গৃহস্থালির কাজে প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য সামগ্রীর ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। চারিদিকে প্লাস্টিকের পণ্য সামগ্রীর দাপটে আজ বিলীনের পথে বাঁশের তৈরীকৃত গৃহস্থালি (বাঁশশিল্পের) এ সব পণ্য সামগ্রীর ব্যবহার। এক সময় শহর ও গ্রামগঞ্জে বাঁশের তৈরি পণ্য সামগ্রীর ব্যাপক প্রচলন ছিল। কিন্তু প্লাস্টিকের পণ্যের দাম সস্তা ও টেকসই হওয়ায় গৃহস্থালির কাজে প্লাস্টিক সামগ্রী বাজার দখল করে নেয়। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার এক সময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের আয়ের বড় উৎস বাঁশ দিয়ে তৈরীকৃত গৃহস্থালি পণ্য। সময়ের পরিবতর্নে কারণে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের পাশাপশি এখন সমাজের নিম্নআয়ের মানুষরাও এ পেশার সঙ্গে যুক্ত। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও হতদরিদ্র পরিবার গুলো শত কষ্টের মাঝেও গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরীকৃত পণ্য সামগ্রী বাপ-দাদা ও চৌদ্দ পুরুষের পেশা ধরে রাখাসহ বেঁচে থাকার লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে আমন ও বোরো মৌসুমে বাঁশের তৈরী এসব পণ্য সামগ্রীর কদর বেঁড়ে যাওয়ায় উপজেলার বালারহাট, ফুলবাড়ী হাট, খরিবাড়ী হাট, নেওয়াশী হাট ,গংগাহাট, কাশিপুর হাট, বেড়াকুটিহাট ও চিলাখানা হাটগুলোতে বাঁশে তৈরী এ সব রকমারি পণ্য সামগ্রী কুলা ৫০ টাকা, চালন ৫০ টাকা, ঢুলি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, টুকরি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, ঢালী ১০০ টাকা ,চালন ৫০ টাকা, ঝাঁড়– ৪০ টাকা, ঘোড়পা ১০০ টাকা ,ধারা ১৫০ টাকা,কবিতরের ভাসা ১০০ টাকা দরে বিক্রি ও এ সব পণ্য তৈরীতে ব্যস্ত সময় পাড় করেন। উপজেলার পানিমাছকুটি গ্রামের বিক্রেতা ছাইফুল ইসলাম(৫৬) ও চন্দ্রখানা বুদার পাড় গ্রামের হযরত আলী(৩৮) বর্তমানে ঁেবচা-বিক্রি কম। ধান মাড়াইয়ের সময় এর কদর বেশি। সে সময় আমরা এসব পণ্য তৈরী ও বিভিন্ন হাট-বাজারে-বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পাড় করি। এখন প্রতি হাটে খরচ মিটিয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় লাভ। কোন রকমেই বেঁচে আছি। অন্য দিকে ২০১৯ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগ হইতে মাষ্ট্রাস পাশ করে চাকুরী না পেয়ে পাশ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার গাগলা বদলিটারী থেকে ১৮ কিলোমিটার ফুলবাড়ী উপজেলার বালারহাট বাজারে বাঁশের তৈরি গৃহস্থালি রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন বিপ্লব চন্দ্র রায়। তিনি আরও জানান, তাদের কোন আবাদি জমি-জমা নেই। মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে তার বাড়ী। ৬ বোন ২ ভাই। ১ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে বিপ্লব বড়। সবার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে বাবা-মা, ৫ বোন ও ১ ভাইসহ ৯ সসস্যের ভরণ পোষনের দায়িত্ব বিপ্লব চন্দ্র রায়ের। ১ম বোন বিজলী রানী ও দ্বিতীয় বোন শাপলা রানী রংপুর কারমাইকেল কলেজের মাষ্টার্সের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তৃতীয় বোন বর্ণমালা রানী কাশিপুর ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে। চতুর্থ বোন বৃষ্টি রানী দশম , ভাই পল্লব চন্দ্র রায় সপ্তম শ্রেণীতে ও ৫ম বোন বর্ষা রানী পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। সকাল ভাই বোন পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়ীতে বাবা-মায়ের সাথে বাঁশের তৈরী পণ্য সামগ্রী তৈরীতে সহযোগীতা করেন। এভাবে সে ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ঐ সব পণ্য সামগ্রী বিক্রি কোন রকমেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। এ সব বিক্রি করে গড়ে প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় আয় করে ৯ সদস্যের সংসার পরিচালনাসহ ১ ভাই, ৫ বোনের পড়ালেখার খরচ জোগাইতো। কেউ যদি ছোট বোন বিজলী ও শাপলাসহ আমার একটা চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে কষ্টের সংসারের কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেত।