রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
আমার কথা বলে চাঁদা-সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করলে পুলিশে দিন : আসিফ নজরুল তিস্তার পানি দ্রুত বাড়ছে আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন মাহমুদুর রহমান ঢাকার খাল দিয়ে ব্লু নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার : পানিসম্পদ উপদেষ্টা শিক্ষাব্যবস্থায় হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদ বরদাস্ত করা হবে না : মামুনুল হক নৌকা থাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন হতে পারে : উপদেষ্টা আদর্শিক ভিন্নতা থাকলেও সবাই একসঙ্গে জাতি গঠনে কাজ করবে: মঞ্জুরুল ইসলাম জাতিসংঘে ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা মাহমুদ আব্বাসের মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের দাফন ছাত্র-জনতার অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয় স্বৈরাচার থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছে

অন্তরে খোদাভীতি পোষণ

আবু তালহা রায়হান
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

মহান আল্লাহ তায়ালা নশ্বর এ পৃথিবীর মালিক। আমাদের সৃষ্টিকর্তা। আসমান এবং জমিনে যা কিছু আছে, সব তাঁর অধীন। তিনি এক, অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো সমক্ষক নেই, নেই কোনো শরিক। তিনি অনন্ত, অসীম। তিনি চিরঞ্জীব। তাঁর মৃত্যু নেই, নেই জন্মও। তিনি রজনীকে ঢুকান দিবসের মধ্যে আর দিবস ঢুকান রজনীর মধ্যে। তাঁর ইশারায় সূর্য উঠে, রাতের আকাশে তারার মেলা বসে। জোছনা রাতে মিষ্টি চাঁদ শুভ্র হাসিতে আমাদের মাতিয়ে তোলে। লাল সূর্য প্রভাত রাঙিয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করে। তপ্ত রোদে আকাশ থেকে রহমতের বারি ঝরে। পাখিরা মধুর সুরে গান গায়। সাগরের অতল গহ্বরে বাস করা অণুজীব থেকে শুরু করে আরশে আজিম পর্যন্ত যা কিছু আছে, সবই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করেন। সম্মানিত করেন। আবার যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। তাঁর সৃষ্টিজাতকে যেমন খুশি তেমন নাচান। তিনি সর্বশক্তিমান। আমরা আল্লাহর সৃষ্টি মানবজাত। শ্রেষ্ঠ জাত। মহান আল্লাহ তাঁর অসীম অনুগ্রহে আমাদেরকে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। চাইলে অন্যসব প্রাণীদের মতো আমাদেরও নির্বোধ করে সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্তু না, আমরা ভালোকে ভালো আর মন্দকে মন্দ বলতে জানি। সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারি। হক বাতিলের ফারাক বুঝি। আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে মৌলিকভাবে তার সৃষ্টিকর্তা চেনার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানসামগ্রী দিয়েই সৃষ্টি করেছেন।
মানবজাতিকে এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করেছেন কেবল তাঁর ইবাদত করার জন্য। তাঁর হুকুম-আহকাম মেনে চলার জন্য। তাঁকে ভয় করার জন্য। আল্লাহর ভয় মানুষকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। অথচ মানবজাতি মহান স্রষ্টাকে ভুলে গিয়ে তাঁর সৃষ্টিকে ভয় করে! আজকাল কোনো এলাকায় বাঘের দেখা মিললে সেখানকার মানুষের রাতে ঘুম হয় না। বাঘের ভয়ে চোখের ঘুম চলে যায়। নির্ঘুম রজনী পার করে! অথচ (বাঘের সৃষ্টিকর্তা) আল্লাহকে ভুলে গিয়ে ফরজ নামাজ আদায় করে না। রমজানে রোজা রাখে না। ধর্ষণ, ব্যভিচারসহ জগতের যাবতীয় পাপকর্মে লিপ্ত হয়। আর আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলছেন, তোমরা আমাকে ভয় করো, আমার সৃষ্টিকে নয়। ইসলামের প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আলী রা: আল্লাহকে প্রচ- ভয় করতেন, তাই তো তিনি শক্তিশালী বাঘের মোকাবেলায় জয়ী হয়েছিলেন। যারা আল্লাহকে ভয় করে, পৃথিবীর কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না। আর যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে অন্য কিছুকে ভয় করে, পৃথিবীর কেউ তার উপকার করতে পারে না।
‘যাদের হৃদয়ে আছে আল্লাহর ভয়/তারা কভু পথ ভুলে যায় না। আল্লাহর প্রেম ছাড়া এই দুনিয়ায়/কারো কাছে কোনো কিছু চায় না।’
কবি ও গীতিকার বেলাল হোসাইন নুরীর লেখা এই গানে আমরা আল্লাহর প্রতি ভয়ের এক ধরনের পবিত্র অনুভূতি খোঁজে পাই। পবিত্র কুরআন-হাদিসেও আল্লাহকে ভয় করে জীবন পরিচালনার বিষয়ে নানা নির্দেশনা ও দৃষ্টিভঙ্গি এসেছে।
ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাকো, তবে আমাকে ভয় করো’ (সূরা আলে ইমরান-১৭৫)।
আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়’ (সূরা আল ফাতির-২৮)।
মহান রাব্বুল আলামিন কালামে পাকে ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে সিজদা ও দ-ায়মান হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে এবং আখিরাতকে ভয় করে ও তার পালনকর্তার রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এরূপ করে না; বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান’ (সূরা আজ যুমার-৯)।
আল্লাহর ভয়ে ভীত বান্দা পরকালে শেষ বিচারের দিন আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামত দিবসে এমন ব্যক্তি আরশের নিচে ছায়া পাবে, যাকে কোনো অভিজাত সুন্দরী রমণী প্রস্তাব দেয়া সত্ত্বেও সে বলে; আমি আল্লাহকে ভয় করি’ (বুখারি)।
অন্য এক হাদিসে নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘জেনে রেখো! আল্লাহর শপথ আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে অধিক সমীহ করি এবং অধিক ভয় করি’ (মুসলিম)।
যার মধ্যে আল্লাহর ভয় আছে, সে কিয়ামতের দিন নিরাপদে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ করেন, ‘আমার ইজ্জতের কসম! আমার বান্দার জন্য দু’টি ভয় ও দু’টি নিরাপত্তাকে একত্র করি না। যদি সে দুনিয়ায় আমাকে ভয় করে তবে কিয়ামত দিবসে আমি তাকে নিরাপত্তা দান করব। আর যদি দুনিয়ায় আমাকে নিরাপদ মনে করে (ভয় না করবে) কিয়ামতের দিন তাকে আমি সন্ত্রস্ত রাখব (বায়হাকি)।
আলোচ্য আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, মানব হৃদয়ে এক আল্লাহর প্রতি ভয় পোষণ করা অত্যাবশ্যকীয় বিষয় এবং এটাও প্রমাণিত হয় যে, ভয় ঈমানের বৈশিষ্ট্যসমূহের মাঝে অন্যতম। সুতরাং বান্দার ঈমানের গভীরতার অনুপাতে তার মধ্যে আল্লাহর ভয় থাকবে। মানবমনে যখন খোদাভীতি সঞ্চারিত হয়, তখন তা প্রবৃত্তির মন্দ তাড়না ও চাহিদাগুলোকে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দেয়। ফলে তার মন থেকে দুনিয়ার মোহ কমে যায়। সব রকমের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পরহেজ থাকে। শয়তানি প্ররোচনায় লিপ্ত হয়ে কোনো মানুষের যখন খারাপ কাজ করার সুযোগ আসে, তখন সে যেন ভাবে, আমার খারাপ কাজগুলো দুনিয়ার কেউ না জানলেও কিংবা না দেখলেও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা দেখছেন। কিরামান কাতিবিন আমাদের সব আমলনামা সার্বক্ষণিক লিপিবদ্ধ করছেন। অতএব সব সময় অন্তরে আল্লাহর ভয় পোষণ করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। লেখক : ছড়াকার, প্রাবন্ধিক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com