“দুইদিন শুধু পানি খাইয়া বাইচ্চা আছি। মোর মতো আরও ১০/১২ জন ইটভাটার শ্রমিকের একই অবস্থা। ক্ষুদার যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছিলাম না, তাই জীবনের ঝুঁকি জেনেও গ্রামের পথ দিয়ে পায়ে হেঁটে এসেছি। মোরা অন্য জেলার লোক তাই কেউ মোগো ত্রাণ পর্যন্ত দেয়নি”। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন-মহামারী করোনার কারণে দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম লকডাউন হওয়ার পর মাদারীপুর জেলায় আটকে পরার পর বরিশালের উদ্দেশ্যে আসা ইট ভাটার শ্রমিকরা।
মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে চারদিকে বিরাজ করছে এক প্রকার শুন্যতা। বর্তমানে সারাদেশ রয়েছে অঘোষিত লকডাউনে। কয়েকটি জেলাকে পুরোপুরি লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। লকডাউনকৃত জেলার মধ্যে মাদারীপুর জেলা অন্যতম। বরিশালের পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর জেলা বেশি ঝুঁকিতে থাকায় বরিশালবাসীকে সুরক্ষিত রাখতে ইতোমধ্যে বরিশালকে লকডাউন ঘোষনা করেছেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।
ফলে অভ্যন্তরীন যাত্রীবাহী পরিবহনসহ ছোট ছোট যান চলাচল, সীমান্তবর্তী খেয়া নৌকা বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও সড়ক পথে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র প্রবেশ পথ গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা বাসষ্ট্যান্ডে বসানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা চৌকি। বরিশালে প্রবেশ করতে এতো কঠোরতার পরেও থামানো যাচ্ছেনা বিভিন্ন জেলায় আটকে পরার পর ক্ষুার যন্ত্রনায় ভোগা ঘরমুখো মানুষের ভীর। প্রতিদিনই করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে নদী পথ কিংবা স্থলে পথে গোপনে নিজবাড়িতে ফিরছেন অসংখ্য মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকালে সড়কপথে বরিশাল বিভাগের প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলার সীমান্তবর্তী ভুরঘাটা বাসষ্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি। ওই নিরাপত্তা চৌকি দিয়ে অপ্রয়োজনীয়ভাবে কেউ ঢুকতে না পারলেও ভুরঘাটা ব্রিজের পশ্চিম পার্শ্বে দেখা গেছে ভিন্নচিত্র। কেউ গামছা পরে কিংবা লুঙ্গি পরে বাড়ি ফেরার জন্য ভুরঘাটার খাল পারি দিচ্ছে।
ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা এসব ঘরমুখো মানুষদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কর্মস্থলে না থাকার পরিবেশ ও ক্ষুদার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরেই তারা ঘরমুখো হয়েছেন। ক্ষুদার যন্ত্রণার ভয় এদের মধ্যে দেখা গেলেও চোখে না দেখা করোনার ভয় এদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়নি। এতে করে নিজেরা যেমন বিপদে পরছে অপরদিকে বাড়িতে গিয়ে নিজের অজান্তেই আপনজনদের বিপদে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে। তবে কর্মস্থলে থাকা খাওয়ার পরিবেশ থাকলে কেহই ঘরমুখো হতোনা বলেও তারা (শ্রমিকরা) উল্লেখ করেছেন।
ই-খ/খবরপত্র