ছাতকে পিয়াইন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে নদীর তীরবর্তী গোয়ালগাঁও গ্রাম। ইতিমধ্যেই গ্রামের একটি মসজিদ, পুরাতন কবরস্থান, গ্রাম্য সড়ক, গাইডওয়াল সহ অর্ধ শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বর্তমানে বালু উত্তোলনকারীদের আগ্রাসনে নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে গ্রামের আরো শতাধিক পরিবার। স্থানীয় লোকজনের বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে প্রতিনিয়তই নদী থেকে শ্রমিকদের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছে কতিপয় বালু ব্যবসায়ী। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে মাঝে-মধ্যে প্রশাসনের অভিযান চললেও তা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। জানা যায়, উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গোয়ালগাঁও গ্রাম ঘেসে বয়ে গেছে পাহাড়ী পিয়াইন নদী। এ নদীকে ঘিরে গোয়ালগাঁও গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ সুখে-দুঃখে বসবাস করে আসছে যুগের পর যুগ। শুস্ক মৌসুমে নদীর পানি অনেকটা কমে গেলে কতিপয় বালু ব্যবসায়ী শ্রমিকদের মাধ্যমে নদী থেকে বালু উত্তোলনে মরিয়া হয়ে উঠে। এ মৌসুমে প্রতিদিন সকাল হতে বিকাল পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে শ’ শ’ শ্রমিক বালু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত থাকে। শ্রমিকরা বালতি, বেলচা ও নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করে সরাসরি ইঞ্জিন চালিত বড় বড় নৌকা বোঝাই করতে দেখো গেছে। কোন কোন পয়েন্টে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়েও নৌকা লোডিং করছে শ্রমিকরা। এতে নদীর তলদেশ ক্রমেই নিম্মমুখী হচ্ছে। গ্রামের লোকজন জানান, বর্ষায় বালু উত্তোলনের কুফল ভোগ করতে হয় গ্রামবাসীদের। নদীর পার ভাঙ্গন শুরু হয় বর্ষার শুরু থেকেই। বড়-বড় ফাটলের সৃষ্টি হয় নদীর পার জুড়ে। ভাঙ্গনের আতংক সৃষ্টি হয় গ্রামের লোকজনের মধ্যে। ছাতকের ব্যবসায়ী গোয়ালগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আলহাজ বিল্লাল মিয়া জানান, পিয়াই নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে তার বাস ভবনের মেঝে এবং দেয়ালে ফাটল ধরেছে। বর্তামানে ভবনটি অনেকটাই ঝুঁিকপূর্ন হয়ে পড়েছে। তিনি তার পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রাম ছেড়ে বর্তমানে ছাতক শহরে বসবাস করছেন। তার বাড়ির সামনের গ্রামীন সড়কটি ইতিমধ্যেই নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ায় গ্রামের লোকজন বাড়ির ভিতর দিয়ে চলাচল করছে। এ ছাড়া গ্রামের অসহায় বেশ কয়েকটি পরিবার নদী ভাঙ্গনের ফলে ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। একই গ্রামের বাসিন্দা, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সামছুজ্জামান রাজা জানান, গ্রামের পুরাতন কবরস্থান যেখানে গ্রামের পূর্বপুরুষগন শায়িত আছেন, সেই কবরস্থানটি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পিয়াই নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে গ্রামের শতাধিক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের লোকজনের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি লিখিত অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ছাতক সার্কেল বরাবরে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, নদী গুলো রক্ষার জন্য শীঘ্রই ভ্রাইম্যমান আদালতের অভিযান শুরু হবে। ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ নাজিম উদ্দিন এ ব্যাপারে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার প্রকৃয়া চলছে।