ্ছে সে। ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চর কাশিম নগর গ্রামে। জানা যায় ঘটনাটির সূত্রপাত এক বছর আগে। রাজু মিয়ার ছেলে রিটন মিয়া একই গ্রামের তার প্রতিবেশী আসাদ মিয়ার মেয়ে শ্রাবন্তী আক্তারের স্বামী সোহাগ মিয়াকে সৌদিআরব পাঠায়। বিদেশে যাওয়ার পর প্রথম মাসেই কোম্পানিতে কাজ পাওয়ার পরও অস্বীকার করে সোহাগ মিয়া। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সোহাগের শশুর শাশুড়ী রিটনের প্রতি আক্রমনাত্মক হয়ে উঠে। রিটন বিষয়টি তার এজেন্সির মালিক মোঃ রাশিদ মিয়াকে জানালে তিনি তার নিজস্ব লোক সৌদি আরবের সোহাগের কর্মস্থলে পাঠান এবং সোহাগ মিয়ার আকামা প্রাপ্তির বিষয়ে নিশ্চিত হন। তবে কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মারফত জানতে পারেন সে আকামা প্রাপ্তির পর কোম্পানিতে কাজ না করে বাইরে কাজ করে। এতে কোম্পানির ম্যানেজার ক্ষিপ্ত হয়ে আবার আকামা কেড়ে নেন। পরবর্তীতে সোহাগ ও তার পরিবারের কান্নাকাটিতে আবারও এজেন্সি মালিক রাশিদ মেম্বারের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে তাকে আবার আকামা দেওয়া হয়। কিন্তু সোহাগের শশুর বাড়ির লোকজন বিষয়টি অস্বীকার করে রিটন মিয়াকে টাকা ফেরতের চাপ দেয়। বাড়িতে ও রাস্তাঘাটে একাধিকবার তার উপর হামলা চালায়। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য রিটন মিয়া গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে সকলের সামনে সোহাগ মিয়ার আকামা ও কাজ প্রাপ্তির বিষয়টি প্রমাণসহ উপস্থাপন করেন। সোহাগের শশুর আসাদ মিয়া ও তার অনুসারীরা সালিশ না মেনে চলে আসে এবং হুমকি ধমকি দিতে থাকে। এরপর স্বামীর নিরাপত্তার জন্য রিটন মিয়ার স্ত্রী মোছাঃ রোজিনা বেগম বাদী হয়ে বেলাব থানার এসআই গিয়াস উদ্দীনের মাধ্যমে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে তিনি সোহাগের শাশুড়ী সেলিনা বেগম(৪৮), সোহাগের স্ত্রী শ্রাবন্তী বেগম(২২), শশুর আসাদ মিয়া(৫২), আসাদের ছেলে শরীফ মিয়া(২৮) এবং তার স্ত্রী আসমা বেগমের(২২) নাম উল্লেখ করেন। অভিযোগ দাখিলের পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম মোস্তফা গোলাপ বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু, পুলিশ চলে যাওয়ার পর তারা আরো চড়াও হয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ আক্রমণ করতে যায়। গত ১৪ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মোটরসাইকেল যোগে বাড়িতে যাওয়ার সময় আসাদ গং রিটন মিয়াকে রাস্তায় আটক করে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। এলো -পাতাড়ি কিল, ঘুষি ও বাশ দিয়ে আঘাত করতে থাকলে তার স্ত্রী ও মেয়ে এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারধর করে। পকেটে থাকা মোবাইল ও নগদ ৬০,০০০ (ষাট হাজার) টাকা নিয়ে যায়। এরপর বিচারের আশায় বারবার স্থানীয় চেয়ারম্যান, থানায় ছুটোছুটি করতে থাকেন। বর্তমানে অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে রিটন। দুর্বৃত্তরা এতেই ক্ষান্ত হয়নি। গত ৯ জানুয়ারি রিটনের কলাবাগান কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ৩০ শতাংশ জমির পুরো কলাগাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রিটনের স্ত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা এ ব্যাপারে প্রতিপক্ষ আসাদ গংকেই দায়ী করেছে। রিটনের সাথে কথা হলে সে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এদের অত্যাচারে আমি এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাড়িতে এসে কাজকর্ম করতে না পারায় আমি আমার পরিবারের ভরণপোষণও ঠিকমতো করতে পারছিনা। তারা আমার কলাবাগান কেটে দিয়ে আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। অনবরত হুমকি ধমকি দিচ্ছে এবং বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। যেকোনো সময় ওরা আমাকে মেরে ফেলতে পারে। তাই প্রাণের ভয়ে আমি বাড়িছাড়া। রিটনের স্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি জানান সন্ধ্যা হলেই ওরা আমার বাড়িতে ইটপাটকেল ছুঁড়ে, বাড়ির গেটে লাঠি দিয়ে আঘাত করে, আমাদেরকে ধরে নিয়ে হত্যা করার হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে কথা হয় স্থানীয় অধিবাসী আব্দুর রহমানের সাথে। তিনি জানান রিটনের উপর একপ্রকার নির্যাতন করছে আসাদ ও তার পরিবার। বারবার বুঝানোর পরও তারা আমাদের কথা শুনতে রাজি নয়। এখন আবার কলাবাগান কেটে দিয়েছে এটা অন্যায়। এদেরকে মানুষ কিছু বলতে সাহস পায়না কারণ, মহিলারা এগিয়ে আসে। শরীয়ত মিয়া বলেন এরা ন্যাক্কারজনক আচরণ করছে। মহিলাদের ভয়ে কিছু বলেনা মামলা খাওয়ার ভয়ে। রাশিদ মেম্বার বলেন, আসাদ ও তার পরিবারের লোকগুলো চরম মিথ্যুক। তারা আইন কানুন মানেনা। স্থানীয় চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা গোলাপ বলেন, আমি তাদেরকে বসে সমাধান করে দেওয়ার কথা বললেও কাউকে বসাতে পারছিনা। এ ব্যাপারে থানার এসআই গিয়াস উদ্দীন জানান আমি অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাস্তবতার মিল পেলেও চেয়ারম্যান সাহেব সমাধান করবেন বলে আমি এগুতে পারিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com