জেলায় এ বছর হলুদের ফলন খুব ভালো হয়েছে। চাহিদা মিটিয়ে হলুদ খুলনা, যশোর, ঢাকা, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে হলুদ থেকে গুড়া উৎপাদন করতে কয়েক হাজার শ্রমিকের এ পেশায় আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তির উন্নয়নে সমন্বিত পদ্ধতিতে মসলা জাতীয় পণ্যচাষের কদর বাড়ায় হলুদ চাষে এ জেলার কৃষকরা ঝুঁকে পড়ছেন।
উৎপাদন খরচের চেয়ে দাম বেশি পাওয়াতে কৃষকরা হলুদ চাষে আগ্রহী। এবার জেলাতে হলুদের ফলনও ভালো হয়েছে। ভালো ফলন ও দাম বেশি পাওয়াতে কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে জানালেন পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা গ্রামের চাষি ইয়াকুব আলী। এক সময় দেশের বেশির ভাগ অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এ জেলাতে হলুদ কিনতে আসত। কিন্তু জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও হলুদের দাম কমে যাওয়াতে হলুদ চাষিরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ফলে কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নেয় হলুদ চাষে। হলুদ চাষে টানা দুই যুগের মত চরম মন্দা যায় । প্রযুক্তির উন্নয়ন ও হলুদের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে এবছর আবারো জেলায় হলুদের আবাদ বাড়ছে।
চলতি মৌসুমে এ জেলায় হলুদ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ হাজার টন। উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ৯৬০ টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, এবছর জেলায় হলুদের আবাদ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬০০ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় মোট ৫৭৮ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১২০ হেক্টর, কলারোয়া উপজেলায় ৯০ হেক্টর, তালা উপজেলায় ২৮৬ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ১৫ হেক্টর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ১০০ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ৪৩ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি মৌসুমে জেলায় হলুদ আবাদ লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়। চলতি মৌসুমে জেলার ৬৬৪ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদ হয়েছে। এ হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৮৬ হেক্টর জমিতে মসলাজাতীয় পণ্যটির আবাদ বেশি হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৯ হাজার ৯৬০ টন হলুদ উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৫০০ টন, কলারোয়া উপজেলায় ১ হাজার ৩০০ টন, তালা উপজেলায় ৪ হাজার ২৯০ টন, দেবহাটা উপজেলায় ১৫০ টন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ৫০০ টন, আশাশুনি উপজেলায় ১০০ টন ও শ্যামনগর উপজেলায় ৪৪৫ টন হলুদ উৎপাদন হয়েছে বলে তিনি জানান।
জেলার তালা উপজেলার খলিষখালী গ্রামের আব্দুল গফুর শেখ জানান, চাষিরা হলুদের সাথে একই জমিতে, বেগুন চাষ, মেটে আলু, ওলের চাকি চাষ করছে। হলুদের সাথে সাথে একই সাথে এ সকল ফসল অতি দ্রুত ফলানো যায়। এতে কৃষকের নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণের পর বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভবান হচ্ছে। এ বছর শুকনো হলুদের দাম বেশি থাকায় হলুদ বিক্রিতে গতবারের থেকে লাভ বেশি পাবেন বলে আশা করছেন চাষিরা।
জেলার বেশির ভাগ ক্ষেত থেকে হলুদ তোলা শেষ হয়েছে। প্রান্তিক চাষিরা ইতোমধ্যে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে উৎপাদিত হলুদ বিক্রি করে দিয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে চলছে হলুদ থেকে গুড়া বের করার কাজ। ইতোমধ্যে গৃহিণীরা তাদের চাহিদানুযায়ী হলুদের গুড়া সংগ্রহ করে রখেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি পরিচালক মোঃ জসিমউদ্দীন জানান, হলুদ বেশ লাভজনক ফসল। সাতক্ষীরায় প্রতি হেক্টরে ১৫-১৬ টন পর্যন্ত হলুদ উৎপাদন হয়। কিন্তু উপকূলীয় জেলা হওয়ার কারণে বেশ কিছুদিন ধরে এখানকার আবাদি জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। এ দুই কারণে জেলার কৃষকরা হলুদ আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন চাষিরা। তবে আমরা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের হলুদ আবাদের ক্ষেত্রে সবসময় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করি। যার ফলে এবছর আবাদ বেড়েছে।