সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের পূর্ব সদরগড় গ্রামের পশ্চিমে ধোপাজান নদীতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত অভিযানে বালি পাথরবাহী নৌকা হতে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ধোপাজান নদীতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আল জিনাত সরকারের বিধিনিষেধ অমান্য করে চোরাই পন্থায় বিভিন্ন ইঞ্জিন চালিত নৌকায় অবৈধভাবে বালি পাথর উত্তোলনের দায়ে ১৮জন বালিপাথর ব্যবসায়ীকে এই অর্থদন্ড প্রদান করেন। এসময় জুডিসিয়েল পেশকার (জেপি) মোঃ সালেহ আহমদ ও সদর মডেল থানার এসআই হুমায়ুন কবীরসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। জরিমানা প্রদানকারীরা সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের কাইয়ারগাঁও, ডলুরা, সুরমা ইউনিয়নের হুরারকান্দা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের ভাদেরটেক গ্রামের বাসিন্দা বলে জানান এলাকাবাসী। এদিকে অর্থদন্ডভোগী ব্যবসায়ীরা জানান,আমরা মোবাইল কোর্টের ধার্যকৃত অর্থদন্ডে প্রদত্ত অর্থ তাৎক্ষনিকভাবে জমা দিয়ে রসিদ নিয়ে আমাদের উত্তোলিত বালি পাথরবাহী নৌকা ধোপাজান নদী হতে বের করে নিয়েছি। পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যেকে ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করেছি। পরে নদী হতে নৌকা বের করে সুরমা নদীতে বের হওয়ামাত্র সদর উপজেলার টোলট্যাক্স উত্তোলনকারী, পৌরট্যাক্স আদায়কারী ও বিআইডব্লিউটিএর নামে আরো ৩টি দল আমাদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছে। এদিকে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান শেষ হতে না হতেই প্রথম দফায় ২১টা নৌকা ধোপাজান নদী হতে বের হয়ে যায়। পরে বের হয় আরো ৫টি ইঞ্জিন নৌকাসহ মোট ২৬ টা নৌকা। এরপরে রাত্রে তৃতীয় দফায় আরো ২টা নৌকা বের হয়ে যায়। আদালতের অভিযান শুরু হওয়ার আগেই একজন স্পীডভোটের ড্রাইভার,“এই তোমরা নাম লেখাও। তোমরার জরিমানা আমরা কমাইয়া দিমুনে”। এই কথা বলে প্রথম দফায় ১১টা নৌকা থেকে ৫ হাজার করে ৫৫ হাজার টাকা আদায় করে ঐ ড্রাইভার। ঐদিন ধোপাজান নদীর পাড়ে পুলিশ ক্যাম্পের নিকটে আসা এসপি অফিসের একজন স্টাফ বিষয়টি জানেন বলেও কোন কোন ব্যবসায়ীরা জানান। ভাদেরটেক এর আল-আমিন নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, জরিমানার রসিদে ৩০ হাজার টাকা উল্লেখ থাকলেও একজন পুলিশ অফিসার আমাদের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। সদর মডেল থানার এসআই হুমায়ুন কবীর বলেন, পুলিশকে কেউ টাকা দেয়নি। আমি বা আমার কোন পুলিশ ফোর্স কারো কাছ থেকে কোন টাকাও নেয়নি। আমরা মোবাইল কোর্টের আদায়কৃত জরিমানার অর্থ তাৎক্ষনিকভাবে আদায় করে আদালতের অর্থ আদালতকে যথারীতি সমজিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, জরিমানার বাইরে অর্থাৎ জরিমানা বা অর্থদন্ডের রসিদ দেখিয়ে ভাদেরটেক এর ফারুক নামে এক ব্যবসায়ী কয়েকটি নৌকা নিয়ে প্রক্সি দিয়ে ধোপাজান নদী হতে বের হওয়ার চেষ্টা করেছিল। পরে তাকে নৌকাসহ ভেতরে পাটিয়ে দিয়েছি। আদালতের অভিযান ব্যতিত কোন নৌকা বের হতে দেইনি। বিশ্বম্ভরপুরের ১টি ও সদর উপজেলার ১৮টিসহ মোট ১৯টি বালিপাথরবাহী ইঞ্জিন নৌকা ধোপাজান নদী হতে বের হয়েছে ঐদিন। তিনি বলেন,ভ্রাম্যমান আদালতের বৃহস্পতিবারের অভিযান ছাড়াও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয়ের পরিচালিত পূর্বের অপর একটি অভিযানের নীলামকৃত বালিপাথর বুঝাই করা কয়েকটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ধোপাজান নদী হতে পুলিশকে যথারীতি কাগজপত্র প্রদর্শন করে বের হয়ে যায়। এর বাইরে আমরা কোন বালিপাথরবাহী ইঞ্জিন নৌকা ধোপাজান নদী হতে বের হতে দেইনি। এদিকে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনাকালে এলাকাবাসীর সংবাদে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক আল-হেলাল ঘটনাস্থলে যান। এলাকাবাসীর পক্ষে ব্যবসায়ী ফুল মিয়া, সিরাজ মিয়াসহ সদরগড় গ্রামবাসী জানান, ধোপাজান নদীর পাড়ে গভীর রাতে বালু পাথরবাহী ইঞ্জিন নৌকাগুলো রাখার কারণে নদীর পাড় ভেঙ্গে আমরা এলাকাবাসীর ক্ষতিসাধন অব্যাহত রয়েছে। আমরা এ পর্যন্ত যতজন কে মোবাইল কোর্টের আওতায় জরিমানা ধার্য্য করা হয়েছে তাদেরকে আসামী করে মামলা করে নদীভাঙ্গনের জন্য আদালতে বিচারপ্রার্থী হইবো।