অভাবের তাড়নায় দেড় বছর বয়সী এক শিশুকে ব্রিজ থেকে অথৈই পানিতে ফেলে দিয়েছেন এক মা। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর বলদিয়া ইউনিয়নের কাশিম বাজার এলাকায় এই হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে। দেড় বছর বয়সী শিশুটিকে পানিতে ফেলে দিয়েই মা জমিলা বেগম নিজ বাড়িতে চলে যান। পথচারী ও স্থানীয়রা শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে। শিশুটি সুস্থ অবস্থায় বর্তমানে স্থানীয় রফিকুল ইসলাম ও এলিনা বেগম দম্পত্তির কাছে রয়েছে। জমিলা বেগম জানান, এক বছর আগে স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়। দুই মাসের শিশু জাহিদকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি রংপুর থেকে উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম কেদার গ্রামের দরিদ্র পিতা জয়নাল মিয়ার বাড়িতে ফিরে আসেন। দিনমুজুর পিতার সংসারে অভাব অনটনের কারণে সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে প্রায় সময় ঝামেলা হতো। সন্তানের ভরণপোষণ চালাতে না পারার ব্যর্থতা থেকে সন্তানকে পানিতে ভাসিয়ে দেয়ার চিন্তা আসে তার মনে। জমিলার পিতা জয়নাল মিয়া জানান, সকালে আমার ছেলে সহ মাটি কাটতে যাই। মাটি কাটার স্থানের একটু দুরে মানুষের কোলাহল শুনে জানতে পারি জমিলা তার ছেলে জাহিদকে পানিতে ফেলে দিয়েছে। কি কারণে এমন কাজ করলো তা জানিনা। তিনি আরো জানান, দুই বছর আগে রংপুরের মর্ডান মোড়ের বাসিন্দা হাফিজুরের সাথে জমিলার বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পরেই সংসার ভাঙ্গে জমিলার। এসময় দুই মাসের শিশু জাহিদকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে জমিলা। অপরদিকে তিন সন্তান নিয়ে বড় মেয়ে জরিনা তার সংসারে ফিরে এসেছে। নয় সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ করেত হিমশিম খেতে হচ্ছে। জমিলার মা জবেদা বেগম জানান, জমিলার সন্তান নিয়ে পরিবারে প্রায় সময় অশান্তি লেগে থাকতো। জমিলার বৃদ্ধা নানী সুফিয়া বেওয়া জানান, তার ভিক্ষাবৃত্তির চাল দিয়ে মাঝেমধ্যে জমিলার সন্তানের খরচ চলতো। তবে জমিলাকে সন্তানের জন্য অনেক কথা হজম করতে হতো। এসব থেকে বাঁচতেই হয়ত সন্তানকে পানিতে ফেলে দিয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, জমিলা শুক্রবার সবার অজান্তে দুই কেজি চাল বিক্রি করে শিশুর জন্য খাবার ও তেল সাবান কিনে আনে। এতে তার বাবা রাগা হয়ে জমিলাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। মনের দুঃখে অবুঝ শিশুকে নিয়ে হতাশ জমিলা বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কাশিম বাজার সংলগ্ন একটি ব্রীজের ওপর থেকে শিশুটিকে অথৈই পানিতে ফেলে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শী দুলাল হোসেন জানান, সকাল নয়টার দিকে তিনি ওই পথ দিয়ে বাজারে যাচ্ছিলেন। এসময় ব্রিজটির উপরে একজন মহিলাকে পানিতে কিছু ফেলতে দেখতে পান। পানিতে কিছু পড়ার শব্দ শুনে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখতে পান একটি শিশু পানিতে ভাসছে এবং হাত-পা নাড়াচ্ছে। তিনি চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় ফরিদুল ইসলাম সহ একজন পথচারী এগিয়ে এসে পানি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর ব্রিজ সংলগ্ন বাসিন্দা রফিকুল ও এলিনা বেগম দম্পতি শিশুটিকে হেফাজতে নিয়ে শুশ্রুর্ষা করেন। এলিনা রেগম জানান, শিশুটিকে দুধ খাওয়ানো হয়েছে। তিনি শিশুটিকে লালন পালন করতে চান। বলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শিশুটি আপাতত রফিকুল ও এলিনা বেগম দম্পতির কাছে রয়েছে। শিশুটিকে তার মায়ের কাছে ফেরত দেয়া হবে।