বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
নতুন প্রজন্মের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস জানাতে হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন ক্রেতারা’ গাজীপুরে বেতনের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতাদের বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক: ওবায়দুল কাদের ঐতিহাসিক বদর দিবসের আলোচনা সভায় মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো ছয়টি রাজ্যের ভোটাভুটিতে ট্রাম্পের থেকে এগিয়ে বাইডেন জিয়াউর রহমানকে অসম্মান করা মানে স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা : মির্জা ফখরুল নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের প্রথম সারির দেশ বাংলাদেশ : ধর্মমন্ত্রী

‘বহুতল টিএসসি’র পরিকল্পনাকে যেভাবে দেখছেন স্থপতিরা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২১

ইতিহাস-ঐতিহ্যের জায়গা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসি’র পুরনো ভবন ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্তে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে নতুন ভবনের নকশা তৈরির কাজও শেষের দিকে। তবে দেশের স্বনামধন্য স্থপতিরা বলছেন, টিএসসির বয়স এখনও একশ’ বছর হয়নি। আইনিভাবে এটি প্রাচীন ভবন নয়। তারা আরও বলছেন, টিএসসির ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। তা না-হলে সাংস্কৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। এসব স্থাপনা নষ্ট করলে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি হবে। পুরনো ইতিহাস সংরক্ষণ না করলে এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে খুবই ভয়াবহ। তখন এটি হবে জাতির জন্য গভীর হতাশার।
খ্যাতিমান স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর, যিনি অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশটিকে রুচিশীল নান্দনিকতার সমন্বয়ে সাজিয়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন। টিএসসি নিয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে চর্চাটা কী, সেটি দেখতে হবে। এ দেশে আমরা ইতিহাসকে শ্রদ্ধা করি না।মানুষের অবদানকে শ্রদ্ধা করতে শিখিনি। সে জন্যই পুরনো জিনিসকে সংরক্ষণ করতে পারছি না। এসব কারণে আমাদের সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। উন্নয়ন হবেই, এর সঙ্গে মানুষের আচার-ব্যবহার, সংস্কৃতিরও উন্নতি হতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশে বহুতল ভবন হয়েছে। তারা কিন্তু পুরনো জিনিসকে নষ্ট করে করেনি।’
জানা গেছে, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থাপত্য অধিদফতরের স্থপতিরা টিএসসির নতুন ভবনের নকশার তৈরির কাজ করছেন। কোন আঙ্গিকে নকশা তৈরি করা হচ্ছে, তা সংশ্লিষ্ট স্থপতিদের সঙ্গে কথা বলেও জানা যায়নি। প্রশ্ন করলে এ প্রতিবেদককে এড়িয়ে যান স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি আ স ম আমিনুর রহমান।
টিএসসিতে কত তলা ভবন তৈরি হতেÍ এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘কিছুই বলতে পারবো না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে চাহিদা, সেটির ওপরে নির্ভর করবে। চাহিদা অনুযায়ী কত তলা তৈরি করা হবে, তা পরে বলা যাবে। হয়তো আমরা ভাবলাম ১০ তলা ভবন তৈরি হবে, কিন্তু পরে দেখা গেল যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে চাহিদা তা ৫ বা ৬ তলার মধ্যে হয়ে যাবে। অনেক সময় সরকার ২০ বা ২৫ তলা ভবন তৈরির কথা বলে, কিন্তু দেখা গেল যে চাহিদা, সেটি অনুযায়ী সাত বা আট তলার মধ্যেই হয়ে যায়। কিন্তু টিএসসির ক্ষেত্রে এ রকম কিছু ঘটছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনেকের অভিযোগ, টিএসসির পাশ দিয়ে মেট্রোরেল তৈরি করা হয়েছে। মেট্রোরেলের জন্যই টিএসসিকে ভাঙার পরিকল্পনা হচ্ছে। তারা আরও বলছেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ভবন তৈরি করা প্রয়োজন, তা না-করে টিএসসি ভেঙে ভবন তৈরি করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিএসসির দেয়ালের পাশে মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। সেখানে টিএসসির একটি দেয়াল ভেঙে কাজ করা হয়েছে। যদিও কাজ শেষে দেয়ালটি আবারও নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দিয়ে মেট্রোরেল নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল আত্মঘাতী বলে মন্তব্য করেন এনামুল করিম নির্ঝর। তিনি আরও বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠানের পাশেই বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন, যেখানে বাংলা একাডেমি এবং শহীদ মিনার আছে, সেখানে বিভাজন কেন করা দরকার? একটি দেশে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছি না। অন্তত সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও তো হতে পারি, বরং আরও বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য গভীর হতাশার। এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে খুবই ভয়াবহ। ক্ষমতা দিয়ে এসব কাজ করাই যেতে পারে, কিন্তু মানুষকে কখনও অনুপ্রাণিত করা যায় না, হয়তো মানুষকে শাসন করা যায়।’
ইঞ্জিনিয়ারিং আর্কিটেক্টস, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক স্থপতি আল্লামা আল রাজি বলেন, ‘টিএসসির এখনও একশ’ বছর বয়স হয়নি। সেই অর্থে আইনগতভাবে এটি প্রাচীন ভবন না। এছাড়া এটি হচ্ছে একটি স্থাপনা। এখন আমরা ঐতিহাসিক স্থাপনাকে সংরক্ষণ করবো কী করব না, সেটি জাতীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সমস্যা কি টিএসসিতে বহুতল ভবন না হওয়া? নাকি গবেষণা না হওয়া, শিক্ষার মান উন্নত না হওয়া? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো আমলা সৃষ্টির জায়গা না। এটির মূল কাজ হলো নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ কতটা? টিএসসিতে ভবন তৈরির জায়গা আছে, কিন্তু গবেষণার জন্য বরাদ্দ এত কম কেন?’
নকশা চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম সিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে কিছু প্রয়োজনীয় চাহিদার কথা জানিয়েছি। সেই চাহিদার আলোকে স্থাপত্য অধিদফতর একটি নকশা তৈরির কাজ করছে। সেটি প্রস্তুত হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দেখাবে। তখন যদি চাহিদা পূরণ হয়, এরপর সেটি প্রধানমন্ত্রীকে দেখানো হবে। তিনিই অনুমোদন দিলে নকশাটি চূড়ান্ত হবে।’
টিএসসিতে হতে পারে ৯ তলা ভবন: এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম সিকদার বলেন, ‘সর্বশেষ স্থাপত্য অধিদফতরের সঙ্গে যে সভা হয়েছে, সেখানে অধিদফতরের প্রকৌশলীরা ৯ তলা ভবনের একটি নকশা দেখিয়েছেন।’ মূলত স্থাপত্য অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার ইঞ্জিনিয়ার একেএম মাহবুব মুস্তাফা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টিএসসিতে বর্তমানে যেসব অ্যাকোমোডেশন সুবিধা রয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা বিবেচনা করে অ্যাকোমোডেশন সুবিধা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করেছি। প্রস্তাবনায় টিএসসির মিলনায়তন, ক্যাফেটেরিয়া, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য নির্ধারিত স্থানের সু-ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।’ আগামী ৩১ জানুয়ারি স্থাপত্য অধিদফতর টিএসসির মূল নকশা তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দেখাবে। নকশা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে বলেও স্থাপত্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে। টিএসসির নকশার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি আ স ম আমিনুর রহমান  বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। টিএসসির নকশার কাজ এখনও চলমান। নকশার কাজ শেষ হলে আমরা জুরি কমিটির কাছে পাঠাই। ওনারা দেখে মতামত দিয়ে থাকেন। আমাদেরকে যেভাবে বলা হয়, আমরা সেভাবে নকশার কাজ করি।’-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com