দেশে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকাদান কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার পর রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থেকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধনের পরপরই নিবন্ধনের জন্য অনলাইন ‘সুরক্ষা’ প্ল্যাটফর্ম খুলে দেওয়া হয়েছে। এখন দেশব্যাপী ভ্যাকসিন দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করতে আর বাধা থাকলো না। ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখ থেকে দেশব্যাপী ব্যাপকহারে এ কার্যক্রম চলবে। গত মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন প্রথমদিন বুধবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেই টিকা দেওয়া হবে। বাকি চারটি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) থেকে শুরু হবে প্রাথমিক পর্যায়ের টিকাদান কর্মসূচি। তিনি বলেন, চিকিৎসাকর্মী, সেনাবাহিনীর সদস্য, পুলিশ, খেলোয়াড় ও সাংবাদিকসহ ২০-২৫ জনকে টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) ও মুগদা হাসপাতালে ২৮ জানুয়ারি থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এসব হাসপাতালের ৪শ থেকে ৫শ স্বাস্থ্যকর্মীকে সবার আগে টিকা দেওয়া হবে। টিকা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে প্রতিটি হাসপাতালেই আলাদাভাবে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এর আগে ২০ জানুয়ারি ভারত সরকারের উপহার দেওয়া অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিডশিল্ড দেশে পৌঁছায়। সোমবার (২১ জানুয়ারি) দেশে আসে বেক্সিমকোর কেনা তিন কোটি টিকার প্রথম ৫০ লাখ ডোজ। এর মধ্যে ৬০ লাখ দেওয়া হবে প্রথম মাসে, দ্বিতীয় মাসে ৫০ লাখ, তৃতীয় মাসে আবার ৬০ লাখ। প্রথম মাসে যারা পাবেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে তৃতীয় মাসে। চুক্তি অনুযায়ী বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ঢাকা থেকে দেশের ৬৪ জেলার সিভিল সার্জনের কাছে টিকা পাঠানো হবে। এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ভারত থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের আনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ ডোজ টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, টিকার প্রতিটা লটের নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমদ বলেন, ইতোমধ্যে টিকা দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার বিকেল ৩টায় প্রাথমিক পর্যায়ের টিকা দেওয়া হবে। টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মীসহ প্রায় ১শ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঁচজনকে টিকা দেয়া হয়। টিকা নেয়ার আগে নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তাকে (দেশের প্রথম টিকা গ্রহণকারী) প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার ভয় লাগছে না তো?’ উত্তরে রুনু ‘না’ বললে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব সাহসী তুমি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি আরও বেশি করে রোগীদের সেবা কর।’ এরপর একে একে আরও চারজন টিকা নেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন।
এদিন রুনু ছাড়া টিকা নিয়েছেন- চিকিৎসক আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা, ট্রাফিক পুলিশের মতিঝিল বিভাগের কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ।