মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো বড় আকারে প্রতিবাদ হয়েছে দেশটির রাজপথে। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গণপ্রতিবাদে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা ‘অমঙ্গল দূর হবে’ বলে শ্লোগান দেন এবং রীতি অনুযায়ী অমঙ্গল দূর করতে তারা হাঁড়ি-পাতিল বাজান। জানা যায়, দেশটির অন্তত ২০টি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মীরা ধর্মঘট করার পরিকল্পনা করছেন। আন্দোলনকারীরা আইন না মানার ডাকও দিয়েছেন।
সু চিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। দলটি ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে তাদের জয়ের স্বীকৃতি দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে দলটি। গত নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সুচির এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। সোমবার নবনির্বাচিত সংসদের প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী অধিবেশন স্থগিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় । বৈঠক শুরুর প্রাক্কালে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এখন সামরিক প্রধান ও অভ্যুত্থানের নেতা মিন উং লাইং দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। সাবেক জেনারেল মিয়ন্ট সুই ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
“মিয়ানমার সেনা অভ্যুত্থানের চিত্র নিজের অজান্তেই ধারণ করেন যে নারী” শিরোনামে বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে অ রেক মজার তথ্য। সামনে আর পেছনে হাত ছুড়ে, ক্যামেরার সামনে নেচে চলেছিলেন মিয়ানমারের ফিটনেস প্রশিক্ষক খিন নিন ওয়াই। তবে সাধারণ এসব শরীর চর্চা দেশটির অসাধারণ একটি দিনেই করছিলেন তিনি। প্রথম দেখায় ভিডিওটিকে একটি সাধারণ নাচের শরীর চর্চার ভিডিওর মতোই মনে হয়। কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে দেখা যায় যে, সশস্ত্র একটি গাড়ি বহর এগিয়ে চলেছে যা আসলে সাধারণ নয়। অ্যারোবিকস শিক্ষক মিস খিন গত সোমবার সকালে ফেসবুকে তার ভিডিওটি পোস্ট করেন। ওই সময় মিয়ানমারের সামরিকবাহিনী একটি সেনা অভ্যুত্থান প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল, অং সান সু চিসহ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত তার দলের অন্য নেতাদের গ্রেফতার করছিল। এর পরে সামরিক বাহিনী ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং দেশটিতে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করে। এর মধ্যেই মিস খিন গানের সুরে তার কোমর ঘুরিয়ে চলছিলেন। তিনি আসলে বুঝতেই পারেননি যে তার চারপাশে কী ঘটে চলেছে। রাজধানী নেপিডোতে পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সের দিকে যাওয়া প্রধান সড়কের মোড়ে ভিডিওটি ধারণ করেন তিনি। তার পোস্টটি দেয়ার পর পরই ওটি ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই মিস খিনের নাচ এবং সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের মধ্যে যে বিপরীত চিত্র অঙ্কিত হয়েছে ভিডিওটিতে সেটি নিয়েও কমেন্ট করেছেন। ‘ব্যাকগ্রাউন্ডের ছবি আর গানের মধ্যে মিল রয়েছে,’ মূল পোস্টে এমনটাই লিখেছেন তিনি। ‘সকালের খবর আসার আগ পর্যন্ত একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য ভিডিওটি ধারণ করছিলাম আমি। কেমন স্মৃতি হয়ে রইলো এটি!’
ভিডিওটি কি আসল? হ্যাঁ, ভিডিওটি আসল। তবে যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার মুহূর্তে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিলো তার কারণে ভিডিওটি নিয়ে প্রথমে কিছুটা সন্দেহ জাগে বৈকি। কিন্তু যখন ইন্টারনেটে দেখা হয়, সাংবাদিক এবং ভুল তথ্য নিয়ে অনুসন্ধানকারীরা এটির উৎস সম্পর্কে যাচাই করে দেখেন, তখন আর এর সত্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে না। বিবিসি মিস খিনের সাথে যোগাযোগ করেছে এবং তিনি জানিয়েছেন যে এটি আসল।
আরেকটি ফেসবুক পোস্টে এই ফিটনেস প্রশিক্ষক জানিয়েছেন যে, ‘গত ১১ মাস যাবৎ’ নাচের ভিডিও তৈরির জন্য ওই স্থানটি তার প্রিয় হয়ে উঠেছিল। এই দাবি প্রমাণ করার জন্য একই স্থানে এর আগে নাচের আরো কিছু ভিডিও প্রকাশ করেন তিনি। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সমর্থকদের সমালোচনা থেকে বাঁচতে তিনি ফেসবুকে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। ‘কোন প্রতিষ্ঠানকে উপহাস করার জন্য বা নির্বোধের মতো আমি নাচ করিনি। একটি ফিটনেস ডান্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নাচছিলাম আমি,’ খিন লিখেন। ‘নেপিডোতে যেহেতু এ ধরণের গাড়িবহর নতুন কিছু নয়, তাই আমি ভেবেছিলাম যে সেটি সাধারণ কোনো গাড়িবহরই হবে আর এ জন্যই নাচ বন্ধ করিনি আমি।’
ভিডিওর প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া হয়েছে? সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি ব্যাপকভাবে দেখা এবং শেয়ার করা হয়েছে। টুইটারে ভারতীয় এক সাংবাদিকের করা একটি পোস্টই ১৬.৫ মিলিয়ন বার দেখা হয়েছে। ‘অবাক করা’, ‘অবিশ্বাস্য‘ ও ‘সংবেদনশীল’ বলে ভিডিওটিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। রেডিটে এ নিয়ে বেশ কিছু সৃজনশীল পোস্টও দেখা গেছে। যেখানে খিনের ছবি অন্য কিছু ঐতিহাসিক ঘটনায়ও সংযুক্ত করা হয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে গত মাসে ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা। এদিকে ইন্দোনেশিয়ায় ভিডিওটি কিছুটা ভিন্ন ভাবার্থ তৈরি করেছে। খিন যে গানটি ব্যবহার করেছেন সেটি বিক্ষোভের গান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে যা কর্তৃপক্ষকে ব্যঙ্গ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। আম্পান ব্যাং জাগো নামের গানটি গত বছর একটি বিক্ষোভের সময় টিকটকে অনেক জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু খিনের বেলায়, গানটি আসলে কাকতালীয়ভাবেই মিলে গেছে। ফেসবুকে খিন বলেছেন যে তার রাজনৈতিক বা কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি বলেন যে, ভিডিওটি তিনি কোনো ‘পরিহাস’ বা ‘সেলিব্রেটি হওয়ার আশায়’ পোস্ট করেননি।