শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন

সুস্থতা আল্লাহর অশেষ নিয়ামত

রাশেদ নাইব:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১

একমাত্র অসুস্থ হওয়া ছাড়া সুস্থতার কদর আমরা বুঝতে পারি না। মহান আল্লাহ তায়ালা অফুরন্ত নিয়ামত দিয়ে সৃষ্টিকুলকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তার মাঝে সুস্থতাও অশেষ নিয়ামত। যখন কেউ বিপদ-মুসিবতে নিপতিত হয় ঠিক সেই মুহূর্তে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর প্রতি তার ভক্তি শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। এটা স্বাভাবিক বলা যায় বটে।
সুস্থতা যে মহান আল্লাহর নিয়ামত এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহ অবশ্যই তাকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞান ও স্বাস্থ্যে সমৃদ্ধ করেছেন (সূরা বাকারা-২৪৭)।
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান ও স্বাস্থ্যকে রাজত্ব ও নেতৃত্ব লাভের মানদ- সাব্যস্ত করেছেন। কারণ জ্ঞান-প্রজ্ঞা, স্বাস্থ্য ও সুস্থতা ছাড়া কোনো কাজই সুচারুরূপে সম্পাদন করা সম্ভব নয়।
একজন মানুষ যখন অসুস্থ থাকে, তখন পুরো পৃথিবীটাই তার কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়ে। তখন যা কিছু বলা হোক তার কাছে সব কিছুই রুচিহীন লাগবে।
ইবনে আব্বাস রা: বলেন- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘দুটি নিয়ামতের ব্যাপারে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। নিয়ামত দুটি হলো- সুস্থতা ও অবকাশ’ (সহিহ বুখারি-৬৪১২, মুসনাদে আহমদ-২৩৪০)।
অন্য হাদিসে নবী করিম সা: বলেন, ‘অবশ্যই মানুষকে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত আর কিছু প্রদান করা হয়নি’ (সুনানে নাসায়ি-১০৭২)। ইবাদতে মনোনিবেশের জন্য দেহ ও মনের সুস্থতার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। যে কারণে ইসলামে সুস্থ থাকার জন্য উৎস দেয়া হয়েছে। নবীজী সা: বলেছেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় শক্তিশালী মুমিন বেশি কল্যাণকর ও আল্লাহর কাছে বেশ প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে’ (সহিহ মুসলিম-৬৯৪৫)।
অপর হাদিসে মহানবী সা: বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যুষে সুস্থতা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে, বাসায় নিরাপদে থাকে এবং সারা দিনের খাদ্যসামগ্রী তার কাছে মজুদ থাকে তাহলে থাকে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ দেয়া হয়েছে (সুনানে তিরমিজি-২৩৪৬)। রাসূলুল্লাহ সা: আরো ইরশাদ করেন, ‘হে আমার উম্মত! পাঁচটি সম্পদ হারানোর আগে তার যথাযথ মূল্যায়ন করো-
১. মারা যাওয়ার আগেই তোমার জীবনের প্রতি মুহূর্তকে কাজে লাগাও। ২. বুড়ো হওয়ার আগে যৌবনকে কাজে লাগাও। ৩. দারিদ্র্যের আগে সচ্ছলতার মূল্য দাও। ৪. অসুস্থতার আগে সুস্থতার মূল্য দাও। ৫. ব্যস্ততার আগে অবসরকে কাজে লাগাও (মুসতাদরাকে হাকিম-৭৮৪৬)।
ইসলামে স্বাস্থ্যসচেতনতা ও চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু দিকনির্দেশনা- এক. খাদ্য-পানীয় বিষয়ে অসচেতনতা মানুষের রোগব্যাধি অন্যতম কারণ। তাই ইসলামে মধ্যপন্থা অবলম্বন ও অতিভোজন না করতে উৎসাহিত করেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না’ (সূরা আরাফ-৩১)। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য দ্বারা, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে’ (সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৩৪৯)।
দুই. পরিবেশ দূষণের কারণে মানব সমাজে নানা রকম রোগ ছড়ায়। তাই ইসলামে সব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নির্দেশ করেছে। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তিন অভিশপ্ত ব্যক্তি থেকে বেঁচে থাকো, যে পানির ঘাটে, রাস্তার ওপর ও গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে’ (সুনানে আবু দাউদ-২৬)। অন্য হাদিসে মহানবী সা: বলেন, ‘তোমরা বাড়ির আঙ্গিনা সব দিকে পরিষ্কার রাখবে। ইহুদিদের অনুকরণ করবে না। তারা তো বাড়িতে আবর্জনা জমা রাখে’ (সুনানে তিরমিজি-২৭৯৯)।
তিন. কালিজিরা, মধু পান করা এবং শিঙ্গা লাগানো। মহানবী সা: বলেন, ‘কালিজিরা মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের উপশমক (উপকারী) (সহিহ বুখারি-৫৯২)। আল্লাহ পাক বলেন, ‘এতে (মধু) মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার’ (সূরা নাহাল-৬৯)। নবী করিম সা: বলেন, ‘তোমরা যা কিছু দিয়ে চিকিৎসা করো তার মধ্যে উত্তম হলো শিঙ্গা লাগানো।’ (সহিহ মুসলিম-৪০০৭)।
পরিশিষ্ট কথা হলো- সুস্থতা-অসুস্থতা সব কিছুই আসে মহান আল্লাহর আদেশক্রমেই। অতএব তা আসার আগে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং যথাসম্ভব দোয়া প্রার্থনা করতে হবে। যেন বিপদ আসার আগেই তা বিলীন হয়ে যায়। সর্বোপরি আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সাহায্য কামনা করা। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে সুস্থ রাখুন। অসুস্থতার আবরণ জড়িয়ে আছে আমায়, সুস্থতা কামনা করছি মহান রবের কাছে। লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com