চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিশ্বাসযোগ্যতা আরও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এই কমিশনের ওপর মানুষের কোনো আস্থা নেই। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ীদের তথ্য বিশ্লেষণ ও নির্বাচন মূল্যায়ন বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন বক্তারা। ভার্চ্যুয়ালি গতকাল সোমবার সকালে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
গত ২৭ জানুয়ারি এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এ ছাড়া ৪১ সাধারণ ও ১৪ সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের সব কটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হন। বিএনপি-জামায়াতের কেউ এবারের নির্বাচনে জয়ী হননি।
সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর কারও কোনো আস্থা নেই। এটি এখন প্রতিষ্ঠিত। নির্বাচন কমিশন শুধু দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে, তা নয়; এই কমিশন দুর্নীতিতেও যুক্ত হয়েছে। সুতরাং এই কমিশন দিয়ে কিছু হবে না।
এম হাফিজউদ্দিন বলেন, ইভিএম হোক আর যা–ই হোক, মানুষ যদি ভোট দিতে না পারেন, অন্য একজন বুথে অবস্থান নিয়ে বোতাম টিপে দেন; তাহলে কোনো কিছু করে লাভ নেই। বুথে গিয়ে ভোট দেওয়ার অধিকার এবং প্রার্থীদের এজেন্টদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে এবার যে ধরনের নির্বাচন হয়েছে, তা তুলনামূলকভাবে ভালো নির্বাচন হয়েছে বলা যাবে না। তবে ভালো দিক হচ্ছে একজন প্রার্থী মামলা করেছেন। তাতে অন্তত রেকর্ড হয়ে থাকল।
সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিভিন্ন দেশে উন্নত মানের ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এ দেশে যে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নির্ভরযোগ্য নয় এবং নিম্নমানের। আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে যে ধরনের নির্বাচন হয়েছে, তাতে নির্বাচন কমিশন ও ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অতীতেও কমিশনের জালিয়াতি ও পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা ছিল। নির্বাচনে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামা যাচাই-বাছাই করার জন্য কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানান বদিউল আলম মজুমদার। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে দেওয়া ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের চিঠির ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। গত ১৪ ডিসেম্বর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে প্রচারিত আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থসংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণ এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও অন্যান্য গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিজয়ী প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সুজন চট্টগ্রামের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ সিকান্দার খান।