মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২১ পূর্বাহ্ন

প্রিয় নবীর সুপারিশ লাভের উপায়

মুফতি আবুল কাসেম :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২১ মার্চ, ২০২১

কঠিন হাশরের ময়দানে মানুষ যখন সুপারিশের জন্য নবীদের কাছে ছোটাছুটি করবে, তখন তারা একে অপরের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। কেউ তখন সুপারিশ করতে সম্মতি প্রকাশ করবেন না। সেই কঠিন মুহূর্তে আমাদের প্রিয় নবীই থাকবেন একমাত্র ভরসাস্থল। তিনি সিজদায় পড়ে আল্লাহর কাছে সুপারিশের অনুমতি নিয়ে উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন। হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে, ‘আমিই হবো সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সর্বাগ্রে আমার সুপারিশ কবুল করা হবে’ (ইবনে মাজাহ-৪৩০৮)।
তবে নবীজীর এই সুপারিশ পেতে হলে শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত বিধান পালনের কোনো বিকল্প নেই। হালাল-হারাম মেনে চলা, অন্যের হক নষ্ট না করা, ফরজ ওয়াজিবসহ আবশ্যক সব ইবাদত সন্তুষ্টচিত্তে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আদায় করতে হবে। এক কথায় বলতে গেলে পরিবারে, কর্মস্থলে, রাজনৈতিক ও সমাজিক জীবন থেকে শুরু করে জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের বিধানের অনুসরণই রাসূলের সুপারিশ প্রাপ্তির রসদ। সুপারিশ প্রাপ্তির বিষয়ে রাসূলের কিছু হাদিস নিচে তুলে ধরা হলো- একত্ববাদের স্বীকারোক্তি প্রদান : আবু হুরায়রা রা: বলেন, একবার আল্লাহর রাসূল সা:কে প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশ লাভের ব্যাপারে কে সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান হবে? আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, ‘আবু হুরায়রা! আমি মনে করেছিলাম, এ বিষয়ে তোমার আগে আমাকে আর কেউ জিজ্ঞেস করবে না। কেননা, আমি দেখেছি হাদিসের প্রতি তোমার বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি যে একনিষ্ঠ চিত্তে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের স্বীকারোক্তি দেবে’ (সহিহ বুখারি-৯৯)।
আজান শেষে দোয়া পাঠ করা : প্রিয় নবীজীর সুপারিশ লাভের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি আমল হচ্ছে, আজান শেষে হাদিসে বর্ণিত দোয়া পাঠ করা। সাহাবি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনে এই দোয়া করে, উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রব্বা হাজিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাহ, ওয়াস সালাতিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাজিলাহ, ওয়াব আছহু মাক্বামাম মাহমুদানিল্লাজি ওয়াআদতাহ।’ কিয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ লাভের অধিকারী হবে’ (সহিহ বুখারি-৬১৪)।
বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া : মুসনাদে আহমদের এক বর্ণনায় এসেছে, একবার আল্লাহর রাসূল তাঁর খাদেমকে বললেন, আমার কাছে কি তোমার কোনো প্রত্যাশা আছে? (বর্ণনাকারী) বলেন, একদিন ওই খাদেম এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার একটি মাত্র প্রত্যাশা, প্রিয়নবী সা: বললেন, ‘কী সে প্রত্যাশা? তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন আপনি আমার জন্য সুপারিশ করবেন! তখন নবীজী সা: বললেন, কে তোমাকে এ বিষয়টি শিখিয়ে দিয়েছে? জবাবে তিনি বললেন, আমার প্রভু! এরপর নবীজী সা: বললেন, যখন তুমি এমনিই আশা করছো, তবে তুমি আমাকে বেশি নফল নামাজের মাধ্যমে সহযোগিতা করবে’ (মুসনাদে আহমদ-১৬১২০)।
মদিনার অধিবাসী হওয়া : আবু সাঈদ মাওলা আল মাহরি রহ: থেকে বর্ণিতÑ তিনি গরমকালের রাতগুলোতে আবু সাঈদ খুদরি রা:-এর কাছে এলেন এবং মদিনা থেকে কোথাও চলে যাওয়ার পরামর্শ করলেন। তিনি তার কাছে এখানকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নিজের বৃহৎ পরিবারের অভিযোগ করলেন। তিনি তাঁকে আরো জানালেন যে, তিনি এখানকার ক্লেশ ও বৈরী আবহাওয়া বরদাশত করতে পারছেন না। আবু সাঈদ খুদরি রা: তাকে বললেন, ‘তোমার জন্য দুঃখ হয়, আমি তোমাকে মদিনা ত্যাগের পরামর্শ দিতে পারি না। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এখানকার কষ্ট সহ্য করে মৃত্যুবরণ করবে, কিয়ামতের দিন অবশ্যই আমি তার জন্য সুপারিশ করব অথবা সাক্ষী হবো, যদি সে মুসলিম হয়ে থাকে’ (সহিহ মুসলিম-৩২৩০)।
উপরে উল্লেখিত আমলগুলো মূলত মূল আমলের পাশাপাশি করার কথা বলা হয়েছে। শরিয়তের বিধান লঙ্ঘন করে বা শরিয়তবিরোধী কাজ করে, ইসলাম প্রতিষ্ঠায় বা কুরআনের বিরোধিতা করে এসব আমল করলে কোনো কাজে আসবে না। অবশ্যই আমাদের মূল ঠিক রেখে সহায়ক এসব আমলের মাধ্যমে রাসূলের সুপারিশের আশা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রিয় নবীর সুপারিশ লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমীন। লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com