বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতা পেলে মানুষের কল্যাণে কাজ করবে-মাফরুজা সুলতানা সুইজারল্যান্ডে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস হাফেজা আসমা খাতুনের ইন্তেকালে বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির শোক দেশের মেধাবী ও আদর্শবান লোকদেরকে দলে আনার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন: তারেক রহমান গোদাগাড়ীতে টমেটো চাষে ‘নীরব বিপ্লব’ ট্রাম্পের কাছে বাস্তববাদী পদক্ষেপ আশা করছে ইরান ভূমি উপদেষ্টা হলেন আলী ইমাম মজুমদার দিন-তারিখ ঠিক করে সংস্কার করা অন্তর্র্বতী সরকারের কাজ নয়:খন্দকার মোশাররফ রাজনীতিতে স্লোগান নয়, মেধা ও বুদ্ধির প্রতিযোগিতা চলছে: ফখরুল বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে লুৎফুজ্জামান বাবর

কভিড-১৯: মৃত্যুঝুঁকি ৭৫% কমাতে সক্ষম আইভারমেকটিন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১

বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে এ সংখ্যা ১০ হাজার ছুঁই ছুঁই। এ রোগে আক্রান্তদের নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে অনেক। এমনই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল পর্যালোচনাভিত্তিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ আইভারমেকটিন প্রয়োগে কভিডে আক্রান্তদের মৃত্যুহার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পৃষ্ঠপোষকতায় এ গবেষণা পরিচালিত হয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ২৯টি সংস্থার বিশেষজ্ঞরা এ গবেষণা চালিয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের আইসিডিডিআর,বি, বারডেম ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞরাও ছিলেন। দৈবচয়নভিত্তিক পরীক্ষায় পাওয়া ফলাফল মেটা অ্যানালাইসিস বা সমন্বিত পর্যালোচনার ভিত্তিতে প্রকাশ হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদন লিখেছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইউনিভার্সিটি অব লিভারপুলের ফার্মাকোলজি বিভাগের ড. অ্যান্ড্রু হিল। প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, আইভারমেকটিন প্রয়োগে কভিডে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুঝুঁকি ৭৫ শতাংশ কমানো সম্ভব।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮১ সালে লাইসেন্স পাওয়ার পর থেকেই ভাইরাসজনিত অসুখের বিরুদ্ধে আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি রোজেশা প্রতিরোধেও এর অবিশ্বাস্য কার্যকারিতার প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। এর পরই ওষুধটি নিয়ে নড়েচড়ে বসেন বিশেষজ্ঞরা। তারা সার্স-কোভ-২-এর (কভিড-১৯) বিরুদ্ধেও আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা পরীক্ষার উদ্যোগ নেন। প্রাথমিক পরীক্ষা শেষে এ নিয়ে আশা দেখতে পান তারা। তাদের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, ভাইরাস দমনের ক্ষেত্রে আইভারমেকটিন সেবন প্লাজমার চেয়েও বেশি কার্যকর। এছাড়া এখনো এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া চিহ্নিত হয়নি। প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, ২৭টি দেশের ২ হাজার ২৮২ জন কভিড-১৯ রোগীর ওপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ওপর চালানো গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, আইভারমেকটিন অবিশ্বাস্য দ্রুততম সময়ে করোনার আক্রমণ থেকে ফুসফুসকে রক্ষা করতে সক্ষম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এখনো অনেক ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক ভ্যাকসিন বাজারে এসেছে। এর অনেকগুলোই প্রয়োগ করা হচ্ছে মানবদেহে। আবার অনেক ভ্যাকসিন এখনো বাজারজাত করা হয়নি। সেগুলো পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা শতভাগ বলে প্রমাণিত হয়নি। এক্ষেত্রে আইভারমেকটিন পুরোপুরি ব্যতিক্রম। এমনকি টিকা নেয়া ব্যক্তিরাও ওষুধটি সেবন করতে পারেন। অর্থাৎ, টিকা গ্রহণ ও আইভারমেকটিন সেবন সাংঘর্ষিক নয়। এর আগে গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গিয়েছিল, আইভারমেকটিন সেবনে কভিডে আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে অবস্থানের সময় কমে এসেছে। পাশাপাশি বেড়েছে সুস্থতা ও বেঁচে ফেরার হারও। তবে এজন্য সঠিক ডোজ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন ড. অ্যান্ড্রু হিল।
গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. তারেক আলম। জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, প্রতি মাসেই কিছুদিন পর পর আইভারমেকটিন সেবন করা প্রয়োজন। টিকার সঙ্গে এটির সেবন সাংঘর্ষিক নয়। যতদিন পর্যন্ত আমরা অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে না পারছি, ততদিন পর্যন্ত প্রতিরোধক হিসেবেই আইভারমেকটিন সেবন করা উচিত। গবেষণার তথ্যেও এমনটাই দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইভারমেকটিনের আরেকটি বড় সুবিধা হলো এর দাম। স্বল্পমূল্যের ওষুধটি ব্যবহারে চিকিৎসকদের নির্দেশিত ডোজের দাম ১০০ টাকার বেশি নয়। চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি বা দীর্ঘদিন অ্যাজমায় ভুগছেন ও ৩৫ বছর ধরে স্টেরয়েড নিচ্ছেন, এমন রোগীর চিকিৎসায়ও আইভারমেকটিন কার্যকর। ৭৬ বছর বয়সী নারীও আইভারমেকটিন সেবন করে দ্রুত আরোগ্য লাভ করেছেন। অনেকে সেরে উঠেছেন ১৬ দিনের মধ্যেই।
আবার অনেক চিকিৎসকই আক্রান্ত ব্যক্তির স্বজন বা পরিবারের সদস্যদের সতর্কতার অংশ হিসেবে আইভারমেকটিন সেবনের নির্দেশনা দিয়েছেন। রোগীদের অভিজ্ঞতা বলে, এতে ভালো কাজ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, আক্রান্ত ব্যক্তি বয়সে তরুণ, বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন, কিন্তু পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা আক্রান্ত হননি। এর আরো অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে আইভারমেকটিন সেবনকেও উড়িয়ে দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। পরজীবীনাশক আইভারমেকটিন এরই মধ্যে জিকাসহ বিভিন্ন আরএনএ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। দেশে এ ওষুধের প্রথম পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করেন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তারেক আলম ও তার সহকর্মীরা। গত বছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে এ চিকিৎসা শুরু হয়।
সম্প্রতি ইউরোপিয়ান জার্নাল অব মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে আইভারমেকটিনের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহারের কার্যকারিতার কথা বলেছেন। এছাড়া সম্প্রতি কভিড চিকিৎসায় আইভারমেকটিনের ব্যবহার নিয়ে আইসিডিডিআর,বি যে আরসিটি পরিচালনা করেছিল, সেখানেও প্রমাণ হয়েছেÍশুধু পাঁচদিনের আইভারমেকটিনের ডোজে ভাইরাসের তীব্রতা হ্রাস পায়। ভারতের ভুবনেশ্বরের এক হাসপাতালে পরিচালিত সমীক্ষায়ও কিছু স্বাস্থ্যকর্মীকে আইভারমেকটিন সেবন করানো হয়। তাদের মধ্যে কভিডে আক্রান্তের হার প্লাসিবো গ্রহণকারীদের চেয়ে ৭৩ শতাংশ কম। সম্প্রতি বুলগেরিয়া ও ইসরায়েলের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরাও আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা ও সফলতা নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখিয়েছেন। বুলগেরিয়ার এক সমীক্ষায় প্রতিরোধক হিসেবে আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা আছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (পেইন মেডিসিন) ডা. জোনাইদ শফিক বণিক বার্তাকে বলেন, বর্তমানে আইভারমেকটিনের ব্যবহার নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হচ্ছে। যদিও ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বাংলাদেশের অনেকেই বুঝে বা না বুঝে এর বিরোধিতা করছেন, তবে ভিন্ন সুরও আছে। বর্তমানে সবার দৃষ্টি ভ্যাকসিনের দিকে। যদিও ভ্যাকসিনের পুরোপুরি কার্যকারিতার জন্য আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে, তার পরও আইভারমেকটিনের সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নেই। আমরা যেন খোলা মন নিয়ে সবকিছু দেখার চেষ্টা করি।
আইসিডিডিআর,বি থেকেও আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করা হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে ওষুধটি প্রয়োগে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গিয়েছে বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছিল সংস্থাটি। তবে এ বিষয়ে সংস্থাটির ভাষ্য ছিল, আইভারমেকটিনের প্রয়োগ নিয়ে আরো বিস্তৃত পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন। ওই সময় ১৭ জুন থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্বল্প পরিসরে গবেষণা চালায় সংস্থাটি। এতে দেখা গিয়েছিল, শুধু আইভারমেকটিন গ্রহণকারীদের ৭৭ শতাংশ ১৪ দিনের মধ্যে কভিড-১৯ জীবাণুমুক্ত হয়েছেন। আরটিপিসিআর টেস্টে তাদের কভিড-১৯ মুক্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন প্রয়োগ করে এ ফল পাওয়া গিয়েছে ৬১ শতাংশ। প্লাসিবো গ্রহণকারীদের মধ্যে করোনামুক্ত হয়েছেন ৩০ শতাংশ।
ওই গবেষণার ফলাফল নিয়ে আইসিডিডিআর,বির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদের ভাষ্য ছিল, বাংলাদেশের মতো নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশগুলোয় এ মহামারীর মোকাবেলায় একটি সাশ্রয়ী ও সহজে ব্যবহারযোগ্য চিকিৎসা ব্যবস্থা খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কভিড-১৯-এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে শুধু আইভারমেকটিন ব্যবহার করে আরো বড় মাপের একটি ট্রায়াল করার জন্য আমরা সহায়তা সন্ধান করছি। এদিকে বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ড. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে যদি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় আর তা যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন পায় তাহলে প্রয়োগের বিষয়টি বাংলাদেশের চিকিৎসকরাও বিবেচনায় নিতে পারেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com