শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

সাতক্ষীরা রেঞ্জ পশ্চিম সুন্দরবন থেকে গোলপাতা সংগ্রহের আড়ালে চলছে কর্তন নিষিদ্ধ কাঠ পাচার

রবিউল ইসলাম সাতক্ষীরা :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২১ মার্চ, ২০২১

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে গোলপাতা সংগ্রহের আড়ালে দেদারছে কাঠ পাচার করার অভিযোগ উঠেছে। গোলপাতাবাহী নৌযান নিয়মিতভাবে চেক না করার পাশাপাশি ‘ঝুল বেশী’ নেয়ার কৌশলে কর্তন নিষিদ্ধ এসব কাঠ পাচার চলছে। মানুষের চোখ এড়াতে নৌযানগুলো দিনের পরিবর্তে রাতের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়ে লোকালয়ে ফিরছে গোলপাতা সংগ্রহকারীরা। গোলপাতার আড়ালে অবৈধভাবে নিয়ে আসা এসব কাঠ গোপনে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পৌছে দেয়ার পাশাপাশি আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা নওয়াবেঁকী বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহকাল পুর্বে গোলপাতাভর্তি নৌযানে নিয়ে আসা কাঠের একটি বড় চালান উদ্ধার হলেও অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও চিহ্নিত জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি বিএলসি পাওয়া নৌযানের মাঝি (চালক) এর বিরুদ্ধে কাঠ পাচারের অভিযোগ ওঠার পরও তাকে সুন্দরবনে প্রবেশের পাশ (অনুমতি পত্র) দেয়া হয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন নীলডুমুর, নওয়াবেঁকী ও কলবাড়ীসহ পাশর্^বর্তী এলাকার বনজীবি ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এসব তথ্য মিলেছে। যদিও বনবিভাগ কাঠ পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করে একটি চালান উদ্ধারের ঘটনায় মামলা দায়েরের তথ্য দিয়েছে। উল্লেখ্য পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকা হতে গত এক ফেব্রুয়ারী থেকে গোলপাতা সংগ্রহের অনুমতি মেলে বনজীবিদের জন্য। ফেব্রুয়ারী মাস থকে বাউয়ালীরা নির্দিষ্ট গোলকূপ থেকে এসব পাতা সংগ্রহ করছে, যা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে। সাতক্ষীরা রেঞ্জ এর চারটি ষ্টেশন থেকে মোট ৭৪ টি বিএলসি (বোর্ট লাইসেন্স/লোডিং সার্টিফিকেট) নিয়ে নওয়াবেঁকী, কাশিমাড়ী ও হরিনগর এলাকার বাউয়ালীরা এবার গোলপাতা সংগ্রহে গেছে। জানা গেছে ফেব্রুয়ারীর শুরুতে অনুমতি মিলতেই বিএলসি (বোর্ট লাইসেন্স/লোডিং সার্টিফিকেট) পাওয়া বনজীবিরা সুন্দরবনে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট গোলকূপে পৌছে যায়। এসময় তারা গোলপাতা সংগ্রহের পাশাপাশি বনরক্ষীদের চোখ এড়িয়ে কর্তন নিষিদ্ধ মুল্যবান পশুর, সুন্দরী, বাইন ও গরান গাছ কাঠছে। পরবর্তীতে গোলপাতা ভর্তি নৌকা নিয়ে লোকালয়ে ফিরে আসার সময় গোলপাতার নিচে রেখে এসব মুল্যবান আর কর্তন নিষিদ্ধ কাঠ পাচার করছে তারা। এছাড়া গোলপাতা বহনের সময় নৌকার ভারসাম্য রক্ষার অজুহাতে নৌযানের দু’পাশে ‘ঝুল’ হিসেবে ব্যবহারের নামে গেওয়া আর কেওড়া গাছের বিশাল চালান লোকালয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তারা। অভিযোগ উঠেছে বনবিভাগ এর পক্ষ থেকে ফিরতি নৌযানগুলো নিয়মিত পরীক্ষা/তল্লাশী না করার সুযোগ নিচ্ছে এসব বনজীবি। এছাড়া দিনের আলোয় লোকালয়ে ফিরলে মানুষের চোখে পড়লে সমুহ বিপদ হওয়ার শংকায় কৌশলী বনজীবিরা পাতাভর্তি নৌযানগুলো রাতের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়ে লোকালয়ে ফিরছে। এ দুই সুযোগে তারা অনেকটা নির্ভার হয়ে সুন্দরবনের কর্তন নিষিদ্ধ মুল্যবান এসব গাছ কর্তনসহ কাঠ পাচার করছে। সুন্দরবনের নদীতে মাছ শিকারে জড়িত দাতিনাখালী গ্রামের আজবার আলী জানান গোলপাতা বোঝাই করে নৌকা ফেরার পথে তা পরীক্ষা না করার সুযোগে পাতার নিচে রেখে কাঠ পাচার হচ্ছে। তিনি আরও জানান, জেলেরা মাঝে মধ্যে গাছের শুকনা ডাল রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য নিলে জরিমানা গুনতে হয় এমনকি মামলা পর্যন্ত খেতে হয়। অথচ পাতার নিচে রেখে মুল্যবান কাঠ পাচার করার কৌশল জেনেও গোলপাতা ভর্তি নৌকা পরীক্ষা ছাড়াই লোকালয়ে ফিরতে দেয়া হচ্ছে। গাবুরা গ্রামের আজিজুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান পাতাভর্তি সব নৌকা আড়পাঙ্গাশিয়া ও কপোতাক্ষ নদী দিয়ে লোকালয়ে ফিরছে। দুই নদীর পাশেই বনবিভাগের গুরুত্বপুর্ন অফিস থাকা সত্ত্বেও ফিরতি নৌযান যেমন পরীক্ষা হয় না, তেমনী লোকালয়ে ফিরে পাতা নামানোর সময় বনকর্মীরা সেখানে উপস্থিত থাকে না। এমন সুযোগে গোলপাতাবাহী প্রতিটি নৌকায় প্রচুর কর্তন নিষিদ্ধ কাঠ পাচার হচ্ছে বলে দাবি তার। নীলডুমুর গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নৌযান মালিক জানান, এমন কোন নৌকা নেই, যার মধ্যে কাঠ আসছে না। এসব কাঠ রাতের বেলা চুক্তি মোতাবেক বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠানোর পাশাপাশি নওয়াবেঁকী বাজারের আড়ৎ-এ বিক্রি হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, পুর্বে ক্রয়কৃত নিলাম এর রশিদকে পুঁজি করে এসব আড়ৎদাররা সুন্দরবনের কাঠ প্রকাশ্যে বিক্রি করলেও কেউ তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না। দাতিনাখালীর আকবর হোসেন ও আব্দুল হালিমসহ অন্যরা জানান, গত ১২ মার্চ গোপনে সংবাদ পেয়ে বুড়িগোয়ালীনি ষ্টেশন কর্মকর্তারা দাতিনাখালীর একটি পুকুর থেকে প্রায় ১২শ পিছ গরানের ছিটে উদ্ধার করেন। গোলপাতার বিএলসি (বোর্ট লাইসেন্স/লোডিং) পাওয়া আব্দুল আজিজের নৌযানের মাঝি (চালক)সহ তার সঙ্গীরা প্রথম চালানের নিচে রেখে এসব কাঠ এনেছিলেন। কাঠ উদ্ধারের সময় স্থানীয়রা বিএলসিধারী ঐ নৌকাযোগে এসব কাঠ নিয়ে এসে জনৈক খোকন গাজীর পুকুরের মধ্যে লুকিয়ে রাখার প্রমান দিলেও অজ্ঞাত কারনে ঐ নৌকার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একইভাবে আব্দুল কাদের নামের এক নৌযান মাঝি(চালক) এর বিরুদ্ধে কাঠ পাচারের অসংখ্য অভিযোগ বনবিভাগকে জানানোর পরও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সুপারিশে তাকে পুনরায় সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে কাঠ পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান জানান, সবসময় না হলেও মাঝেমধ্যে গোলপাতাভর্তি নৌকা পরীক্ষা হয়। এছাড়া গোলকূপ এর দায়িত্বে থাকা বনকর্মীরা সতর্ক থাকায় তাদের কাঠ নেয়ার সুযোগ থাকে না। নৌকার পাশে ঝুল হিসেবে ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্টদের বনে যাওয়ার আগেই এলাকা থেকে কাঠ নিয়ে নিতে পরামর্শ দেয়া হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com