স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের মদতদাতাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে, বিভিন্ন জেলায় শোকজ ও বহিষ্কার চলছে দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ফেরাতে এবার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদতদাতা মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা দলীয় পদ হারাচ্ছেন! দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাদের তালিকা করে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আটটি টিম সারা দেশে বিদ্রোহীদের মদতদাতা নেতাদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তালিকা করা হচ্ছে। অভিযুক্ত এমপিদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হবে না। তবে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের দুই জন সদস্য ইত্তেফাককে জানান, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা শনিবার গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিদ্রোহীদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান তুলে ধরে বলেন, বিদ্রোহী ও তাদের মদতদাতাদের ভবিষ্যতে আর কোনো নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এই তালিকায় দলের কেন্দ্রীয় কোনো নেতা আছেন কি না, সেই তথ্য সংগ্রহেরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জানা গেছে, পৌরসভা নির্বাচনে সারা দেশেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি ছিল। হাইকমান্ডের কড়া নির্দেশের পরও এই অপচর্চার লাগাম টানা যাচ্ছে না। দলের প্রভাবশালীদের অনেকের আত্মীয়স্বজনই বিভিন্ন পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে হেরেছেন নৌকার ৯ প্রার্থী। তৃতীয় ধাপে দেশে ৬২টি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে ৪৫টি পৌরসভায়। ফলাফলের দিক থেকে এরপরই ‘বিদ্রোহী’ মেয়র পদপ্রার্থীদের অবস্থান। ১৩টি পৌরসভায় তারা নির্বাচিত হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, অনেক এলাকায় মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্য, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা বিদ্রোহীদের মদত দিচ্ছেন।
পাবনায় ১৮ শীর্ষ নেতাকে শোকজ: এদিকে পাবনা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আলী মর্তুজা বিশ্বাস সনির বিরোধিতা করায় জেলার ১৮ শীর্ষ নেতাকে শোকজ করা হয়েছে। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়। শোকজ নোটিশপ্রাপ্তরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বাবু, সহসভাপতি আব্দুল হামিদ মাস্টার, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আবু ইসাহাক শামীম, অ্যাডভোকেট বেলায়েত আলী বিল্লু, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল বারী বাকী, দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ বাবু, প্রচার সম্পাদক কামিল হোসেন, ধর্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, শ্রম সম্পাদক সরদার মিঠু আহমেদ, কার্যকরী সদস্য ইমদাদ আলী বিশ্বাস, উপদেষ্টা ইদ্রিস আলী বিশ্বাস, আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, লিয়াকত আলী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি তসলিম হাসান সুমন ও সাধারণ সম্পাদক শাজাহান মামুন।
শীর্ষ নেতাকে অব্যাহতি: অন্যদিকে নিজস্ব বলয় বা গ্রুপিং তৈরি করা, কোন্দল অব্যাহত রাখা, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্যকারী এবং দায়িত্বে অবহেলাসহ শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ পেলেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। গত নভেম্বরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিরাজগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের চারজন শীর্ষ নেতাকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল লতিফ বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এমপি, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত থাকায় জেলা আওয়ামী লীগের চার শীর্ষ নেতাকে অব্যাহতি এবং পাবনা সদর উপজেলা ও পাবনা পৌর আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণার মধ্য দিয়ে তৃণমূলে কঠোর বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অন্য জেলায় এরকম অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও এমন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।-দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইন